সেনানিবাসের শহিদ মইনুল হক সড়কের বাড়ি ভেঙে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের পর ইউনাইটেডে গ্রæপ জ্বলে উঠে ‘আলাদিনের চেরাগ’। যা এখনো নেভেনি-এমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের অভিযোগ-ওই বাড়ি ভাঙার নেপথ্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন গ্রæপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মইনুদ্দীন হাসান রশীদের এক নিকটাত্মীয়। যিনি ওই সময় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। তার ছোঁয়াতেই সরাসরি হাসিনা সরকারের আশীর্বাদ পাওয়া শুরু হয়। গত সাড়ে ১৫ বছরে গ্রæপটি রীতিমতো ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ বনে যায়। বিশেষ করে বিদ্যুৎ খাতে নজিরবিহীন সুযোগ-সুবিধা আদায় করে কমপক্ষে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে। বাড়িটি ভাঙার পুরস্কার হিসাবেই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে এসব অপকর্ম। যেখানে সরাসরি সহযোগিতা করেছেন হাসিনা ও তার বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। এই বিপুকে ঘুস হিসাবে নামমাত্র মূল্যে দেওয়া হয়েছে রাজধানীর ১০০ ফিট সড়কের পাশে অবস্থিত ৮০ কাঠা জমি। যার বর্তমান মূল্য দেড়শ কোটি টাকার বেশি।
উল্লেখ্য,আরব্য উপন্যাসের আলাদিনের চেরাগ (প্রদীপ) সবার কাছেই পরিচিত। জাদুকরী সেই চেরাগে ঘঁষা দিলেই দৈত্য বেরিয়ে এসে পূরণ করে মানুষের ইচ্ছা। আলোচ্য সময়ে অস্বাভাবিক হারে সম্পদ বাড়ার গতি দেখে ইউনাইটেড গ্রæপকে এই চেরাগের সঙ্গে তুলনা করলেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের আরও অভিমত-বিদ্যুৎকেন্দ্র অলস বসিয়ে রেখে শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামে লুটে নিয়েছে ৭ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এই লুটপাট বিদ্যুৎ খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অঙ্ক। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধান এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে পাওয়া গেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য।
তথ্যানুসন্ধানে পাওয়া নথিপত্রে দেখা গেছে-২০১৮ সালে ৪ জুন ৫০৩২ ও ৫০৩১নং দুটি দলিলে ৮০ কাঠা জমি রেজিস্ট্রি করেন নসরুল হামিদ বিপু। আলিফা প্রপার্টিজ লিমিটেডের নামে নেওয়া জমির দলিল মূল্য দেখানো হয় মাত্র ২ কোটি ১৭ লাখ ৪২ হাজার টাকা। খিলগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এই জমি রেজিস্ট্রি হয়েছে। জমিটির অবস্থান সাতারকুল মৌজার অন্তর্গত ১০০ ফিট সড়কে। ইউনাইটেড গ্রæপের ভবনসংলগ্ন রাস্তার পাশেই জমিটির অবস্থান। গ্রæপটির মালিকানাধীন নেপচুন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম আজাদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পক্ষে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেন। সিটি জরিপ অনুযায়ী জমির দাগ নং-২৭৪৪, ১৩৮০, ৫৯৮৫, ৫২৩৩, ৪৬৭৪, ২৫১১, ২৫১২, ২৫১৩, ২৫১৪, ২৫১০ ও ২৫০৮। নসরুল হামিদ বিপুর মালিকানাধীন আলিফা গ্রæপার্টিজ নামক এই প্রতিষ্ঠানটি বনানীর ১৭নং রোডের ১৯নং প্লটে, প্রিয়াঙ্গন টাওয়ার হিসাবে পরিচিত। দলিলেও বনানীর এই ঠিকানা উল্লেখ রয়েছে। এর আগে ২১ আগস্ট নসরুল হামিদ বিপুর এই বাড়িতে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৫১ হাজার টাকা, ৫১০ তুর্কি লিরা, ২০০ পাউন্ড, ১টি পিস্তল, ২টি ম্যাগাজিন ও ৫০ রাউন্ড গুলি জব্দ করে। বিপুর এই ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান হিসাবে আছেন তার স্ত্রী সীমা হামিদ।
অনিয়মই ছিল নিয়ম : তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত এই ইউনাইটেড গ্রæপের জন্য অনিয়মই ছিল নিয়মের আওতায়। