বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

ফেলে যাওয়া কর্মিরা বিপদে‘তারা আছেন মহাসুখে

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১০:৩৪ এএম

ফেলে যাওয়া কর্মিরা বিপদে‘তারা আছেন মহাসুখে

দেশে যখন কোনো বিপদ দেখে তখন তারা সবায় নিরাপদে চলে যায়, যা ওয়ান এলেভেনেও করেছিলেন তারা। লুটেপুটে খাওয়াই যেনো তাদের কাজ। দেশ ও দেশের আওয়ামী লীগের রাজনীতি যেনো তাদের বাপদাদার কেনা সম্পদ। আন্ডবাচ্চা সবাই এমপি হয়ে লুটে খাওয়াই তাদের কাজ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্বৈরাচার সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমার কিছু আত্মীয়-স্বজন ঝড়ের পূর্বাভাস আগাম পেয়ে যান। তখন তারা দেশ ছাড়েন। আবার সুসময় হলেই দেশে ফিরে এসে হাজির হন। আর্দশের কর্মিরা মহাবিপদে পরলেও তাদেও কিছু আসে-যায়না।
এবার গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনার কথার সত্যতা মিলেছে। আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী বিপদে আছেন। তাদের নামে হত্যা ও দুর্নীতির মামলার পাশাপাশি রয়েছে হামলার আশঙ্কা। এদের কেউ জেলখানায়, আবার কেউ বাড়ীঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তবে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করা শেখ পরিবারের সদস্যদের। তারা আছেন বহাল তবিয়তে। আওয়ামী লীগের একাধিক স্থানীয় নেতা অভিযোগের সুরে বলেছেন, তারা আছেন মহাসুখে, প্রচুর অর্থ আছে যা দিয়ে ইচ্ছেমতো কিনে খাচ্ছেন, দাচ্ছেন ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সেলফি তুলছেন। সেসব আবার নিলর্জ্জের মতো ফেসবুকে পোস্টও করছেন। আর আমরা দেশের ভেতরে পালিয়ে বেড়াচ্ছি, জেল খাটছি। 
৫ আগস্টের পর গ্রেপ্তারের চিত্রগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সাবেক এমপি-মন্ত্রীদের প্রায় সবাই হামলা-মামলায় জর্জরিত হলেও নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট-স্বজনরা। এরা গত সাড়ে ১৫ বছরে সরকারের মন্ত্রী,এমপি, মেয়র হওয়া ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্যসহ সহযোগী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করেছিলেন। 
এর মধ্যে মন্ত্রী ও সমপদমর্যাদায় ছিলেন চারজন। এমপি হয়েছেন অন্তত ১০ জন। দুই সিটিতে মেয়র হয়েছেন তিনজন। সহযোগী সংগঠনের প্রধান হয়েছেন একজন। বৈধ ও অবৈধভাবে সর্বোচ্চ সুবিধায় ছিলেন তারা। অথচ পট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা সবাই আগেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছেন। একমাত্র শেখ পরিবারের সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ খোকা গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাকিদের অবস্থান কেউ নিশ্চিত করতে পারছেন না। এর আগে শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের তালিকা দিয়েছিলেন। তাঁর বোন ও তাঁদের ছেলেমেয়ে ছাড়া কোনো আত্মীয় নেই বলে দাবি করেছিলেন। পরিবারের সদস্য ছাড়াও তাঁর নিকটাত্মীয় রয়েছেন। যারা দীর্ঘদিন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলেছেন। শাসন ও শোষণ করেছেন। নিয়ন্ত্রণ করেছেন রাষ্ট্রক্ষমতার সবকিছু।  একাধিক সুত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম আওয়ামী লীগের আজীবন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তার দুই ছেলে শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাঈম, তারা দুজনেই বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক,করেছেন ঠিকাদারিও। শেখ পরিবারের প্রভাব খাটিয়ে শেখ ফজলে ফাহিম বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের প্রধান সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হয়েছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে শেখ সেলিমের পরিবার আত্মগোপনে আছে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার পতনের আগেই তারা দেশ ছাড়েন। 
শেখ সেলিমের ভাই শেখ ফজলুল হক মণির দুই সন্তান শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস। শেখ পরশও দেশ ছেড়েছেন বলে জানা যায়। জানা গেছে এখন বিদেশে নিরাপদ জীবন-যাপন করছেন। কানাডায় আরাম-আয়াশে জীবন যাপন করছেন। তার স্ত্রী যুবলীগের পদবাণিজ্য করে প্রচুর টাকা আয় করেছেন।
শেখ সেলিমের ছোট ভাই শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ক্যাসিনো বিতর্কের সময় আলোচনায় এসেছিলেন। তিনি বর্তমানে সিঙ্গাপুরে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার ভগনিপতি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীও আত্মগোপনে আছেন। 
শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ বরিশাল-১ আসনের এমপি ছিলেন। তার ছেলে সাদিক আবদুল্লাহ ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। আওয়ামী লীগের ক্ষমতার সময় এই পরিবার ছিল বরিশাল অঞ্চলের হর্তাকর্তা। ৫ আগস্টের পরে হাসানাত আবদুল্লাহ ও ছোট ছেলে সুকান্ত আবদুল্লাহ দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। তবে সাদিক আবদুল্লাহ কোথায় আছেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার ছোট ভাই আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র। তিনি কোথায় আছেন জানা যাচ্ছে না। জানা গেছে, হাসানাত আবদুল্লাহ ভারতে আছেন তার মেয়ে আঞ্জুমানারা কান্তা আবদুল্লাহর কাছে। কান্তা একজন ভারতীয় নাগরিককে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস করেন।
শেখ হাসিনার ফুফাতো বোন শেখ ফাতেমা বেগমের এক ছেলে নূর-ই আলম চৌধুরী (লিটন চৌধুরী) একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ছিলেন। আরেক ছেলে মুজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন চৌধুরী) ফরিদপুর-৪ আসন থেকে টানা তিনবারের স্বতন্ত্র এমপি ছিলেন। ৫ আগস্টের পর থেকে এই দুই ভাইও আত্মগোপনে। জানা গেছে লিটন চৌধুরী এরআগে ওয়ান এলেভেনের সময়ে ভারতে পালিয়ে গিয়ে আরাম-আয়েশে জীবন পার কওে ২০০৯ সালের কিছুদিন আগে দেশে ফিরে আবারও লুটেপুটে খাওয়া শুরু করেন। এবারও তিনি সেই আগের জায়গায় পালিয়ে গেছেন বলে কোনো সুত্র থেকে পাওয়া গেছে। তাদের কাজই যেনো লুটেপুটে খাওয়া।
শেখ হেলাল আন্ডাবাচ্চাসহ গোটা পরিবার এমপির স্বাদ নিয়ে চলছেন। বড়াল হত্যার অভিযোগও ছিল তার বিরুদ্ধে লুপেটুটে খেয়ে এখন কর্মিদেও বিপদেও মুখে ফেলে পালিয়েছে। তার ভাই খুলনা-২ আসনের সাবেক এমপি শেখ সালাউদ্দীন জুয়েলকে সরকার পতনের পর টুঙ্গিপাড়ায় দেখা গেছে। তবে সর্বশেষ তার অবস্থান নিয়েও রয়েছে ধোঁয়াশা, তিনি কি দেশেই আছেন না বিদেশে গেছেন। 
আওয়ামী সরকারের অন্যতম সুবিধাভোগীদের একজন ঢাকা ওয়াসার সাবেক বিতর্কিত এমডি তাকসিম এ খান। তিনি শেখ হাসিনার ফুপা ইলিয়াস চৌধুরীর ভগ্নিপতি। সেদিক থেকে তিনি শেখ হাসিনার ফুপা হন। তিনি ৫ আগস্টের পর যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে আলোচনা আছে। ওয়াসার বড় চোর হিসাবে চিহ্নিত হলেও তার বিচার বা শাস্তি কোনটাই হয়নি। কারন শেখ পরিবারের জামাই তিনি। চোওে চোওে শালিক এক চোর বিয়ে করে আরেক চোরের শালি,এমন অবস্থায় চলছে ১৬ বছর।
শেখ পরিবারের আরেক প্রভাবশালী সদস্য বঙ্গবন্ধুর চাচাতো ভাই শেখ কবির হোসেন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি ও বাংলাদেশ বিমা সমিতির সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি কোথায় আছেন তা কেউই বলতে পারছেন না। এ যেনো ডাকাতের সর্দার। তার কথার বাইরে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু। তিনি যা বলবেন তা করতে হবে। লুটে নিয়েছে জনগনের অর্থ। ধরা পরেনি বা ধরেনি,তাদেও বিচার কখনো এদেশে হবে তা কেউ ভাবেনি। এবার তাদেও বিচার চায় জনগণ।
শেখ হাসিনার আরেক চাচাতো ভাই শেখ হাফিজুর রহমান বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সদস্য সচিব। ৫ আগস্টের পর তাদের কোথাও দেখা যায়নি। এ ছাড়া শেখ রেহানার দেবর মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক। গত চার মেয়াদে আওয়ামী লীগের অন্যতম ক্ষমতার বলয় গড়ে উঠেছিল তাকে কেন্দ্র করে। তিনি সামরিক-বেসামরিক প্রশাসন ব্যবহার করে দলের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করার পাশাপাশি ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করেছেন বলে অভিযোগ আছে। ৫ আগস্টের পর থেকে তারিক আহমেদ আত্মগোপনে আছেন। তিনি ছিলেন লুটের রাজা। টাকার জোরে ইউরোপের নাগরিগত্ব চেয়েছিলেন। নানা শ্যেনি পেশার মানুষ মুখতে শুরু করেছেন তারা বলছেন শেখ হাসিনা দেশে এমন সব  লুটপাটকারি আত্মীয়-স্বজন নিয়ে দেশের লুটতন্ত্রই যেনো কায়েম হয়েছিলেন। যা ধরা পরেনি-ধরেননি। বিচারও হয়নি। গত ১৬ বছরে পরিবারের সবায় হয়েছেন বিত্বশালী,ধনকুবের। আত্ময়ি-অনাত্মীয় বাদ যায়নি কেউ।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!