সুন্দর মুখের জালিয়াতচক্র তারা তিন জন। ৩ জনই ছিলেন ঋণখেলাপি।জালিয়াতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছিলেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করতে পারেন না। অথচ ঋণখেলাপি হওয়া সত্বেও তা গোপন করে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের টিকিটে তিন প্রার্থীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেয় সাউথইস্ট ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে ভয়াবহ এ অনিয়ম ও জালিয়াতির তথ্য উঠে এসেছে। ঋণখেলাপি এই তিনজন হলেন-ভদ্রবেশী সাবের হোসেন চৌধুরী, মোরশেদ আলম ও মামুনুর রশিদ কিরণ। গত বছরের ৭ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে তারা সবাই এমপি হন। আরেক আওয়ামী লীগ নেতা বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক প্রকৌশলী আবু নোমান হাওলাদারের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রাখায় তিনি এখনও পরিচালক পদে আছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানোর সঙ্গে জড়িত সাউথইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। খেলাপির তথ্য লুকানোর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার ঋণে বিভিন্ন অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের ব্যাখ্যা চেয়ে গত ১৩ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগামী ১২ মার্চের মধ্যে দফা ধরে ধরে ব্যাখ্যা দিতে হবে।
নিয়ম অনুযায়ী কেউ ঋণখেলাপি হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ তথ্য ব্যুরোতে (সিআইবি) রিপোর্ট করতে হয়। কারও ঋণের শ্রেণি পরিবর্তন হলে একসময় শাখা থেকে প্রথমে নিজ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় এবং সেখান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে হতো। বেশ কিছু প্রক্রিয়া মেনে সিআইবির তথ্য হালনাগাদ করা হতো। তবে আশ্চর্যজনকভাবে গত নির্বাচনের তিন মাস আগে হঠাৎ করে তথ্য হালনাগাদের ক্ষমতা ব্যাংকের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এই সুযোগের অপব্যবহার করে সাউথইস্ট ব্যাংক তিনজন সংসদ সদস্য প্রার্থীর খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন করে। এমন অনিয়ম অন্য ব্যাংকেও ঘটতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-৯ আসনের সাবেক এমপি সাবের হোসেন চৌধুরী পারফরম্যান্স মোটরসের পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটির নামে সাউথইস্ট ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় ৩৪টি মেয়াদি ও একটি চলতি মূলধন ঋণ রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যাংকের পাওনা ৪৮৫ কোটি টাকা এবং নির্বাচনের আগে তা খেলাপি ছিল। কিন্তু তা নিয়মিত দেখানো হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঋণটি যথাযথ মানে শ্রেণীকরণ করলে সংসদ সদস্য পদ ধরে রাখার জন্য হলেও সাবের হোসেন চৌধুরী তা পরিশোধ করতেন। আবার এসব ঋণ করপোরেট শ্রেণিভুক্ত হিসেবে সাধারণ প্রভিশন হিসেবে ১ শতাংশ হারে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা রাখার কথা। অথচ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ঋণ দেখিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে মাত্র ১ কোটি ২১ লাখ টাকা প্রভিশন রাখা হয়। অন্যদিকে, চলতি মূলধন ঋণ কোম্পানির ব্যবসায় না খাটিয়ে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঋণ পুনঃতপশিলের ডাউনপেমেন্ট হিসেবে দেওয়া হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী-২ আসনের সাবেক এমপি মোরশেদ আলম বেঙ্গল গ্রæপের চেয়ারম্যান। এ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান পাওয়ার ইউটিলিটির সাউথইস্ট ব্যাংকে ৭ কোটি ১২ লাখ টাকার ঋণ ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে খেলাপি ছিল। এ তথ্য গোপন করে সিআইবিতে ‘ক্লিন’ রিপোর্ট দেয় ব্যাংক। এভাবে মোরশেদ আলমকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
নোয়াখালী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণের পারিবারিক প্রতিষ্ঠান এএসটি বেভারেজ ছিল সাউথইস্ট ব্যাংকের ঋণখেলাপি। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। ব্যাংকটির নিউ ইস্কাটন শাখায় তাদের ঋণ খেলাপি হয় বেশ আগেই। সিআইবিতে এ তথ্য গোপন করায় তিনি নির্বাচনের সুযোগ পান। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা ও বেঙ্গল ব্যাংকের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু নোমান হাওলাদারের মালিকানাধীন ডায়নামিক কারসের ১৩ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখার খেলাপি। এ তথ্য গোপন রাখায় ঋণখেলাপি হয়েও তিনি এখনও ব্যাংকের পরিচালক পদে বহাল আছেন।
