দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ফের উত্তপ্ত পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে সহযোগীতার জন্য মাঠে আছে সরকার দলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মি ও বিভিন্ন সংগঠন। সরকার সহনশীলভাবে এ সমস্যা সমাধান করতে চায়। কোনো বিশৃংখলা পরিবেশ চায়না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যতটা সহনশীল থাকা যায় তা সরকার থাকবে। সরকার ও প্রশাসন সুত্রগুলো জানায় দেশের মানুষের জানমালের নিরাপওায় সরকার কঠোর হবে। আন্দোলনকারীদের প্রায় সবগুলো দাবি মেনে নেওয়ার পরও তারা কেনো এখন সরকারের পদত্যাগ চায়? তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে । ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের ভদ্রতা দুর্বলতা ভাবলে ভুল করবে তারা। আন্দোলনে হতাহতের সবগুলো ঘটনা ও হত্যার বিচারসহ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই সরকার নিতে বদ্ধ পরিকর। এছাড়াও আর্ন্তজাতিক ও জাতিসংঘের সহযোগিতাও চেয়েছে সরকারপ্রধান। প্রশ্ন হচ্ছে এর পরেও সময় না দিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন কেনো। সরকার পতন আন্দোলনকারী ওরা কারা। তা সরকার পরখ করতে মাঠে নামবে, কঠোর হবে। এদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। রাজধানীর উত্তরা এবং হবিগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় হঠাৎ করেই ঘোলাটে হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। তবে ২ আগস্ট সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মাঠে ছিল বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) টহল। দিনে কারফিউ না থাকায় সেনাবাহিনীর সদস্যদের সতর্ক ও সশস্ত্র অবস্থায় থাকতে দেখা গেছে।
প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সব আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকারের শীর্ষ মহল থেকে বিশেষ বার্তা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত থাকতে। এরই মধ্যে পুলিশ, র্যাব এবং আনসার সদর দপ্তর থেকে সবগুলো ইউনিটে বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। সর্বোচ্চ সতকর্তামূলক ব্যবস্থা নিতে ইউনিট প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ে সক্রিয় রয়েছেন বিভিন্ন বাহিনীর ৩০ হাজার সদস্য।
পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (পদোন্নতিপ্রাপ্ত অতিরিক্ত আইজিপি) আনোয়ার হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, সম্ভাব্য সব বিষয়কে মাথায় রেখেই সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বলেছে পুলিশ সদর দপ্তর। শান্তিপূর্ণ অবস্থানকারীদের বিষয়ে সহনশীলতা প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, জামায়াতে ইসলামী ও দলটির ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপনের পর থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে তারা। এক এলাকার নেতা-কর্মীদেরকে তারা অন্য এলাকায় গিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার নির্দেশনা দিয়েছে। তবে কারফিউ জারির আগে ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেওয়া কিছু নেতা-কর্মী এখনো নিজেদের এলাকায় ফেরেনি। তাদেরকে প্রয়োজনে অবস্থান পরিবর্তন করে পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেতে বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, আমরা সতর্ক অবস্থায় আছি। মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট এবং টহল জোরদার করা হয়েছে। তবে যারা সহনশীল এবং শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছেন তাদের ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট পজিটিভ। তবে যারা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করছে, জ্বালাও পোড়াও করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান কঠোর হবে।
প্রশাসনের একাধিক সূত্র বলছে, সম্ভাব্য হামলা-নাশকতার বিপরীতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং টার্গেট ব্যক্তিদের ঘিরে বিশেষ প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রস্তুতিকে আরও নিখুঁত করার জন্য বলা হয়েছে। সবগুলো সংস্থাকে পাঠানো হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। যদিও কোটাবিরোধী আন্দোলনকে পুঁজি করে দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে কারফিউ জারী করেছে সরকার। এ কারণে মাঠে সশস্ত্র অবস্থায় রয়েছেন সেনা ও নৌবাহিনীর সদস্যরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর বাড্ডার আফতাব নগর, পল্টন বায়তুল মোকাররম এলাকা, প্রেস ক্লাব, সায়েন্সল্যাবসহ শাহবাগ ও শহীদ মিনার এবং উত্তরা এলাকায় প্রতিবাদ কর্মসূচি চালাতে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে সিলেট, হবিগঞ্জ ও খুলনাসহ দেশের আরও কয়েকটি এলাকায় সড়ক-মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় এই আন্দোলন ঘিরে সেসব এলাকায় অবস্থান নেন পুলিশ, বিজিবি, ডিবি, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এসব এলাকায় প্রস্তুত ছিল পুলিশের সাঁজোয়া যানও। এর মধ্যেই ঢাকার উত্তরা, সিলেট ও খুলনার কয়েকটি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে যেসব এলাকায় শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করার প্রতিশ্রæতি দেয়, সেসব এলাকায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল। এতে সহযোগিতা করেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, ২ আগস্ট জুমার নামাজের পর বাইতুল মোকাররম উত্তরগেট, জুরাইন, খিলগাঁও ঈদগাহ মসজিদ ও সায়েন্সল্যাব এলাকায় গণবিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই পরিস্থিতি ঘিরে বাইতুল মোকাররম উত্তরগেট, পল্টন মোড়, কাকরাইল মোড়, ফকিরাপুল ও দৈনিক বাংলা মোড়, বাড্ডা, উত্তরা ও মিরপুরসহ ঢাকার আটটি ক্রাইম বিভাগের প্রতিটি এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।
এদিকে র্যাবের প্রস্তুতি সম্পর্কে এলিট ফোর্সের আইন ও গণমাধ্যম পরিচালক লে. কর্নেল মুনীফ ফেরদৌস জানান, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব সময়ই প্রস্তুত র্যাবের প্রতিটি সদস্য। দেশের মানুষের জানমাল রক্ষা এবং সরকারি সম্পদের নিরাপত্তায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ র্যাব। তবে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হলে সব ব্যাটালিয়নকে আলাদাভাবে সতর্ক করা হয়।
আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ ইফতেহার আলী বলেন, আবুল হোটেল থেকে রামপুরা ব্রিজ পর্যন্ত এলাকার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আনসার সদর দপ্তরকে। এখানে তিনটি এলএমজি (লাইট মেশিনগান) পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। তিনটি এলএমজি প্যাট্রোল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। এর বাইরেও কেপিআইগুলোতে আমাদের এজিবির (আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন) সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া পুলিশ এবং সেনাবাহিনী আছেই। এদিকে মানুষের জানমালের নিরাপওায় প্রশাসনকে সহযোগীতার জন্য মাঠে রাজনৈতিক শক্তি বাড়াতে আওয়ামী লীগের প্রতিটি সহযোগী সংগঠন মাঠে থাকার শক্ত প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিটি ওয়ার্ড-থানায় সতর্ক পাহাড়া বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :