সোমবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৪, ২৬ কার্তিক ১৪৩১

ঢাবিতে ভবঘুর হত্যায় গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা যা বললো

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪, ০৪:২২ পিএম

ঢাবিতে ভবঘুর হত্যায় গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীরা যা বললো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল হোসেন (৩৫) নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ৬ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করে শাহবাগ থানা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা  বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে। বর্তমানে সে তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার হওয়া ছয় শিক্ষার্থী হলেন-পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জালাল আহমেদ, মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সুমন, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মুত্তাকীন সাকিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের আল হোসেন সাজ্জাদ,  গণিত বিভাগের আহসান উল্লাহ ও ওয়াজিবুল আলম।  
শাহবাগ থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব কে দিয়েছে, তোফাজ্জলকে প্রথমে কারা ধরে নিয়ে এসেছিল এবং হত্যাকান্ডে আরো কে কে জড়িত রয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকান্ডের মোটিভ কী ছিল তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। 
শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.খালিদ মনসুর বলেন, গ্রেপ্তার ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হযেেছ। তারা আমাদেরকে বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা।
গ্রেপ্তার ছয় জনকে কখন আদালত তোলা হবে এবং কত দিন রিমান্ড চাওয়া হবে জানতে চাইলে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহান বলেন, দুপুরের পর তাদের আদালতে তোলা হবে। তবে আমরা রিমান্ড আবেদন করব নাকি গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেবেন এ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত নয়। আমরা দুই ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে বলা যাবে। 
কী হয়েছিল বুধবার রাতে: এখন পর্যন্ত জানা যাচ্ছে, বুধবার সন্ধ্যায় তোফাজ্জল ফজলুল হক মুসলিম হলে ঢুকলে কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে চোর সন্দেহে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তিনি বলেন, যদি তাকে কিছু খেতে দেয়া হয়, তাহলে তিনি আসল চোরদের কথা বলবেন। শিক্ষার্থীরা তাকে ভাত খাওয়ান। কিন্তু তিনি চোরদের বিষয়ে তথ্য দিতে পারেননি। এরপর ওই শিক্ষার্থীরা দুই ঘণ্টা তাকে মারধর করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।  বিষয়টি প্রক্টরিয়াল টিমকে জানানো হলে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে গুরুতর আহত তোফাজ্জলকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 
পরিবারের কাছে চাওয়া হয় ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা: তোফাজ্জলের বড় ভাইয়ের স্ত্রী শরীফা আক্তার জানিয়েছেন, তোফাজ্জলকে পিটিয়ে হত্যার আগে তাদের কাছে ফোন করে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়েছিল। 
শরীফা আক্তার বলেন, বুধবার আনুমানিক রাত ১০টার পরে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে তোফাজ্জল আমাকে ফোন করে বলেন, ভাবি আমাকে মোবাইল চুরির দায়ে হলে আটকে রেখে আমার কাছে টাকা চায়। এ কথা বলার পরেই ফোন কেটে দেয়। পরবর্তীতে ওই নাম্বার থেকে আবার কল দিয়ে আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, আমি তোফাজ্জলের কে হই। পরিচয় বলার পরে তারা আমাকে বলেন, তোফাজ্জলকে মোবাইল চুরির দায়ে আটকে রেখেছি ওকে আপনারা ছাড়িয়ে নিয়ে যান। এ সময় আমি তাদের বলি, ভাই ওর মাথায় সমস্যা আছে, ও আসলে চোর না। তোফাজ্জল একজন ভালো ছাত্র, অনার্স- মাস্টার্স শেষ করা ছাত্র, ওকে আপনারা ছেড়ে দিন। পরে তারা আমাকে বলেন, আপনার কথা রেকর্ড করা হচ্ছে। আপনি দুই লাখ টাকা পাঠান, না হলে তোফাজ্জেলকে আমরা মেরে ফেলবো। তখন তাদের আমি বলি, আমি মহিলা মানুষ, কীভাবে কী করব? আমি তো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। পরে তোফাজ্জলের মামা-চাচা যারা ঢাকায় আছেন তাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে দেই। 
তিনি আরো বলেন, আমার কাছে টাকা দাবি করলে আমার অভিভাবক যারা আছেন তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলি। এ সময় তারা ফোনে আমাকে বলেন, অভিভাবকরা যদি ফোন না ধরে তাহলে কিন্তু খবর আছে। পরে আমি আতঙ্কিত হয়ে চাচাতো ভাশুর এবং এলাকার চৌকিদারকে বিষয়টি জানালে তারা বলেন, তোফাজ্জল হয়তো কোনো পাগলামি করেছে, আপনি ফোন বন্ধ করে ঘুমান। এ ছাড়া তারা তোফাজ্জলের এক মামার কাছে ফোন দিয়ে আরো ৩৫ হাজার টাকা দাবি করা হয়। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে মোবাইল খুললে খবর পাই তোফাজ্জলকে মেরে ফেলা হয়েছে। 
মোবাইল ফোন চুরির অপবাদে পিটুনিতে নিহত তোফাজ্জল বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়নের তালুকের চরদুয়ানী নামক এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে। এছাড়া তিনি ওই ইউনিয়নের সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। তোফাজ্জল বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন।
তোফাজ্জল আগে থেকেই মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ২০১১ সালে বাবা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ও ২০১৪ সালে তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি বড় ভাই নাসির উদ্দিনের বাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের পর থেকেই তোফাজ্জল মানসিকভাবে অসুস্থ হতে শুরু করেন। এ সময় তাকে ৩ মাস রিহ্যাবেও রাখা হয়েছিল। এরপর তোফাজ্জল কিছুটা সুস্থ হলে ২০২৩ সালে তার বড় ভাই নাসির উদ্দিনও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। অভিভাবকহীন হয়ে পড়েন তিনি। এতে তোফাজ্জল আবারো মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বিভিন্ন ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ করতে শুরু করেন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!