মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫, ১৮ চৈত্র ১৪৩১

দেশের সড়ক-নৌ-রেলপথে বাড়ির পথে জনস্রোত

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৩০, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

দেশের সড়ক-নৌ-রেলপথে বাড়ির পথে জনস্রোত

রাজধানী ছেড়ে বাড়ির পথে লাখো জনতা। ছিল স্বস্তির ঈদযাত্রা। এবার ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ হবে না, এটা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চিন্তা করা যেত না। কিন্তু এবার ঘটেছে ব্যতিক্রম সেই ঘটনা। সড়ক-নৌ ও রেলপথ কোথাও দুর্ভোগ নেই। লাখ লাখ মানুষ স্বস্তিতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা এবং দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বাড়ি ফিরেছেন নাড়ির টানে। অনেকে আজও ঢাকা থেকে ছেড়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সড়ক-নৌ-রেলপথে ঘরমুখো মানুষের প্রচুর চাপ, যেন জনস্রোত বইছে। 
শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন দূরপাল্লার বাসস্ট্যান্ড, কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। 
ঘরমুখো মানুষের অভিমত-উৎসবপাগল বাঙালিরা ঈদযাত্রায় স্বস্তি পাওয়ায় বর্তমান সরকারের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ঈদে ফেরার সময়েও সরকারের কার্যকর তদারকি থাকলেও কোনো ভোগান্তি হবে না। পাশাপাশি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টদের আরও আন্তরিক হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন যাত্রীরা।
শনিবার সরেজমিন দেখা গেছে, ঢাকার সায়েদাবাদ টার্মিনাল এলাকায় বাস কাউন্টার ও আশপাশের এলাকা ঘুরে সাধারণ সময়ের মতোই যাত্রীদের উপস্থিতি দেখা যায়। তবে কোথাও ভিড় দেখা যায়নি। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল যাত্রায় মহাসড়কে যানজট না থাকায় সায়েদাবাদ থেকে প্রায় প্রতিটি বাস নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের মনেও ছিল প্রশান্তি। একই চিত্র ছিল কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন এবং সদরঘাট লঞ্চস্টেশনে।
রাজধানী ছেড়ে উত্তর জনপদের উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী উঠাচ্ছে। এতে ওই সড়কে কিছুটা গাড়ির জট রয়েছে; এজন্য গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলাচল করছে। তবে কোথাও কোনো যানজট নেই। অন্যান্যবারের মতো নেই চিরচেনা ভোগান্তিও।এছাড়া পদ্মা সেতু, আরিচা-দৌলতদিয়া পয়েন্টেও নেই কোনো যানজট ও দুর্ভোগ। তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি মহাসড়কের গৌরীপুরে সড়কে গাড়ির জটলা ছিল, এতে প্রচন্ড গরমে শনিবার মানুষের খুবই কষ্ট হয়েছে। তবে কোথাও গাড়ি থেমে ছিল না। ধীরে ধীরে চলেছে।
সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত : এবারের ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহছানুল হক। শনিবার তিনি সায়েদাবাদ ও গাবতলী বাস টার্মিনাল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা জানান। 
সচিব বলেন, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তা, বিআরটির অফিসার, পুলিশ, শ্রমিক-মালিক সমিতির নেতাদের সঙ্গে বসে আমরা এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। এবারের ঈদযাত্রায় কোনো ধরনের চাঁদাবাজি থাকবে না, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা যাবে না, ছিনতাই-চুরি-ডাকাতি হবে না, মলম পার্টির উপদ্রব থাকবে না। সর্বোপরি মানুষ শান্তিতে ও নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরে যাবে এবং একইভাবে আসার সময় আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে কাজ করে যাব।তিনি আরও বলেন,বিআরটিএ প্রতিটি বাস টার্মিনালে বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ ও র‌্যাবের টিম সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। বাড়তি ভাড়া আদায়সহ যাত্রীদের সব সমস্যার সমাধানে অভিযোগ পাওয়ামাত্রই অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান। সরেজমিন দেখা গেছে, রাজধানীর কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের ভিড়, একে অপরের প্রতি সহানুভ‚তির দৃশ্য মন ভরিয়ে দিচ্ছিল। একেকটি প্ল্যাটফর্ম আর ট্রেনে লোকে লোকারণ্য, কিছুটা দুর্ভোগ থাকলেও সবার মুখেই ছিল হাসি। সময় অনুযায়ী চলছে প্রায় ৯৮ শতাংশ ট্রেন। ফলে স্টেশন দুটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রী জটলার দৃশ্য চোখে পড়ছে না। বিগত যে কোনো ঈদের চেয়ে দুর্ভোগ কম পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তাছাড়া শিডিউল অনুযায়ী ট্রেন চলায় যাত্রী তথা রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা বেশ খুশি। তবে ট্রেনের ছাদে যাত্রী চলায় অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এদিকে নকল টিকিটধারী যাত্রীদেরও প্রতিরোধের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। 
