ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের দোসর জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ধানমন্ডি থানা জাতীয় পার্টির সভাপতি হাজী মোহাম্মদ শাহজাহান। তিনি স্মরণকালের সব থেকে সেরা প্রতারণার ফাঁদে ফেলেছেন হাজার হাজার প্লট গ্রাহকদের। কেরানীগঞ্জের মধ্যে চরে মূন সিটি-১ এবং মূন সিটি-২ এর মাধ্যমে মূলত প্রতারণার শুরু। প্লট বাণিজ্যের এই প্রতারণামূলক কর্মকান্ডে অন্যতম সহযোগী শাহজাহানের ছেলে সাব্বির। মূলত কোম্পানির এম ডি শাহজাহান, আর ডিএমডি সাব্বির। ২০০০ সালে পরিপূর্ণভাবে বিক্রি শুরু হওয়া মুন সিটি-২ এর লে আউটে ৯০০ এর মতো প্লট দেখানো হলেও সরেজমিনে দেখা যায় সেখানে ৫০০ র মত প্লট রয়েছে। মুন সিটি ২ তে প্রতারণার এতগুলো স্তর যা অল্প পরিসরে লিখে শেষ করা কঠিন। অসংখ্য গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্লট না বুঝিয়ে দিয়ে তাদেরকে বছরের পর বছর ঘুরানো হুমকি প্রদান করার মত বিষয়টি মূন সিটির এমডি শাহজাহান ও শাহজাহান পুত্র ডিএমডি সাব্বিরের কাছে নিতাই ছেলে খেলার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এক দিকে টাকা নিয়ে ক্ষেত্র বিশেষে রেজিস্ট্রি দেওয়া হলেও প্লট বুঝিয়ে না দেওয়াও তাদের কাছে যেন সাধারণ একটি বিষয়। একই প্লট দেখিয়ে একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রতারণাও তাদের নিত্যনৈমিতিক ব্যাপার। কারো কারো কাছ থেকে দুইটি বা তিনটি প্লটের টাকা নিয়ে একটি মাত্র প্লট দিয়ে সান্তনা দেওয়া আর বাকিগুলো দেওয়ার আশায় দীর্ঘদিন ধরে ঘোরানো তাদের কাছে আরেকটি সাধারণ ঘটনা।
এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগীর সাথে প্রতিবেদকের মুঠো ফোনে কথা হয়। ভুক্তভোগীদের একজন পায়েল জানান বছরের পর বছর টাকা দিয়ে প্লট না পেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে রেজিস্ট্রি দেওয়ার পরেও প্লট বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। আবার কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান তাদের থেকে পরিপূর্ণ টাকা নেওয়ার পরেও রেজিস্ট্রি বা প্লট কোন কিছুই এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি এদের মধ্যে বাকিবিল্লাহ, রাজ্জাক সহ আরো অগণিত ভুক্তভোগী রয়েছেন। বাবা ছেলের প্রতারণার ফাঁদে পড়ে শত শত মানুষ আজ পথের ফকির হতে চলেছেন বলে ভুক্তভোগীদের অভিমত। মূন সিটি-২ এর প্লট মালিক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা হলে তারা জানান তাদের কাছে এসে অনেক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন সহযোগিতা চান। এদের মধ্যে প্রায় ৩২ জন তাদের সমস্ত দলিলাদির ফটোকপি সহ যাবতীয় কাগজপত্র সমিতি অফিসে আবেদনের মাধ্যমে জমা দিয়েছেন বলে জানা যায়। প্লট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে এমডি শাহজাহান, ডিএমডি সাব্বির সহ আরো কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিগত ২৩/১২/২০২৪ তারিখে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা ও করা হয়েছে বলে তারা জানান।
এই প্রতিবেদনটি লেখার বিষয়ে কথা বলতে কোম্পানির এমডি শাহজাহানকে পাওয়া যায়নি,ডিএমডি সাব্বিরকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আগের পর্বের প্রতিবেদনের স্বার্থে ডিএমডি সাব্বিরকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠিয়ে মতামত জানতে চাইলে তিনি আওয়ামী সরকারের শাহে আলম মুরাদের তাদের জায়গায় হস্তক্ষেপ করার কথা জানান। কিন্তু ভুক্তভোগীদের অভিযোগ শাহে আলম মুরাদকে তারা সাধারণ গ্রাহকদের জব্দ করার জন্য এনেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের সীমাহীন অমানবিক প্রতারণা দেখে শাহে আলম মুরাদ নাকি তাদের সাথে এমন আচরণ করেছেন বলে কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিমত। নিজের সন্ত্রাসী ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ দেখিয়ে গ্রাহকদের মুখ বন্ধ রাখতে সারাক্ষণ তৎপর শাহজাহানপুত্র সাব্বির। তার হোয়াটসঅ্যাপ এর প্রোফাইল পিকচারে অস্ত্রসহ ছবি দিয়ে সে তার ক্ষমতার জানান দিয়ে থাকে সকলের মাঝে। এ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করার কারণে সাংবাদিক পরিচয়ে মৃদুল নামধারী একজন ব্যক্তি প্রতিবেদকের মুঠোফোনে ফোন করে মামলা করার হুমকি প্রদান করে। মূন সিটি-২ এর বিরুদ্ধে পরিবেশ বিপর্যয়ের মাধ্যমেও প্রতারণার অভিযোগ আছে। খালের অনেকাংশ ভরাট করে প্লট তৈরি করা হয়েছে বলে অনেক ভুক্তভোগীর অভিমত যে দৃশ্য এখনও বর্তমান। ভুক্তভোগীদের অনেকেই বলেন এখানে প্লট বিক্রি কে কেন্দ্র করে ছয় থেকে সাত ধরনের ছাড়পত্রের ব্যবসা করেন শাহজাহান। সর্বশেষ ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে নতুন একটি ছাড়পত্র নেওয়ার জন্য সকলকে জানানো হয়।
৫ ই আগস্ট এর পর থেকে আত্মগোপনে থাকা শাহজাহান আড়াল থেকে ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন সুবিধামতো। ক্ষেত্রবিশেষে প্লট বাণিজ্যের রেজিস্ট্রি দিতে গোপনে কমিশন বসিয়ে শাহজাহান টাকা নিয়ে থাকেন বলে সূত্র মতে জানা যায়। প্রতারক শাহজাহান ও সন্ত্রাসী সাব্বিরকে আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের সঠিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :