বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণে সাড়ে ৭ কোটি টাকা লুটেরার শাস্তি পদাবনতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০২৪, ০৩:২৩ পিএম

স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণে সাড়ে ৭ কোটি টাকা লুটেরার শাস্তি পদাবনতি


স্বপ্নের পদ্মা সেতুর জমি অধিগ্রহণে সরকারী কোষাগার থেকে সাড়ে ৭ কোটি টাকা আত্মসাত করে রাজারহালে চাকরি করছেন মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটক। দুর্নীতি প্রমান হওয়ার পর তার সাজা হয়েছে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে পদাবনতি দিয়ে সহকারী সচিবে পদায়ন। এমন দুর্নীতির ঘটনায় এমন দুর্বল শাস্তি দিলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা দুর্নীতি করতে আরও উৎসাহিত হবে, বলেছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া। প্রশ্ন হচ্ছে সরকারি কোষাগার থেকে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকা আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত থাকার শাস্তি কী হতে পারে? জড়িত ব্যক্তি যদি সরকারি কর্মকর্তা হন, তাহলে এর শাস্তি হতে পারে কেবল পদাবনতি?
সুত্র জানায় গত ৪ এপ্রিল মাদারীপুরের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা প্রমথ রঞ্জন ঘটককে জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব থেকে পদাবনতি দিয়ে সহকারী সচিব করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এই সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন দেখে প্রশাসনে ঘাফটি মেওে থাকা দুর্নীবাজরা আনন্দ পাচ্ছে। জানাগেছে মাদারীপুরের মাগুরখ এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করার জন্য প্রমথ ২০২১ সালের জুনে পাঁচ ব্যক্তিকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সাত কোটি ৩৫ লাখ টাকা দেন। তবে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্তে দেখা গেছে, সেই জমি কখনোই ওই পাঁচজনের ছিল না। বরং, জমিটি ছিল সরকারি, যার জন্য কাউকেই কোনো অর্থ দেওয়ার কথা নয়। আর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি তো প্রশ্নাতীত। ২০২০ সালেন জুন থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত মাদারীপুরের ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা ছিলেন প্রমথ রঞ্জন ঘটক। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ‍‍`ইস্যুকৃত চেক সমূহের ক্ষমতাপত্র সম্পাদন ১১-০৭-২০২১ তারিখে হলেও তিনি (প্রমথ রঞ্জন ঘটক) পেছনের তারিখ ৩০-০৬-২০২১ ...উল্লেখপূর্বক চেকে স্বাক্ষর করেছেন।‍‍` অর্থাৎ মাদারীরপুর জেলায় তার শেষ কর্ম দিবসের তারিখ উল্লেখ করে চেক স্বাক্ষর করে প্রায় সাড়ে সাত কোটি টাকার দুর্নীতির কাজে সহায়তা করেছেন। প্রমথ বর্তমানে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনে কর্মরত। শাস্তির কারণে ষষ্ঠ গ্রেডে থাকা এ কর্মকর্তা আগামী তিন বছরের জন্য নবম গ্রেডের বেতন-ভাতা পাবেন। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রমথ রঞ্জন ঘটক কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে দুর্নীতি প্রমাণিত হওয়ার পরও প্রমথ রঞ্জনকে চাকরিতে রাখার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচিবালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তারা বলছেন, সন্দেহাতীতভাবে ‍‍`দুর্নীতি‍‍` প্রমাণিত হওয়ার পরও এ কর্মকর্তাকে কার্যত ‍‍`অসদাচরণ‍‍`র শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দুর্নীতিকে উৎসাহই দেওয়ার সামিল। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, তিন বছর পর আবারও আগের পদ (জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব) ফিরে পাবেন প্রমথ।
সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্নীতিবাজ এ কর্মকর্তাকে নিম্ন পদে অবনতিকরণ, অর্থাৎ দুর্বল গুরুদন্ডের শাস্তি দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। প্রশ্ন উঠছে জনপ্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা তার এমন সাজা দেওয়ার সুপারিশ করেছেন তারা আত্মসাৎ করা সাড়ে ৭ কোটি টাকার হিসেব-নিকেশ তাদের মধ্যে কিছু হলো কিনা সচিবালয় কর্মরতদেও মধ্যে নানারকম প্রশ্ন উকিঝুকি মারছে। সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী চার ধরনের গুরুদন্ড আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সবচেয়ে দুর্বল দন্ড হচ্ছে নিম্ন পদে অবনতিকরণ। আরও তিনটি গুরুদন্ডের মধ্যে রয়েছে বাধ্যতামূলক অবসর, চাকরি থেকে অপসারণ ও চাকরি থেকে বরখাস্ত। এর কোনটাই করা হয়নি। তাহলে কি করা হলো? বিষয়টি নিয়ে একাধিক যুগ্মসচিব বলেছেন, সরকারি চাকরিতে সাধারণত দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মচারীদের শাস্তি দেওয়ার প্রবণতা কম। দুয়েকটা ঘটনা তদন্তে প্রমাণ হওয়ার পরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় না। এ কারণে প্রশাসন দিনকে দিন দুর্বল হচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা এখান থেকে বার্তা পাবে যে, ঘটনা যাই হোক, চাকরি যাবে না।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া বলেন, ‍‍`এমন দুর্নীতির ঘটনায় দুর্বল শাস্তি দিলে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা দুর্নীতি করতে আরও উৎসাহিত হবে। তিনি আরও বলেন, ‍‍`দুর্নীতির বিরুদ্ধে ১৯৮৫ সালের শৃঙ্খলা ও আপিল বিধিমালা কঠোর ছিল। ওই বিধিমালা বহাল থাকলে দুর্নীতিবাজ প্রমাণিত হওয়া কর্মচারীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাতে হতো। কিন্তু ২০১৮ সালে বিধিমালাটি দুর্বল করে ফেলায় দুর্নীতি করেও কঠোর শাস্তি পাচ্ছে না দুর্নীতিবাজরা। এটা প্রশাসনের জন্য ইতিবাচক ফল আনবে না। প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি করার প্রমাণ হলেও দুর্নীতি দমন কমিশন কি করতে পারে?
 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!