দেশের বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের তিন গ্রাহকের বিরুদ্ধে ব্যবসার আড়ালে ২১ লাখ মার্কিন ডলার পাচারের তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভিযোগ উঠেছে, বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) জানায়নি ব্যাংকটি। বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের বিশেষ পরিদর্শনে বিষয়টি ধরা পড়ায় ব্র্যাক ব্যাংককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
যে তিন গ্রাহকের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেনের মাধ্যমে ২১ লাখ ডলার পাচারের তথ্য এসেছে,সেগুলো হলো তাহসিন ইন্টারন্যাশনাল, জিএস খান অ্যাপারেলস ও সেইফ ফ্যাশন অ্যান্ড ট্রেডিং। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন বলছে, ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখার গ্রাহক তাহসিন ইন্টারন্যাশনাল,জিএস খান অ্যাপারেলস ও সেইফ ফ্যাশন অ্যান্ড ট্রেডিং ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ২১ লাখ ডলার পাচার করেছে। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যবসার আড়ালে আন্ডার ইনভয়েসিং (বিদ্যমান আয়ের চেয়ে কম ঘোষণা), মাল্টিপল ইনভয়েসিং (বেশি দামের পণ্য কম দামের পণ্য হিসেবে ঘোষণা) এবং ওভার শিপমেন্ট (বেশি পণ্য কম পণ্য হিসেবে ঘোষণা) মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি করে। আর ঘোষিত রপ্তানির বিপরীতে রপ্তানি আয় নির্ধারিত সময়ে আসেনি; যা ব্র্যাক ব্যাংকের জানার কথা। ব্যাংকিং নিয়মাচার অনুযায়ী,পাচার ঠেকাতে সন্দেহজনক লেনদেনের রিপোর্ট(এসটিআর) বিএফআইকে জানানোর কথা। কিন্তু নিজের গ্রাহকের অর্থ পাচারের তথ্য বিএফআইইউকে দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক। এ ঘটনায় ব্র্যাংক ব্যাংককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা আদায়ে ২২ ডিসেম্বর ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও সিইও সেলিম আর এফ হোসেনকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ব্র্যাক ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গ্রাহক রপ্তানির অর্থ ফেরত আনেনি, এটা সত্য। ব্যাংকের পক্ষ থেকে সব সময় এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংক কিংবা বিএফআইইউকে জানানো হয়। হয়তো কোনো কারণে অনেক রপ্তানিকারক গ্রাহকের মধ্যে ওই তিন গ্রাহকের রপ্তানি আয়ের তথ্য বিএফআইইউকে অবহিত করা হয়নি। এ জন্য ব্যাংককে জরিমানা করা হয়েছে। পরে এ রকম ভুল এড়াতে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হবে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক তাহসিন ইন্টারন্যাশনাল ৩৯৫টি ইএক্সপির মাধ্যমে ১৩ লাখ ডলার, জিএস খান অ্যাপারেলস ২৫টি ইএক্সপির মাধ্যমে ২ লাখ ডলার এবং সেইফ ফ্যাশন অ্যান্ড ট্রেডিং ৪২টি ইএক্সপির মাধ্যমে ৬ লাখ ডলারের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি করে। এসব প্রতিষ্ঠান বাজারমূল্যের ৮ ভাগের ১ ভাগ দাম দেখিয়েছে। আবার ঘোষিত ওজনের চেয়ে ৬-৮ গুণ বেশি পণ্য রপ্তানির জন্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে। এমনকি কম দামের পণ্যের আড়ালে বেশি দামের পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। মূলত ব্যবসার আড়ালে অর্থ পাচার করতে ভুয়া তথ্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্ট দেয়নি ব্র্যাক ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে ব্র্যাক ব্যাংকের এমডিকে একাধিকবার মোবাইলে ফোন করে পাওয়া যায়নি। খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া মেলেনি। পরে ব্যাংকটির কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান এবং জনসংযোগ কর্মকর্তা ইকরাম কবীরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ রকম ঘটনা তো অনেক ব্যাংকে ঘটে। তাহলে শুধু ব্র্যাক ব্যাংক কেন?
অভিযোগের বিষয়ে তাহসিন ইন্টারন্যাশনাল,জিএস খান অ্যাপারেলস ও সেইফ ফ্যাশন অ্যান্ড ট্রেডিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে মোবাইল ধরেননি প্রতিষ্ঠান তিনটির প্রধান নির্বাহীরা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন,অর্থ পাচার দেখার দায়িত্ব বিএফআইইউর। বাংলাদেশ ব্যাংকের জরিমানা করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে কোনো ব্যাংককে জরিমানা করলে তা নির্ধারিত হিসাব থেকে কেটে নেওয়া হয়। একাধিক গ্রাহক মনে করেন যতো দোষ নন্দ ঘোষ।
আপনার মতামত লিখুন :