শেখ হাসিনাকে বেয়াইন ডেকেই মাফিয়া

শেখ হাসিনাকে বেয়াইন ডেকেই ব্যাংক সেক্টরের মাফিয়া হয়ে উঠেন নাসার নজরুল। আর্থিক খাতের নানা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির টাকায় দেশ-বিদেশে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ। মাঝেমধ্যে চাঁদার একটি অংশ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়ার নাম করে শেখ হাসিনার হাতে দেওয়ার অনুষ্ঠান করে ছবি তুলে সুচুর নজরুল তা প্রচার চালাতেন। এরজন্য পিএমওর কয়েকজন ফটোগ্রাফার রেডি থাকতো।
এই নাসার নজরুল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বোন (বেয়াইন)। গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে তাকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানো তার হাস্যোজ্জ্বল ছবি। এ সুবাদে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির চেয়ারম্যান পদ পেয়ে যান। টানা প্রায় ১৫ বছর ছিলেন এই পদে। এই পদে যাওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রভাবশালী মহলের আশীর্বাদে তিনি দেশের ব্যাংক খাতের অন্যতম মাফিয়া বনে যান। আর্থিক খাতের নানা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজির টাকায় দেশ-বিদেশে গড়ে তোলেন অঢেল সম্পদ।
বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের একাধিক দেশে রয়েছে তার বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ। সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের পর দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে নিজেকে একক ক্ষমতাধর বলে জানান দেন নজরুল মজুমদার। এ সময় তার বড় ছেলে ওয়ালিদ ইবনে ইসলামের সঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসের ভায়রার মেয়ের বিয়ে হয়। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে শেখ হাসিনাকে তিনি বোন (বেয়াইন) ডাকা শুরু করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুবাদে অংশীদারি ব্যবসা হলেও ক্ষমতার দাপটে নাসা গ্রæপে তিনি একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করেন। এক পর্যায়ে কোম্পানির ২০ শতাংশ শেয়ারহোল্ডার ও স্পন্সর পরিচালক আলতাফ হোসেনকে বেআইনিভাবে বের করে দেয়া হয়। পরে একাধিক সাজানো মামলার পর গোয়েন্দা সংস্থাসহ প্রশাসন লেলিয়ে দেয়া হয় তার (আলতাফ হোসেন) বিরুদ্ধে। কিন্তু এতকিছু সত্ত্বেও দমেননি আলতাফ। মালিকানা ফেরত পেতে তিনি আইনি লড়াই শুরু করেন। পাশাপাশি মজুমদারের অর্থ পাচারের অকাট্য প্রমাণসহ নানা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে চিঠি দেন।
সূত্র জানায়, লন্ডন এবং হংকং ছাড়াও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মজুমদারের বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। সেখানে রিয়েল এস্টেট খাতে একাধিক কোম্পানি খুলে তিনি ব্যবসা করছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের দিকে তিনি সৌদি আরবের কৃষি খাতে বিনিয়োগ করেন। সৌদির একাধিক খেজুর বাগানে বিনিয়োগ রয়েছে তার। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং কাতারের রাজধানী দোহায় তার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। সিআইডি জানায়, ব্যক্তিগত ক্ষমতা ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে নাসা গ্রæপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ৪টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়ে শত শত কোটি টাকা দুবাই, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাচারের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।