শেখ হাসিনার পিয়নের বাড়িতে শুধু একটি গেটেই খরচা ৫ কোটি টাকা। স্থানীয়দের মতে,ওই বাড়ির গেট তৈরিতে জাহাঙ্গীর ব্যয় হয়েছে অন্তত ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া গ্রামের বাড়িতে বিপুল পরিমাণ কৃষিজমি রয়েছে তার। ঢাকায় রয়েছে তার ও পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পাহাড়। স্থানীয়রা আরও জানান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীর। দুহাত ভরে কামিয়ে নেন বিপুল অর্থ। রাজপ্রাসাদ তৈরি করে ছাড়েন টিনের ঘর। চারতলা বাড়িটির সামনে রয়েছে নৌকার আদলে তৈরি বিশাল ফটক।
জাহাঙ্গীর আলম নোয়াখালীর চাটখিল থানার খিলপাড়া ইউনিয়নে নাহারখিল গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবা ছিলেন কেরানি। টিনের ঘরে ছিল তাদের বসবাস।
আওয়ামী লীগ আমলে দুর্নীতি করে গড়েন এই সম্পদের পাহাড়। এ নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা যে দুজন পিয়নকে বহিষ্কার করা হয় তাদের একজন ৪০০ কোটি টাকার মালিক নোয়াখালীর জাহাঙ্গীর। অপরজন কুমিল্লার আব্দুল মান্নান। বহিষ্কারের পর ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়। জাহাঙ্গীর বিগত নির্বাচনে নোয়াখালী-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করেন। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে এলাকায় যেতেন হেলিকপ্টারে।
অথচ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার ২২ দিন আগে সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন,তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলেন না। আমি তার কার্ড সিজ করেছি, চাকরি থেকে বের করে দিয়েছি। যা করার আমি ব্যবস্থা নিয়েছি।’
জানা যায়, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর পিওন হিসেবে যোগ দেয়ার পর বদলে যায় জাহাঙ্গীরের জীবন। নিজেকে পরিচয় দিতে থাকেন শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। গণভবনে থাকার সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের চেয়েও হয়ে ওঠেন ক্ষমতাবান। করেন বেপরোয়া তদবির বাণিজ্য। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকেও হাতিয়ে নেন বিপুল অর্থ। নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন বিশাল প্রাসাদ ও খামার।
বিপুল অবৈধ অর্থের মালিক হওয়ার পাশাপাশি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদও বাগিয়ে নেন জাহাঙ্গীর। এক সময় বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত ভাই ও ভাগিনাকেও আনেন জেলা কমিটিতে।
স্থানীয়রা জানান, জাহাঙ্গীর মাঝেমধ্যে আসতেন কালো রঙের একটি গাড়ি নিয়ে। তিনি নিজেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পিএস পরিচয় দিতেন। শেখ হাসিনার আমলেই তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছেন। যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিক সরন্মণনের মাধ্যমে দেশবাসিকে জানিয়েছেন।
চাটখিল উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইউসুফ দফাদার বলেন, জাহাঙ্গীরের আত্মীয় এলাকার আলমগীর করতেন বিএনপি। পরে জাহাঙ্গীর তাকে আওয়ামী লীগ থেকে নমিনেশন দিয়ে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় এলাকার চেয়ারম্যান বানিয়ে দেন। তার ভাগিনাকে তিনি জেলা পরিষদের সদস্য করেছেন।’
এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নোয়াখালীর এক আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলে জাহাঙ্গীরের অবৈধ সম্পদের বিষয়টি সামনে চলে আসে। এরপরই প্রধানমন্ত্রীর পিওনের চাকরি হারান। স্থানীয়দের অভিযোগ, গ্রামের বাড়ি ও ঢাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, সব প্রতিষ্ঠান থেকে জাহাঙ্গীর বা তার লোক চাঁদা নিতেন। চাটখিল ও সোনাইমুড়িতে জাহাঙ্গীরের কারণে একটি সন্ত্রাসী জনপদে পরিণত হয়েছে। তিনি সোনাইমুড়িতে অপরাজনৈতিক করার চেষ্টা করেছেন। চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা শাকিল বলেন,এখানে তো এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার সুযোগ নেই। জাহাঙ্গীর এখানে অনেক সম্পদের মালিক হয়েছেন।’
জাহাঙ্গীর কীভাবে এতো অর্থ-বিত্তের মালিক হলেন,তা অনুসন্ধান করছে দুদক। শিগগিরই প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের প্রশ্ন হচ্ছে আওয়ামী লীগে এমন আজব চেরাগবাতি কতো জনের হাতে ছিল? দুর্নীতিবাজদেও সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হোক।
আপনার মতামত লিখুন :