বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১

সরকারী জমি দখল করে ডাংই নির্মাণ করেছে টিআরইউ,কেমিক্যালযুক্ত পানি ফেলছে শীতলক্ষ্যা নদী ও জলাশয়ে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৪, ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

সরকারী জমি দখল করে ডাংই নির্মাণ করেছে টিআরইউ,কেমিক্যালযুক্ত  পানি ফেলছে শীতলক্ষ্যা নদী ও  জলাশয়ে

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি: নারাণয়গঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়া বিসিক জামদানি পল্লির পাশের সরকারি জমি ও খেলার মাঠ দখল করে নিটিং ডায়িং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা স্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ উঠেছে, কারখানাটি এর থেকে নির্গত কেমিক্যালযুক্ত রঙিন ও গরম পানি ফেলছে শীতলক্ষ্যা নদী, জলাশয়, পতিত জমিতে, বিসিক জামদানি পল্লিসহ আশপাশের এলাকায়। এর ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) নোয়াপাড়া জামদানি পল্লির পূর্বপাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৫টি আলাদা দাগে ১২ বিঘা ৭ শতাংশ জমি রয়েছে। ১৯৯৬ সালে নোয়াপাড়া গ্রামের হাজী আলাউদ্দিন পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে লিজ নেন। পরে রূপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর থেকে লিখিত অনুমতি পেলে শতাধিক পরিবারের যুবকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি সমবায় ভিত্তিতে মাছের খামার গড়ে তোলেন। ২০১১ সাল পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখেন। এর পর থেকে লিজ নবায়নের জন্য হাজী আলাউদ্দিন দৌড়ঝাঁপ করলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড লিজ দিতে গড়িমসি করে।
উপায়ন্তর না দেখে ২০১২ সালে তিনি আদালতে মামলা করেন। পরে ওই জমিতে খেলার মাঠ ও জামদানি পল্লীর পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে মর্মে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রস্তাবে হাজী আলাউদ্দিন আদালতের মামলা তুলে নেন। 
সংসদ সদস্যের প্রস্তাব অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করে সেখানে খেলার মাঠ গড়ে তোলা হয়। এরপর থেকে এলাকার শিশু-কিশোররা এ মাঠে খেলাধুলা করছিল। পরে ২০২৩ সালে হাজী আলাউদ্দীন মারা গেলে ইউনিফিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে ওই খেলার মাঠে একটি নিটিং ডায়িং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং কারখানা গড়ে উঠে। পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে ট্রুফ্রেব্রিক্স লিমিটেড ও ২২৪ নিটিং ডায়িং প্রিন্টিং ও ফিনিশিং নামক প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সে কারখানার কেমিক্যাল মিশ্রিত রঙিন গরম পানি শীতলক্ষ্যা নদী, জলাশয়, পতিত জমিতে, বিসিক জামদানি পল্লীসহ আশপাশের এলাকায় ফেলা হচ্ছে। যে কারণে এলাকার মানুষ পড়েছেন মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। 
তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী এলাকাবাসীর পক্ষে জলাশয় ভরাট ও সরকারি জমিতে কারখানা স্থাপনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। পরে গত ২৮ সেপ্টেম্বর হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে আলী আকবর বাদী হয়ে দুদক বরাবর আবেদন করেন।
নোয়াপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী স্বপন মিয়া বলেন, জায়গাটি খালি থাকাকালে এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করেছে। বর্তমানে ডাইং কারখানার নির্গত বর্জ্যে পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। 
মহিলা কাউন্সিলা জোছনা বলেন,  ইটিপি প্ল্যান থাকলেও   টাকা বাঁচানো জন্য প্রতিদিন রাতে  কারখানা নির্গত বর্জ্যে গরম পানি ছেড়ে দেয়।  আমি ও  আমার প্রতিবেশিরা খুব কষ্টে জীবন যাপন করছে।  প্রধান উপদেষ্টা কাছে আকুল আবেদন।  সুষ্ঠ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া জন্য  দাবী
রূপসী কাজীপাড়া এলাকার জাকির হোসেন রিপন বলেন, ওই ডাইং কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। কোন প্রকার ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) ছাড়াই কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের নির্গত বর্জ্য সরাসরি শীতলক্ষ্যা নদী, খোলা জায়গায়, জলাশয়সহ আশপাশের এলাকায় ফেলছে। 
দক্ষিণ রূপসী গ্রামের কাজী আহমেদুল্লাহ আহাদ বলেন, সরকারি জমি হলেও স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সন্ত্রাসীদের সহযোগীতায় সেটি দখল হয়। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সরকারি স্বার্থে এই জমি ব্যবহার করা উচিত। 
মামলার বাদী মৃত হাজী আলাউদ্দিনের ছেলে মোঃ আলী আকবর জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তারা সরজমিনে ঘটনা সত্যতা পেয়ে 
তথ্য অধিকার আইন  তথ্য চেয়েছেন ?  তথ্য ফর্ম পূর করে কর্মকর্তা রাশিদুল  ০১৭১৬২৩২৩৫২ নম্বরে  হোয়াটসঅ্যাপয়ে সকল তথ্য পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য ।  আমি সকল তথ্য পাঠিয়েছে।
এদিকে টু ফ্রেব্রিক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জামান বলেন,ট্রুু ফ্রেবিক্স লিমিটেডের উৎপাদিত পণ্য শতভাগ রপ্তানিমুখী। পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কারখানার জমি লিজ নেয়া। এখানে কোন অনিয়ম নেই। প্রতিষ্ঠানটি গ্রিন আর্থ তথা পরিবেশবান্ধব শিল্প-প্রতিষ্ঠান। জনস্বাস্থ্য ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই।
তারাবো পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে বিসিক নোয়াপাড়ায় জামদানী পল্লি স্থাপন করে। তখন জামদানি শিল্পীদের মাঝে এখানে ৪শ’ প্লট হস্তান্তর করে। এ সময় জামদানি পল্লির সুবিধার্থে পাশে সবুজায়ন, স্কুল, খেলার মাঠ স্থাপন করা হয়। দুর্ঘটনাজনিত আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি সরবরাহে এখানে জলাশয়ও রাখা হয়। এখন সেই জলাশয়সহ ১২ বিঘা ৭ শতাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নরসিংদী অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হুমায়ুন কবির বলেন, দুদক থেকে এ বিষয়ে তিনি একটি নোটিশ পেয়েছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে স্থাপনা নির্মাণেরও কোনো বিধান নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও তারাবো পৌরসভা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, অবৈধ দখলদাররা যত প্রভাবশালীই হোক ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারি জমি বেদখল হয়ে থাকলে সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!