মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

ফাপরবাজি আলা নাসিমও ছিলেন মহাচোর

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৬, ২০২৫, ০১:৩৭ পিএম

ফাপরবাজি আলা নাসিমও ছিলেন মহাচোর

স্বৈরাচারের আশ্রয়ে আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমও হয়ে উঠেন মহাচোর। মানুষকে ফাপরবাজি দিয়ে লুটে নিয়েছেন বিপুল পরিমান অর্থ। একসময় ছিলেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার প্রটোকলকর্মকর্তা। আর এই পদটাই তার জীবনে আলাদিনের চেরাগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। ২০০৯ সালের পর আওয়ামী রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদপদবি না থাকার পরও নাসিমের হাতে টাকা আসতে থাকে স্রোতের মতো। প্রশাসনের বদলি, পদায়ন থেকে শুরু বিনা টেন্ডারে কাজ পাইয়ে দেয়া,বিদ্যুৎ কোম্পানির লাইসেন্স করে দেয়া কাজ করে কামিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।  নাসিমকে আগে সবাই শেখ হাসিনার ‘প্রটোকল অফিসার’ হিসেবেই চিনতেন। এর বাইরে হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। শেখ রেহানার অবৈধ টাকার সংগ্রাহকও বলা হতো নাসিমকে। আর এই অবৈধ টাকার জোরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগিয়ে নেন ফেনী-১ আসনের নমিনেশন। বনে যান বিনা ভোটের এমপি।পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের আমলে যেসব খাতে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম। এর নেতৃত্বে যিনি ছিলেন তিনি সব সময়ই থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনো ধরনের বিনিয়োগ ছাড়াই শুধু হাসিনা ও রেহানার নাম ভাঙিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক বনে যান তিনি। পতিত স্বৈরাচার হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় ফাপরবাজি করে বিনা পুজিতে ব্যবসায়িক পার্টনার হয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের প্রকল্প থেকে বিদেশে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। ডাচ-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। শুধু বিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে শত শত কোটি টাকা লোন নিয়ে বিদেশে পাচার করেন তিনি।জালিয়াতি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ঋণ নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সংবাদ মাধ্যমে ডাচ্-বাংলা পাওয়ার অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেডের ৩০ শতাংশ শেয়ারের মালিক বলা হলেও এস আলমের মালিকানাধীন এসএস পাওয়ার ওয়ান লিমিটেডের মালিকানায়ও নাসিম রয়েছেন। প্রতিমাসে ব্যাংকে এসএস পাওয়ার থেকে মোটা অংকের চেক নাসিমের এবং তার ওয়াইফ প্রফেসর ডা. জাহানারা আরজু এর নামে জমা হতো। এমন একটি চেকের কপি আমাদের হাতে এসেছে।হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন নাসিম দেশটিকে বানিয়েছিলেন অনিয়ম ও দুর্নীতির ‘স্বর্গরাজ্য’। মিস্টার টোয়েন্টি পার্সেন্ট হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন দেশব্যাপী। তাকে ২০ পার্সেন্ট কমিশন না দিলে কোনো টেন্ডারই পেতো না ব্যবসায়ীরা। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগেই তিনি বুঝে নিতেন তার কমিশনের টাকা। বিভিন্ন সময় দুর্নীতির কারণে অনেকেই ধরা পড়লেও সব সময় অন্তরালে থেকে যেতেন দুর্নীতির বরপুত্র খ্যাত আলাউদ্দিন নাসিম। শেখ হাসিনার ম্যানেজার হিসেবে ছিলেন বহাল তবিয়তে। বিগত সরকারের আমলে প্রভাবশালী এই সাবেক এমপিকে ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে কোনো রকম টেন্ডার বা প্রতিযোগিতা ছাড়াই সরকারের কাছ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বড় বড় প্রকল্প বাগিয়ে নেন এক আলোচিত ব্যবসায়ী। তাকে সামনে রেখেই চালানো হয় লুটপাট।জুলাই-আগস্টে বৈষাম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ে ফেনীর মহিপালে তার নির্দেশে গুলি করে ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। তবুও দৃশ্যমান কোনো অ্যাকশন নেই তার বিরুদ্ধে। মানবতা বিরোধী অপরাধ ট্রাইবুনালে অনেকের নামে মামলা হলেও এখনও সেখানে আলাউদ্দিন নাসিমের নামে কোনো মামলা হয়নি। হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার হিসেবে দেশের বাইরে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করলেও তার বিরুদ্ধে এখনো মামলা হয়নি দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকে।
মাফিয়াদের গডফাদার আলাউদ্দিন নাসিম প্রায় সময়ই দম্ভ করে বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে কেউ তার কিছু করতে পারবে না। কারণ তার নিয়োগ দেওয়া অনেকেই এখন এই সরকারের ভালো পজিশনে আছে। এখন প্রশ্ন উঠেছে দুর্নীতির বরপুত্র আলাউদ্দিন নাসিমের খুঁটির জোর কোথায়? কারা তাকে রক্ষা করছে? এখন কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না? এদিকে, ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র করে চলছে ফ্যাসিস্ট মাদক সম্রাট আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। অবৈধভাবে ভারতের কলকাতা পালিয়ে পতিত হাসিনার নিয়োগপ্রাপ্ত প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছেন নাসিম। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে পাচার করা হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে ভারতের ভুঁইফোড় মিডিয়ার গুজব প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে সারাবিশ্বের সামনে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করছেন তিনি।  আলাউদ্দিন নাসিমের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের গুজব সেল। কারণ, হাসিনা ও রেহানার ফান্ড ম্যানেজার আলাউদ্দিন নাসিম। দুই বোনের চোরাই টাকা তার জিম্মায় রয়েছে। আর সেই অর্থ ব্যয় করছে ড. ইউনূস সরকারকে ব্যর্থ করার মিশনে। কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে ফান্ডিং করছেন দুর্নীতিবাজ আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। বাংলাদেশ থেকে যারা পালিয়ে ভারতে অবস্থান করছেন তাদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় তদারকি করছেন দুর্নীতির বরপুত্র ও দেশের অন্যতম মাদক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন নাসিম।তবে, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করায় ২ অক্টোবর তার বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। ফেনীর সাবেক এমপি আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমকে ও তাদের পরিবারের বিরুদ্ধে বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন নোয়াখালী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা ফেনী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমের সম্পদের অনুসন্ধান করছি। তার অনেক সম্পদের তথ্য পাচ্ছি। আমরা তার বিষয়ে সার্বিকভাবে খোঁজখবর নিচ্ছি। দ্রæত সময়ের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করবো।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!