বক্তব্য জানার জন্য চেষ্টা করা হলেও কোনো মাধ্যমেই যোগাযোগ করা যায়নি তাদের সঙ্গে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত এসব নেতা এখন আত্মগোপনে আছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী কোনো ঋণখেলাপি ব্যক্তি সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন না। এসব ব্যক্তির শ্রেণীকৃত ঋণকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সিআইবিতে নিয়মিত হিসেবে রিপোর্ট করা হয়, যা অনৈতিক। খেলাপি ঋণকে নিয়মিত দেখানোর সঙ্গে জড়িত শাখা ও প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়দায়িত্ব নির্ধারণ করে পূর্ণাঙ্গ একটি তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে এসব ঋণ খেলাপি করে যথাযথ প্রভিশন রাখতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুদ্দিন মো. ছাদেকের বক্তব্যের জন্য যোগাযোগ করলেও সাড়া মেলেনি। এমডির দপ্তরে গেলেও সেই একই চিত্র। অর্থাৎ যোগাযোগে ব্যর্থ। ২০২৩ সালের এপ্রিলের আগ পর্যন্ত সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন এম কামাল হোসেন। তিনিও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন,একটি ব্যাংকে পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনার মধ্যে ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেবল সেতু হিসেবে কাজ করে। ব্যক্তিগতভাবে তিনি কোনো অনিয়মের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।
সাউথইস্ট ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের বক্তব্যের জন্য চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। এমনকি তার বাসায় গেলে জানানো হয়, তিনি দেশের বাইরে আছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, সাউথইস্ট ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। তাদের জবাব পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চেয়ারম্যান নেই এরপরও রেখেছেন দুই গাড়ি-বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ব্যাংকের একটি গাড়ি ব্যবহার করতে পারেন। আলমগীর কবির সাউথইস্ট ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে দীর্ঘদিন ধরে দুটি করে দামি গাড়ি ব্যবহার করে আসছেন। গাড়ি দুটির একটি হ্যারিয়ার জিপ, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৩-৮৭১৩। আরেকটি মার্সিডিজ, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো-ভ ১৪-০০৫৪। গত ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি আর চেয়ারম্যান নেই। অথচ গত মঙ্গলবার গুলশান-২ এ ৫৮ নম্বর রোডের ৩/৪ বাসার গ্যারেজে গাড়ি দুটি পড়ে থাকতে দেখা যায়।
ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান হিসেবে একটি গাড়ি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি দুটি গাড়ি ব্যবহার করতেন। পদ হারানোর চার মাস পরও গাড়ি দুটি ফেরত দেননি। গত সপ্তাহে গাড়ি ফেরত চেয়ে তাঁকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। দ্রæত গাড়ি ফেরত না দিলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কলমানি থেকে বেশি সুদে টাকা,ধার কম সুদে-দুরবস্থায় পড়া দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট। এর চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। প্রতিষ্ঠানটির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন তাঁর ভাইয়ের ছেলে জুবায়ের কবির। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের আমানত ছিল ৪৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২৩২ কোটি বা ৪৭ শতাংশই সাউথইস্ট ব্যাংকের রাখা আমানত। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের মোট ৮৩৬ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৫৫১ কোটি টাকা বা ৬৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বে লিজিংয়ের পুঞ্জীভূত লোকসান ছিল ১৭২ কোটি টাকা। সার্বিক পর্যালোচনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, সাউথইস্টের পাওনা পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতা বে লিজিংয়ের নেই।
২০২২ ও ২০২৩ সালে যখন এ অর্থ দেওয়া হয়, ওই সময় ব্যাংক নিজেও তহবিল সংকটে থাকায় কলমানি থেকে ধার করছিল। যে রকম সুদে ব্যাংক ধার করেছে, তার চেয়ে কম সুদে বে লিজিংকে দিয়েছে। প্রতিবেদনে ২০২৩ সালের ২৭ ডিসেম্বরের লেনদেনের বর্ণনা দিয়ে বলা হয়েছে, ওই দিন মার্কেন্টাইল ব্যাংক থেকে সাড়ে ৯ শতাংশ সুদে ৮২ কোটি টাকা ধার করে সাউথইস্ট। একই দিন বে লিজিংকে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ সুদে ধার দেওয়া হয় ৬২ কোটি টাকা। কলমানির বাইরে মেয়াদি আমানত হিসেবে বে লিজিংয়ে ১২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা রেখেছে ব্যাংক। আর ব্যাংক ফাউন্ডেশনের ২৪ কোটি টাকা এবং সাউথইস্ট ব্যাংক গ্রিন স্কুলের ৫৭ লাখ টাকাও রাখা হয়েছে।