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শত শত কোটি টাকা ঘুস দিয়ে দুই হাতে কামিয়ে নিয়েছেন। অনিয়ম, দুর্নীতি, আর লুটপাটের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সেক্টর থেকে ইউনাইটেড গ্রæপ হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা,সাবেক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু আর সাবেক মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসকে সিঁড়ি হিসাবে ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি লুটপাট চালিয়েছে গ্রুপটি। সরকারের এই তিন শীর্ষ ব্যক্তির প্রভাব খাটিয়ে জোরপূর্বক ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে বানিয়েছে ইন্ডিপেন্ডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি)। ইপিজেডে (এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন) বিদ্যুৎ দেওয়ার নামে পাওয়ার প্ল্যান্ট বানিয়ে সে বিদ্যুতের বড় অংশ চড়া দামে পিডিবির কাছে বিক্রি করে সাধারণ গ্রাহকের ‘পকেট কাটা’ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিডা ও পিডিবির কতিপয় অসাধু শীর্ষ কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে আইপিপির নাম বাগিয়ে কম দামে গ্যাস কিনেছে। আর কম দামে গ্যাস কিনে সেই বিদ্যুৎ ক্যাপটিভ রেটে বিক্রি করেছে। এ খাত থেকে গত কয়েক বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করেছে। এতে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে তিতাস গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। পাওনা আদায়ে তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে একাধিকবার চিঠি দিলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভয় দেখিয়ে তিতাস গ্যাস কর্মকর্তাদের চুপ করিয়ে রাখা হয়। একপর্যায়ে খোদ সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আইপিপি করিয়ে নেয় ইউনাইটেড গ্রæপ।বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সাবেক একজন চেয়ারম্যান যুগান্তরকে বলেন,‘আইন অনুযায়ী ইউনাইটেডের বিদ্যুৎকেন্দ্র দুটি ক্যাপটিভ ক্যাটাগরির। আইপিপি হিসাবে তাদের দর নির্ধারণের কোনো সুযোগ নেই। ইউনাইটেড বিইআরসিতে এলে আমরা তাদের আবেদন নাকচ করে দেই। রিভিউয়ের আবেদনও নাকচ হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আমি যতদূর জানি হাইকোর্টও তাদের আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন। ইউনাইটেডের দুটি প্রকল্প শুরু হয়েছে ক্যাপটিভ হিসাবে। আইপিপি হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না।’
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের(ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বলেন, ইউনাইটেড গ্রæপকে দেওয়া লাইসেন্স রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি। রাষ্ট্রের সংবিধান, আইন ও নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বেসরকারি কোনো কোম্পানিকে ডিস্ট্রিবিউশন লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার নেই। কিন্তু ইউনাইটেড গ্রæপ ডিস্ট্রিবিউশন করছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি আইনের ঊর্ধ্বে ছিলেন? তিনি নির্দেশ দিলেই অনুমোদন দেওয়া যাবে না। এটা দেওয়ার এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর নেই। ক্যাপটিভ শ্রেণির গ্রাহককে আইপিপির রেটে গ্যাস দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,বিদ্যুৎ বিভাগের তৎকালীন উপসচিব সাইফুল আজাদ স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে,‘প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ফেব্রæয়ারি মাস থেকে ক্যাপটিভ শ্রেণিতে ৩০ টাকা (ঘনমিটার) হিসাবে গ্যাস ক্রয় করে ঢাকা-চট্টগ্রাম ইপিজেডে স্থাপিত দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র আইপিপি হিসাবে লাইসেন্স প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’ চিঠিতে বর্ণিত সিদ্ধান্তের আলোকে আইপিপি গ্যাস শ্রেণির জন্য বিদ্যুৎ ট্যারিফ নির্ধারণে বিইআরসিকে প্রায়াজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সম্প্রতি ইউনাইটেড গ্রæপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মইনুদ্দীন হাসান রশীদকে অভিযোগের বিষয়ে অবহিত করা হয়। এমডির পক্ষে গ্রæপের হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স ও প্রাইভেট সেক্রেটারি শামীম মিয়া এ প্রতিবেদকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং তার অফিসে বসার অনুরোধ জানান। পরে ইউনাইটেড গ্রæপের পক্ষে শামীম মিয়া বলেন, ‘ইউনাইটেড গ্রæপ সব ধরনের আইন-কানুন মেনে তিতাস গ্যাসের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এ সংক্রান্ত তাদের সব ধরনের কাগজপত্র আছে।’ তিনি বলেন, তিতাসের কাছে তাদের কোনো বকেয়া নেই। সরকার ইপিজেডে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য তাদের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির অনুমোদন দিয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ তো আর রিজার্ভ করে রাখার সুযোগ নেই। যার কারণে ইপিজেডের অব্যবহৃত বিদ্যুৎ আমাদের বাইরে বিক্রি করতে হচ্ছে। শামীম আহমেদ আরও জানান, ‘সরকার আমাদের আইপিপি রেটে গ্যাস কেনার অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু তিতাস গ্যাস আমাদের বিল দিচ্ছে ক্যাপটিভ রেটে। এই সমস্যা নিরসনে পরবর্তী সময়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বিডা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগ ও তিতাসের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের রায় অনুযায়ী আমরা তিতাসকে বিল দিয়ে যাচ্ছি। কোনো অনিয়ম হয়নি।’
জানা গেছে, ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি ইপিজেডে গ্রুপটির দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেখান থেকে যথাক্রমে ৮৬ ও ৭২ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। কথা ছিল তারা সরকারি গ্যাস ব্যবহার করে এই দুই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেই বিদ্যুৎ কম দামে দুটি ইপিজেডে বিক্রি করবে। ইপিজেডে অব্যবহৃত বিদ্যুৎ তারা ক্যাপটিভ রেটে বাইরে বিক্রি করবে। সেক্ষেত্রে বাইরে বিক্রি করা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য যে গ্যাস ব্যবহার করবে সে গ্যাসের দাম হবে ক্যাপটিভ রেটে। কিন্তু দেখা গেছে ইকোনোমিক জোনগুলোতে তেমন বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হতো না। ফলে তারা ইপিজেডে সামান্য বিদ্যুৎ দিয়ে বাকি বিদ্যুৎ বেশি দামে বাইরে বিক্রি করে দিত। এতে কম দামের গ্যাস ব্যবহার করে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে তাদের খরচ হয় মাত্র ৪ টাকা ১৭ পয়সা। অথচ এই বিদ্যুৎ তারা বাইরে বিক্রি করেছে প্রতি ইউনিট ১০ টাকা ৮৮ পয়সা। আয় হচ্ছে দ্বিগুণের বেশি। বিদ্যুৎ বিভাগ ও জ্বালানি বিভাগ বিষয়টি টের পাওয়ার পর তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের বিল ক্যাপটিভ রেটে করার নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশনা তারা মানেনি। এমনকি ক্ষমতার প্রভাবে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ৫০০ কোটি টাকার বিলও আটকে দিয়েছে।
জমি ঘুসের নেপথ্যে : অনুসন্ধানে জানা গেছে, পতিত সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুকে মোটা অঙ্কের টাকা ও জমি ঘুস দিয়ে ক্যাপটিভ বিদ্যুৎকেন্দ্রকে আইপিপিতে রূপান্তর করেছে ইউনাইটেড গ্রুপ। কারণ গ্যাসভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাসের দাম ক্যাপটিভের অর্ধেকের চেয়েও কম। শুধু এটি নয় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির (এপিএসসিএল) ২০ শতাংশ শেয়ার আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউনাইটেড গ্রæপের বিরুদ্ধে। যৌথ মালিকানার আশুগঞ্জ ১৯৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ওই শেয়ার গোপন আঁতাতের মাধ্যমে আত্মসাতের অভিযোগ আছে। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে ইউনাইটেড গ্রæপের ৭১ শতাংশ, আর ২৯ শতাংশ শেয়ার সরকারি প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানির হাতে থাকার কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে দেখা গেছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে সরকারের শেয়ার মাত্র ৯ শতাংশ। আর ইউনাইটেড গ্রæপের ৯১ শতাংশ। অথচ এই কেন্দ্রটি নির্মাণে পুরো জমি দিয়েছে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি. (এপিএসসিএল)। খুলনায় অবস্থিত ২টি বিদ্যুৎকেন্দ্র বিক্রি করে দিয়েছে ইউনাইটেড গ্রæপ। খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লি. (কেপিসিএল)-২ (১১৫ মেগাওয়াট) বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০১০ সালে প্রথম ৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। প্রথম ৫ বছরেই তাদের বিনিয়োগ তুলে নিলেও, এরপর ২০১৬ সালে আবারও ক্যাপাসিটি পেমেন্টের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা হাওয়া করে দেয়।
