নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতেই (২০২৫ সালের) রাজনৈতিক সহিংসতায় ১০ জন নিহত এবং ৫৯৪ জন আহত হয়েছেন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)-এর জানুয়ারি ২০২৫ মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। দেশে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ডিসেম্বরে (২০২৪) রাজনৈতিক সহিংসতায় ৯ জন নিহত এবং ৩১২ জন আহত হয়েছিলেন। তুলনামূলকভাবে চলতি মাসে সহিংসতার ঘটনা বেড়েছে। এমএসএফ-এর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিএনপির দলীয় কর্মীদের মধ্যে অন্তদ্ব›দ্ব বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে সহিংসতার মাত্রা আরো বাড়তে পারে।
শুক্রবার(৩১ জানুয়ারি)গণমাধ্যমে এ প্রতিবেদন পাঠিয়েছে এমএসএফ। প্রতিষ্ঠানটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে মোট ৫৮টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আর আগের ডিসেম্বরে এমন ঘটনার সংখ্যা ছিল ৫৪। এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,এ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতায় মামলার সংখ্যা কমে গেলেও দুষ্কৃতকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাসহ নিজেদের অন্তর্দ্ব›দ্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিএনপির দলীয় কর্মীদের অর্ন্তদ্ব›দ্ব লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। যা জনমনে নিরাপত্তাহীনতা ও ভীতির সৃষ্টি করেছে।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী, রাজনৈতিক সহিংসতা নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন বিএনপির,তিনজন আওয়ামী লীগের, একজন জামায়াতের ও একজন নিহত ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। সহিংসতার ৫৮টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্ব›েদ্বর ৪১টি, আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্ব›দ্ব দুটি, বিএনপি-আওয়ামী লীগ ১২টি, বিএনপি-জামায়াত দুটি ও একটি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের মধ্যে।
এমএসএফের তথ্য অনুযায়ী,জানুয়ারি মাসে কারা হেফাজতে মোট আটজনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এ সংখ্যা ছিল ছয়। এ মাসে তিনজন কয়েদি ও পাঁচজন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন, নীলফামারী জেলা কারগোরে দুজন, গাজীপুর জেলা কারাগারে একজন,মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে একজন, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগারে একজন, রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার ও খুলনা জেলা কারাগারে একজন বন্দী মারা যান। এমএসএফ মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি বন্দীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এমএসএফ বলেছে, সাংবাদিকদের যেভাবে শারীরিক, মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, তা শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, বরং সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকার তাদের বক্তব্যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়ার কথা ব্যক্ত করেছে। এ মাসেও সাংবাদিকতার চিত্র উদ্বেগজনক। জানুয়ারিতে ১৩টি ঘটনায় ২১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হামলা, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া দুজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হন।
নানাভাবে আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ১৮ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছিত ও হুমকির শিকার হয়েছেন তিনজন সাংবাদিক। এ মাসের ১৩টি সাংবাদিক নির্যাতনসংক্রান্ত ঘটনার দুটিতে বিএনপি, একটিতে পুলিশ, একটিতে চেয়ারম্যান, একটিতে আনসার প্রহরী, একটিতে বালু উত্তোলনকারী, একটিতে চোরাকারবারি, একটিতে প্রভাবশালী, চারটিতে সন্ত্রাসী বাহিনী ও একটিতে সরকারি কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা ছিল।
এমএসএফের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন পর্যায়ে সনাতন ধর্মাবলম্বী নির্যাতনের চারটি এবং জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের পাঁচটি মোট ৯টি ঘটনা ঘটেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী নির্যাতনের চারটি ঘটনায় লালমনিরহাট,দিনাজপুর,গাজীপুর ও মানিকগঞ্জে মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর এবং স্বর্ণালংকার চুরির ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে ৩ জানুয়ারি জাতিগত সংখ্যালঘু নির্যাতনের ক্ষেত্রে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল নারীকে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের লোকজন জমি দখলকে কেন্দ্র করে মারধর, বাড়িতে আগুন ও যৌন হয়রানি করে। এদিকে আধিপত্য ও চাদাঁবাজির দখলদারিত্ব নিয়ে প্রতিদিনই কোন না কোন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে চলেছে।
আপনার মতামত লিখুন :