সারাদেশে গত দুই মাসে ৩৩ জনকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একদিনেই দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়) দুজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, সামাজিক অস্থিরতার কারণে গণপিটুনিতে মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলেছে। তুচ্ছ কারণে মানুষ সংঘর্ষে জড়িয়ে আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস)পর্যালোচনা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে যে সহিংসতা শুরু হয়েছিল তা এখনো চলছে। এখনো মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ফিরে আসেনি। সুযোগ পেলেই মানুষকে পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। চলতি বছরের ১৫ জুলাই থেকে এ পর্যন্ত ৩৩ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে। মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর নিস্ত্রিয়তার সুযোগে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল এই হত্যাকান্ড ঘটাচ্ছে। তবে এ ক্ষেত্রে যত দ্রæত সম্ভব এসব অপকর্ম নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তা না হলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যারা এসব হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের গ্রেপ্তার করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখযোগ্য হত্যাকান্ড: সবশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামের এক যুবককে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। তোফাজ্জলের বোন বলেন, তোফাজ্জল মানসিক রোগী ছিলেন। তার হত্যার বিচার চাই।
এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করে ঘটনার তদন্ত করছে। পুলিশ ঢাবি ক্যাম্পাস থেকে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৬ জনকে আটক করেছে।
এর আগে গত বুধবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোল্লাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
শুধু এ দুজনই নন, এভাবে সাম্প্রতিক সময়ে গণপিটুনিতে হত্যা বেড়েই চলেছে। তারও আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবদুল্লাহ আল মাসুদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। সদ্যোজাত সন্তান ও স্ত্রীর জন্য ওষুধ আনতে গিয়ে রাবির মেডিকেল সেন্টারের একটি স্টোরে হামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া গত ৫ সেপ্টেম্বর বগুড়ায় মিজানুর রহমান মিজান নামের স্বেচ্ছাসেবক দলের একজন নেতাকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন লেদু নামের একজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। গত ১৭ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর রাহাত হাসান বিপুসহ তিনজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। অন্য দুজন হলেন সাইদুল ইসলাম ইয়াসিন (১৯) ও সাঈদ আরাফাত শরীফ (২০)। গত ১৩ সেপ্টেম্বর মাদারীপুরে গরুচোর সন্দেহে দুজনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। এভাবে এর আগেও গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে আরো অনেকে। অপরাধ বিশেসজ্ঞদের মতে বিচারহীনতার কারণে দেশে বেড়েছে মব জাস্টিজ।
আপনার মতামত লিখুন :