বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

আছাদের ব্রিফকেসে ১০ কোটি টাকার এফডিআরের নথি

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৪, ০৯:৩১ এএম

আছাদের ব্রিফকেসে ১০ কোটি টাকার এফডিআরের নথি

ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের(ডিএমপি)সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার কাছে থাকা ব্রিফকেস থেখে ১০ কোটি টাকার এফডিআরের নথি পেয়েছে আইনশৃংলাবাহিনীর তদন্তকারিরা। ডিএমপির এই সাবেক কমিশনাকে ক্যাসিনো আছাদ হিসাবে চিনেন মতিঝিলের ক্লাবপাড়ার ক্যাসিনোরা। তবে এতো অর্থসম্পদ তিনি করেছেন তা দেখে পুলিশের মধ্যে সমালোচনার ঝড় বইয়ে চলছে। গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট কী নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক এই কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। মিয়া সাহেবকে গত ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর কালো রঙের ক্লুগার ব্র্যান্ডের প্রাইভেট কার থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব। সুত্র জানায় ঐ গাড়িতে থাকা একটি ব্রিফকেসের সন্ধান মিলে। ব্রিফকেসটি জব্দ করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেওয়া হয়। শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ব্রিফকেসটি খোলা হয়। ব্রিফকেসে বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, হিসাব বিবরণী ও এফডিআর নথি পায় ডিবি। এক এফডিআরের নথি দেখে ডিবির কর্মকর্তারা চমকে যায়। বিভিন্ন ব্যাংকের অন্তত ১০ কোটি টাকার এফডিআরের নথি সেখানে পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে ডিবির একাধিক কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারের পর সাবেক কমিশনারকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে এফডিআরের নথিসহ তার বিভিন্ন সম্পদের তথ্য দিয়েছেন।
ডিবির সুত্রগুলো জানিয়েছেন,এফডিআরের নথিতে সাউথইস্ট ব্যাংকে ২৫টি এফডিআর, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ছয়টি এফডিআর, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে দুটি এবং পূবালী ব্যাংক ও ঢাকা ব্যাংকে একটি করে এফডিআর রয়েছে। এসব এফডিআর বিভিন্ন জনের নামে করা হয়েছে। যাদের নামে এফডিআর করা হয়েছে তাদের কেউই সাবেক কমিশনারের আত্মীয়স্বজন নয়। সাউথইস্ট ব্যাংকে সুরমা এন্টারপ্রাইজের নামে পাঁচটি এফডিআর করা হয়েছে। এছাড়া মেহেদি হাসান, রাসেল, আকাশ আহমেদ, আনোয়ারুল হক, দেলোয়ারা তাহেরা হ্যাপি, শারমিন জাহান, রাসেদুল হকসহ ১০ জনের নামে এফডিআর করা হয়েছে। একেকটি এফডিআরের অর্থের পরিমাণ গড়ে ১০ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মার্কেন্টাইল ব্যাংক রামপুরা শাখায় এস এম নিয়াজন উদ্দিনের নামে ছয়টি এফডিআর করা হয়েছে।
ডিএমপির সাবেক এই কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার সাত দিনের রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদে ১৭ সেপ্টেম্বর ছিল পঞ্চম দিন। জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক এই কমিশনার তার ব্যক্তি জীবনে অন্তত কয়েক শ কোটি টাকার সম্পদ থাকার তথ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে ৫৫/১, সিদ্ধেশ্বরী,রুপায়ন স্বপ্ন নিলয়ে ৩ হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ধানমন্ডির ১২/এ নম্বর রোডের ৬৯ নম্বর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাট, ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে একটি ফ্ল্যাট, নিকুঞ্জ-১-এর ৮/এ  রোডের ৬ নম্বর বাড়ি, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল বøকের ১ নম্বর রোডের ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার ওপর ৬ তলা বাড়ি, পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি নম্বর রোডে ১০ কাঠা জমি, আফতাবনগরে ৩ নম্বর  সেক্টরে ২১ কাঠা জমি, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদখোলা মৌজায় ৬৭ শতাংশ জমি, জোয়ার সাহারা মৌজায় ১৫ কাঠা জমি ও গাজীপুরের চাঁদখোলা  মৌজায় ৩১ শতক জমি রয়েছে। এসব সম্পদ তিনি ও তার স্ত্রী আফরোজা জামান, ছেলে, শ্যালক, শ্যালিকা ও অন্যান্য নিকট আত্মীয়দের নামে দলিল করেছেন।
জিজ্ঞাসাবাদে আছাদুজ্জামান মিয়ার পরিবারের সদস্যদের মালিকানার দুটি কোম্পানির তথ্য পেয়েছে ডিবি। এর মধ্যে একটি হলো মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড। এর চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামান। আছাদুজ্জামান ডিএমপি কমিশনার থাকাকালীন রাজধানীর রুট পারমিট কমিটির প্রধান ছিলেন। ঐ সময় মৌমিতা পরিবহনকে রুট পারমিট দেওয়া হয়। মৌমিতা ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান হারিসুর রহমান সোহান হলেন আছাদুজ্জামানের শ্যালক। শেপিয়ার্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেড নামে আরেকটি কোম্পানির চেয়ারম্যান আফরোজা জামান।এই কোম্পানির পরিচালক আছাদুজ্জামানের বড় ছেলে আসিফ শাহাদাত। খুলনায় বিএল কলেজে জিওগ্রাফিতে লেখাপড়া করা আসাদ মিয়া পুলিশের চাকরিটা যেনো আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছিলেন। জানা গেড়ছে যে সময়ে মতিঝিল পাড়ায় রমরমা ক্যাসিনো চলত সেসময়ে ডিএমপির কমিশনার হয়েও তিনি এসব জুয়া খেলার তথ্য জানতেন না বলে জানিয়েছিলেন। এখন এফডিআরের তথ্যসহ নানারকম অবৈধ সম্পদের পাহাড় দেখে মনে হচ্ছে ঘুষ-দুর্নীতির গডফাদার মাফিয়া ছিলেন বলে একাধিক অপরাধ বিশেষজ্ঞরা সেটাই মনে করেন।এখন তিনি সুফি সেজেছেন। পুলিশের এধরনের মাফিয়া দুর্নীতিবাজদের সাজা না হলে দুর্নীতি ও ঘুষের হাঠ বন্ধ হবে না।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!