জানা যায়,কেপিসিএলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে যাত্রা শুরু ইউনাইটেড গ্রæপের। সামিট গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে এ যাত্রা শুরু হয় তাদের। পরে এককভাবে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলে গ্রæপটি। বেসরকারি খাতে দ্বিতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী ইউনাইটেড গ্রæপ।বর্তমানে ইউনাইটেড গ্রæপের ছয়টি নিজস্ব বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ, পায়রায় একটি কেন্দ্রের ৮২ দশমিক ৫০ শতাংশ ও আশুগঞ্জের একটি কেন্দ্রের ৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ইউনাইটেডের। যদিও অভিযোগ আছে-এই ৯৩ শতাংশ শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ‘আন্ডার হ্যান্ড ডিলিং’ হয়েছে একটি সরকারি কোম্পানির সঙ্গে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ইউনাইটেড গ্রুপের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড থেকে পাওয়া (পিডিবি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৩ বছরে গ্রæপটি নিজস্ব কেন্দ্রগুলোর জন্য প্রায় ৬ হাজার ৬০৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ হাতিয়ে নিয়েছে। আর কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ ১২ বছরে নিয়েছে প্রায় এক হাজার ২৭৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার ৮৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ইউনাইটেড গ্রæপ।
আবাসন ব্যবসায়ী নসরুল হামিদ বিপু বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের লাইসেন্স পাওয়া শুরু করে এই গ্রæপটি। ২০১৬-১৭ অর্থবছর ইউনাইটেডের বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন সক্ষমতা ছিল ২৯৩ মেগাওয়াট। ওই অর্থবছর তাদের ক্যাপাসিটি চার্জ পরিশোধ করতে হয় ৪৩৬ কোটি ৩২ লাখ টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের শেষ দিকে ২০০ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েল চালিত আরেকটি কেন্দ্র উৎপাদন শুরু করে। এতে চার কেন্দ্রের উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় ৪৯৩ মেগাওয়াট। আর সে অর্থবছর ক্যাপাসিটি চার্জ দেওয়া হয় ৪৪২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জামালপুরে ফার্নেস অয়েল চালিত ১১৫ মেগাওয়াটের আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করে ইউনাইটেড। এতে গ্রæপটির উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০৮ মেগাওয়াট। সে অর্থবছর পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় ৭৬৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২০১৯-২০অর্থবছর চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৩০০ মেগাওয়াটের ফার্নেস অয়েল চালিত আরেকটি কেন্দ্রে উৎপাদন শুরু করে গ্রুপটি। এতে ইউনাইটেডের উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫৫ মেগাওয়াট। আর এ কেন্দ্রগুলোর জন্য পিডিবিকে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় এক হাজার ২৩৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজারে আসে ১৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড পায়রাকেন্দ্রটি। এতে গ্রæপটির উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার পাঁচ মেগাওয়াট। এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জ ছিল এক হাজার ৩৩৫ কোটি ৪৫ টাকা। আর গত অর্থবছর এ কেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হয় এক হাজার ৩৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
এসব কেন্দ্রের বাইরেও কেপিসিএলের ৩৫ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ইউনাইটেড গ্রæপ ও এর কয়েকজন পরিচালকের হাতে। ২০১০ সালের এপ্রিলে কেপিসিএল পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ওই কোম্পানির অধীনে এক সময় তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ছিল। এসব কেন্দ্রের জন্য ১২ বছরে ইউনাইটেড ক্যাপাসিটি চার্জ পায় প্রায় এক হাজার ২৭৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। পোয়াবারো ইউনাইটেড গ্রæপ। যুগান্তর
আপনার মতামত লিখুন :