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি ট্রেনই সময় অনুযায়ী চলছিল। মোট ৭১টি ট্রেনের মধ্যে ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেন। ঈদ উপলক্ষ্যে কমলাপুর থেকে ৭১টি ট্রেন চলাচল করছে। ধূমকেতু ও সিল্কসিটি এক্সপ্রেস নামের দুটি ট্রেন ২৫ থেকে ৩৭ মিনিট বিলস্বে কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, এ দুটি ট্রেনের ছাদেও যাত্রীরা উঠে পড়ে। পরে বহু চেষ্টার পর কিছুসংখ্যক যাত্রী ছাদ থেকে নামানো সম্ভব হলেও, বহু যাত্রী ছাদে চড়েই কমলাপুর ছেড়েছেন।
কমলাপুর রেলস্টশনের কর্মকর্তা (স্টেশন মাস্টার) আনোয়ার হোসেন জানান, স্টেশনে যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় থাকলেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি। ৪৬টি আন্তঃনগর ট্রেনের মধ্যে ২টি ট্রেন সামান্য বিলম্বে ছেড়েছে, তাও ছাদ থেকে লোক নামাতে গিয়ে কিছুটা বিলম্বে ট্রেন দুটি ছেড়ে যায়।  
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের বাড়ি ফেরার প্রিয় স্থান সদরঘাট এখন যাত্রীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। টার্মিনালে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পবিত্র ঈদুল ফিতরে স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে নৌপথের যাত্রীরা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছে। শনিবার সদরঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সদরঘাট টার্মিনাল ও পন্টুন এলাকায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীঠাসা লঞ্চগুলো ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায়। ঈদের দুদিনের মতো বাকি থাকতেই ডেক ও কেবিনে পরিপূর্ণ যাত্রী থাকায় সন্তুষ্ট লঞ্চ মালিক ও শ্রমিকরা। পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোতে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন যাত্রীরা। আর বাইরে হাঁকডাক করে যাত্রীদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন লঞ্চের স্টাফরা।তবে গুলিস্তান থেকে সদরঘাটমুখো সড়কেও তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। ফলে ঘাটে আসতে চরম বেগ পেতে হয়েছে যাত্রীদের। অনেকেই পুরো রাস্তা হেঁটে এসেছেন ব্যাগ-ব্যাগেজ নিয়ে। বিশেষ করে ছোট শিশু ও বৃদ্ধদের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে বেশি। তবে ঈদ উপলক্ষ্যে বিশেষ লঞ্চের ব্যবস্থা থাকায় সহজেই টিকিট পেয়েছেন সবাই। 
বরিশালগামী যাত্রী জুয়েল হাওলাদার বলেন, গুলিস্তান থেকে সদরঘাট পর্যন্ত ব্যাপক যানজট। এটুকু আসতে দেড় ঘণ্টা সময় লেগেছে। রায় সাহেব বাজার থেকে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে এসেছি পরে। গাড়ির চাকা নড়ে না। তবে আগে কেবিন বুক করে রেখেছিলাম। তাই ভোগান্তি হয়নি। 
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌচলাচল কর্তৃপক্ষ (বিআইডবি¬উটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক মোবারক হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীদের সেবা ও নিরাপত্তার জন্য বিআইডবিøউটিএ কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোনো অবস্থাতেই লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও হয়রানি বরদাশত করা হবে না। নির্ধারিত সময়ে পন্টুন থেকে লঞ্চ ছাড়ছে। এ ব্যাপারে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে।সদরঘাট নৌ থানার ওসি মো. সোহাগ রানা জানান, যাত্রীর চাপ বেশি হলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর থাকায় কোনো বিশৃঙ্খলা ঘটেনি। সেনাবাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে। এছাড়া সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যরা ঘাট এলাকায় তৎপর রয়েছে। আশা করছি সবাই নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারবে।ধারনা করা হচ্ছে আজ রোববার রাজধানী অনেকটাই ফাকা হয়ে াাসবে। ঢাকার প্রতিটি এক্রিটপয়েন্ট বাড়ি ফেরা যাত্রীদেও চাপও অনেকটা কমে াাসবে। স্বস্তির ঈদযাত্রা এবার বাড়ি ফেরারদেরর স্বস্তি।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!