ভয়াবহ জালিয়াতি যত ঋণে-ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, একক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রæপকে কোনো একটি ব্যাংক তার মোট মূলধনের সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ ফান্ডেড ঋণ দিতে পারে। এ নির্দেশনা অমান্য করে বিভিন্ন গ্রæপকে ঋণ দিয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে সাউথইস্ট ব্যাংকের মোট মূলধন ছিল ৪ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে একক গ্রæপকে সর্বোচ্চ ৬৮৭ কোটি টাকা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাউথইস্ট ব্যাংকের গুলশান শাখা ও ডিইপিজেড অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে সমস্যাগ্রস্থ কেয়া গ্রুপকে ১ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকার ঋণ দেওয়া হয়। ২০১৯ সাল থেকে এই ঋণ খেলাপি হলেও তা নিয়মিত দেখিয়ে এসেছে ব্যাংক। ২০২২ সালে আলমগীর কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পর্ষদ সভায় এ ঋণে নতুন করে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হয়।
সাউথইস্ট ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, কেয়া গ্রæপের খারাপ অবস্থার কারণে অন্য ব্যাংক যখন ঋণ দেওয়া বন্ধ করেছে, ওই সময় সাউথইস্ট ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান আলমগীর কবির ব্যক্তিস্বার্থে ঋণ দিয়েছেন। ২০১৯ সালে ঋণ দেওয়ার পরই কেয়া কসমেটিকসকে আলমগীর কবিরের নিয়ন্ত্রণাধীন এশিয়ান ইন্স্যুরেন্সে বীমা করানো হয়। যেখান থেকে কমিশন আয় করেছে ৬৮ কোটি টাকা।
ব্যাংকের প্রিন্সিপাল শাখায় দেশবন্ধু সুগার মিলের ঋণ রয়েছে ১ হাজার ১২২ কোটি টাকা। এ ঋণে নানা অনিয়ম পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় স্ল্যাশ ওয়ার্কস ওয়াটার পার্কের ঋণে নানা অনিয়ম হয়েছে। ঋণ দেওয়ার আগে শাখা থেকে পার্কটির প্রথম বছরের আয় প্রাক্কলন করা হয় ২১১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। অথচ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে উদ্বোধনের পর থেকে গত বছরের মে পর্যন্ত আয় হয়েছে ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
ব্যাংকটির প্রিন্সিপাল শাখায় বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের ঋণ রয়েছে ৫০০ কোটি টাকা। এর বিপরীতে জামানত মাত্র ৯৭ কোটি টাকার। ২০২৩ সালের জুনে ঋণটি খেলাপি হলেও নিয়মিত দেখানো হতো। ক্যাপিটাল বনানী ওয়ান ও তার সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে করপোরেট শাখায় ঋণ রয়েছে ৭৫৪ কোটি টাকা। নিয়ম অমান্য করে ২০২১ সালের জুলাইতে ১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করে ব্যাংক। এই গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন আহমেদ বেস্ট হোল্ডিংস গ্রুপের চেয়ারম্যান।
সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরভিত্তিক তথ্য অনুযায়ী, সাউথইস্ট ব্যাংকের মোট আমানত দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৭৪১ কোটি টাকা। আর ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩৬ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি দেখানো হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, যা ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। যদিও ২০২৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্তত ৬ হাজার ৭৪ কোটি টাকা বা মোট ঋণের ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর খুরশীদ আলমের নির্দেশনায় তখন মাত্র ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা খেলাপি দেখানো হয়। একই সঙ্গে ৩৩০ কোটি টাকার প্রভিশন সংরক্ষণে ছাড় দেওয়া হয়। যে কারণে ২০৯ কোটি টাকার নিট মুনাফা দেখায় ব্যাংক। বিশেষ সুবিধা না দিলে ৫৯২ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতিতে পড়ত। এ ছাড়া উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে ১ হাজার ২৭৭ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ নিয়মিত দেখানো হচ্ছে। ৬১২ কোটি টাকা এমন সব প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে, যাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বন্ধ। এর বাইরে পুনঃতপশিল করা ঋণের পরিমাণ ১২ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। এর মানে খেলাপির বাইরে ব্যাংকটির ৩৬ দশমিক ৩১ শতাংশ সমস্যাগগ্রস্থ ঋণ। পুনঃতপশিল করা ঋণের মধ্যে ১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা তিনবারের বেশি তপশিল হয়েছে। স্বৈরাচাররর দোসরা এভাবেই লুটপাট চালিয়ে দেশের অর্থণীতির বারোটা বাজিয়েছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত না দিলেও হবে। যেহেতু হাসিনা সরকারের এমপি ছিল তারা।সূত্র : সমকাল।
আপনার মতামত লিখুন :