পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রেলের মাফিয়া হিসাবে খ্যাত রেল খাতের অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাগিয়ে নেয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচারের অনিয়মের নথি খুঁজতে রেল ভবনে অভিযানে পরিচালনা করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে সহকারী পরিচালক রাজু আহমেদ, স্বপন কুমার রায়,উপ-সহকারী পরিচালক মিনু আক্তার সুমি ও আনিসুর রহমান রাসেলের সমন্বয়ে টিম এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করছে। গত ১১ মার্চ রেলের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের তথ্য দিয়ে ‘রেলের মাফিয়া’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক মানবজমিন। ওই সংবাদের পরে আজ দুদক এই অভিযান পরিচালনা করেন বলে দুদকের একটি সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে। এছাড়া সংবাদ প্রকাশের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গ্রæপে প্রতিবেদক জুলকারনাইন সায়ের ও শরিফ রুবেলকে নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালায় ম্যাক্সের কর্মীরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আজমের সহায়তায় রাতারাতি বদলে যায় ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। তাদের আশীর্বাদ নিয়ে রেলের নির্মাণ খাতে অন্তত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাগিয়ে নিয়েছে অখ্যাত এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রকল্পের বরাদ্দের একটা বড় অংশ লুটপাট হয়েছে সিন্ডিকেট করে। রেল প্রকল্পের টেন্ডার ডন খ্যাত ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড খোঁজ মিলেছে তাদের নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির চিত্র। শেখ হাসিনা সরকারের নির্মাণ খাতের মাফিয়া খ্যাত দুই প্রভাবশালী নেতার সরাসরি হস্তক্ষেপে রেলের একের পর এক বড় বড় প্রকল্পের কাজ পেতে থাকে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। এই দুই নেতার প্রভাব খাটিয়ে রেলের সব প্রকল্প একাই গিলে খেয়েছে গ্রæপটি। শুধু রেল নয়, গত ১৫ বছরে উন্নয়ন খাতের অন্তত ৬০ হাজার কোটি টাকার কাজ করেছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। যা দেশের উন্নয়ন খাতের এক নজিরবিহীন ইতিহাস। হাসিনা সরকার পতনের পরে এখনো রেল সিন্ডিকেট ধরে রেখেছে রেলের কালো বিড়াল খ্যাত ম্যাক্স গ্রæপ। চিনকি আস্তানার পরে কাশিয়ানি-গোপালগঞ্জ রেল প্রকল্পের একাধিক অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের কাজ পায় ম্যাক্স। বর্তমানে রেলের চলমান আরও বড় দুটি প্রকল্পেও কাজ করছে এই গ্রæপটি। এখন প্রশ্ন থেকে যায়, কীভাবে পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই ২০৯ কোটি টাকার চিনকি আস্তানা ক্ষয়প্রাপ্ত রেল প্রকল্প, ২০১১ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার লাকসাম-চিনকি আস্তানা রেল প্রকল্প, ২০১৫ সালে ৬ হাজার কোটি টাকার আখাউড়া লাকসাম রেলপথ প্রকল্প, ২০১৬ সালে ১৮ হাজার কোটি টাকার দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ পেলো ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার। ৪ নম্বর গ্রেডের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হয়েও তারা কীভাবে রেলের এতবড় সব প্রকল্প বাগিয়ে নিলো? এটাই বড় প্রশ্ন।উল্লেখ্য- গত ১৬ বছরে কর্মরত রেলের ডিজি এডিজিসহ ইন্জিনিয়ারিং ডিভিশনে কর্মরত থেকে সখনই অবসর নিয়ে নিয়েছেন তখনই এই ম্যাক্্র ঠিকাদার প্রতিষ্টানে যোগ দিয়েছেন। প্রতিষ্টান পরিণত হয় বিড়াট চোর চক্রের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের সাবেক একাধিক কমৃকর্তা জানান রেলের উন্নয়ন প্রকল্পগুলো দেশী বিদেশী অর্থায়নে রেলের নতুন-পুরাতন সব প্রকল্পই তাদের নজরদারীতে থাকে। এবং কাজগুলো সুকৌশলে টেন্ডারে নানা শর্ত জুড়ে দিয়ে নিজেদের মত করে নিয়ে কাজগুলো নিয়ে নেয়। এই ঠিকাদার প্রতিষ্টানের গত ১৫ বছরের কাজের সব রের্কড পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা বেড়িয়ে আসবে। আর এসব অপকর্মের সাথে সরাসরি যুক্ত থেকে কমিশন বাণিজ্যে হাতিয়েছেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সুজনরা।
আপনার মতামত লিখুন :