বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

দেশের চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনায় গঠন হচ্ছে কর্তৃপক্ষ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০২৪, ১১:৪৭ এএম

দেশের চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনায় গঠন হচ্ছে কর্তৃপক্ষ


দেশের চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনায় গঠন হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের একটি বোর্ড থাকবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট আইনের খসড়াও প্রণয়ন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অংশীজনের মতামত গ্রহণসহ নির্ধারিত প্রক্রিয়া শেষে ‘বাংলাদেশ চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আইন, ২০২৪’ শীর্ষক আইনটি দ্রæত প্রণয়নের তৎপরতা চলমান রয়েছে।
খসড়া আইন অনুযায়ী, কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি হবে বাংলাদেশে চামড়া শিল্প স্থাপন ও বিকাশের জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার কর্তৃক অথবা বেসরকারি উদ্যোগে চামড়া শিল্পনগরী স্থাপন এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, পরিচালনা, উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। খসড়া আইনে কর্তৃপক্ষের বোর্ডের দায়িত্ব ও কার্যাবলির উল্লেখও রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমেই রয়েছে চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণবিষয়ক আবশ্যকীয় নীতিমালা প্রণয়নের বিষয়টি। এর পরেই আছে কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুচারুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় আদেশ প্রদান ও নির্দেশনা জারি। তৃতীয়ত, চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে বিনিয়োগকারীদের প্রদেয় সুবিধাদি নির্ধারণ।
চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ভূমি, ভবনের স্পেস বরাদ্দ, ভাড়া ও ইজারা প্রদানের শর্তাবলি ও হার নির্ধারণ করবে বোর্ড। বোর্ডের শেষ দায়িত্ব ও কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে সরকারি ও বেসরকারি অংশীদারত্বে চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ নির্মাণের জন্য শর্ত নির্ধারণ এবং চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের উন্নয়ন, বিকাশ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাসংশ্লিষ্ট অন্য যেকোনো বিষয়।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা অনেক দিন ধরেই হচ্ছে ব্যবস্থাপনা আরো ভালো করার লক্ষ্যে। এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা বিসিক পারবে কিনা তা নিয়েও কথা হচ্ছিল। সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে চামড়া শিল্প খাতের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ণের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের সভায় আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ গঠনের বিষয়টি উঠে আসে। সেখানেই ভাবা হয় যে কর্তৃপক্ষ গঠনের মাধ্যমে চামড়া শিল্পের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার বিষয়টি। শিল্প মন্ত্রণালয় থাকবে, তবে চামড়া শিল্পকে ঘিরে আলাদা ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হলে ব্যবস্থাপনাটা অনেক সহজ হবে।’
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী বিকেন্দ্রীকরণের জন্য রাজশাহী, চট্টগ্রামে আরো দুটি শিল্পনগরীসহ ঢাকায়ও আরেকটা করা হচ্ছে জানিয়ে জাকিয়া সুলতানা আরো বলেন, ‘ওই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে চামড়া শিল্পের পরিধি আরো বড় হবে। ঢাকার বাইরের চামড়াগুলো যদি ঢাকার ভেতরে ৭-১০ দিনের মধ্যে না আসে তাহলে ব্যবস্থাপনা আরো সহজ হয়। এবারো সেভাবেই চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পরিকল্পনা রয়েছে। এসব প্রেক্ষাপট থেকেই খসড়া আইনটি করা। আইনটি যদি হয়, কর্তৃপক্ষ গঠন হলে আমাদের বিশ্বাস যে চামড়া শিল্প ব্যবস্থাপনাটা অনেক সহজতর হবে। অনেক দেশেই এ ধরনের কাঠোমো রয়েছে। যেহেতু চামড়া শিল্পের পণ্যকে আমরা দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত বলছি, যদি আমরা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে পারি, আমাদের জন্য ভালো। ব্যবস্থাপনা ভালো হলেই এলডব্লিউজি (লেদার ওয়ার্কিং গ্রæপ) সনদ প্রাপ্তিও সহজ হবে। কর্তৃপক্ষের আওতায় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) ব্যবস্থাপনাও নিশ্চিত হবে।’
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, পোশাকের পর আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। যদিও এ পণ্যের রফতানি প্রবৃদ্ধি রয়েছে নেতিবাচক ধারায়। দেশের অভ্যন্তরেই প্রাপ্যতা থাকলেও সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনার ঘাটতিতে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলছে না। ফলে নিজস্ব কাঁচামাল ব্যবহার করে রফতানি পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণও সম্ভব হচ্ছে না। সংরক্ষণ ব্যবস্থার ঘাটতিতে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া নষ্টও হচ্ছে। চামড়া প্রক্রিয়াজাত প্রক্রিয়ায় পরিবেশ দূষণমুক্ত হতে কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ থাকলেও সেখানে রয়েছে ব্যর্থতা। সাভারে পরিকল্পনা চামড়া শিল্পনগরী গড়ে উঠলেও ইটিপি পরিচালন অব্যবস্থাপনায় সেটা কার্যকারিতা হারিয়েছে।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চামড়া খাত নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা)প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিসিকের আওতাধীন সাভারের ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট শিল্পনগরীতে বরাদ্দপ্রাপ্ত ১৬২টি ট্যানারির মধ্যে বর্তমানে ১৪০টি উৎপাদনে রয়েছে। ট্যানারিগুলোয় ওয়েট বøু ক্রাশড ও ফিনিশড চামড়া উৎপাদন হয়। কিন্তু উৎপাদিত চামড়া আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এলডবিøউজি সনদ অর্জন করতে পারছে না। একদিকে নিজেদের উৎপাদিত চামড়া ইউরোপ-আমেরিকায় রফতানি বা নামি কোনো ব্র্যান্ডের কাছে বিক্রি করতে পারছে না। খুব কম মূল্যে চীন বা অন্য দেশের ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। দেশী চামড়ার পর্যাপ্ত জোগান থাকা সত্বেও রফতানিমুখী চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী দেশীয় শিল্প-কারখানাগুলোকে প্রতি বছর প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার এলডবিøউজি সনদধারী ফিনিশড লেদার আমদানি করতে হয়। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ অনুযায়ী, বছরে প্রায় ২৫ কোটি বর্গফুট কাঁচা চামড়া (হাইড ও স্কিন) প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এর মধ্যে গরুর চামড়া হলো ৬৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, ছাগলের চামড়া ৩২ দশমিক ৭৪ ও ভেড়ার চামড়া ১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১২২ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি করেছেন বাংলাদেশের রফতানিকারকরা।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!