বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৫ কার্তিক ১৪৩১

হাইটেক পার্কে দুই অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৪, ১১:৩২ এএম

হাইটেক পার্কে দুই অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকার অনিয়ম

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ৫০ কোটি ৫৮ লাখ ২৭ হাজার টাকার অনিয়ম পেয়েছে মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক (সিএজি) কার্যালয়ের নিরীক্ষা বিভাগ। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ছয় খাতে এই আর্থিক অনিয়ম পাওয়া গেছে।

হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের হিসাব-সম্পর্কিত কমপ্লায়েন্স নিরীক্ষা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ওই টাকা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ৩ জুলাই জাতীয় সংসদে এই নিরীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। 
অবশ্য হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, অডিট আপত্তি হলেই যে অনিয়ম হয়েছে, এমন বলার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সারা দেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক, সফটওয়্যার পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করছে। এর মধ্যে ১৮টি পার্কে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলমান।

নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ছয় খাতে আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বড় অনিয়ম হয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষের নিজস্ব আয় বাজেটে অন্তর্ভুক্ত না করে অতিরিক্ত অনুদান গ্রহণ করায়। এতে আর্থিক ক্ষতি ৪৫ কোটি ৯২ লাখ টাকা। দ্বিতীয়ত, হাই-টেক পার্কগুলোতে ভাড়া ও লিজ গ্রহণকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া অনাদায়ি থাকায় আর্থিক ক্ষতি ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ ছাড়া পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কোম্পানির কাছ থেকে বিদ্যুৎ বিল আদায় না করে পার্ক কর্তৃপক্ষই পরিশোধ করায় ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিমা না করায় প্রিমিয়ামের ওপর ভ্যাট বাবদ রাজস্ব ক্ষতি ১০ লাখ ৯৮ হাজার টাকা। আউটসোর্সিং না করে দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে মজুরি পরিশোধ করায় অনিয়মিত ব্যয় ১১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। ব্যক্তিভিত্তিক পরামর্শক নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা না থাকলেও নিয়োগ দেওয়ায় ২৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরীক্ষাকালে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভাড়া/লিজ গ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা এবং প্রাপ্ত আয় বিবরণী পর্যালোচনা করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জনতা টাওয়ার টেকনোলজির কাছে অনাদায়ি ভাড়া ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা এবং গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির ডেটাসফট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড অ্যাসেম্বলিং ইনক লিমিটেডের কাছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার টাকা এবং এসবি টেল এন্টারপ্রাইজ লিমিটেডের কাছে অনাদায়ি ভাড়া ১৪ লাখ ৩ হাজার টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটির ২৬টি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনাদায়ি ভাড়া ২ কোটি ১৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা। অথচ পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিপত্রের শর্তে বলা আছে, প্রতিবছরের অগ্রিম ভাড়া জানুয়ারির প্রথম ১০ দিনের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের দেওয়া জবাব নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয়। ওই দুই অর্থবছরে আর্থিক ক্ষতির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশ করেছে নিরীক্ষা বিভাগ।

বক্তব্য জানতে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। জনসংযোগ কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার মাধ্যমে পাঠানো জবাবে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়, অডিট আপত্তি, জবাব প্রদান এবং অডিট নিষ্পত্তি একটি চলমান প্রক্রিয়া। কোনো বিষয়ে অডিট আপত্তি হলেই যে সেখানে অনিয়ম হয়েছে, এমন বলার সুযোগ নেই। অডিট আপত্তি হলে কর্তৃপক্ষ অডিট বিভাগের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো স্পষ্টীকরণ করে পত্র যোগাযোগ অব্যাহত রাখে। পার্ক কর্তৃপক্ষের জবাব নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয় মর্মে যা বলা হচ্ছে, সেটাও সঠিক নয়।  

প্রতিবেদনে নিরীক্ষা আপত্তি ওঠা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুপারিশের বিষয়ে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বলেছে, হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হওয়ায় নিজস্ব আয়ের অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার সুযোগ নেই। আপত্তিকৃত নিজস্ব আয়ের অর্থ ইতিমধ্যে বাজেটভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া যে অংশ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া প্রয়োজন (যেমন ভ্যাট), তা আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!