সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৬ পৌষ ১৪৩১

এমপি আনারের খন্ডবিখন্ড দেহাংশ ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট মিলেছে মেয়ের সঙ্গে

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২০, ২০২৪, ১২:৪২ পিএম

এমপি আনারের খন্ডবিখন্ড দেহাংশ ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট মিলেছে মেয়ের সঙ্গে

কলকাতায় খুনের শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মরদেহের খন্ডাংশের সঙ্গে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের ডিএনএ মিলেছে। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্রে জানা গেছে, ভারতের সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে দুইজনের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। সেই নমুনা দুটির ডিএনএ মিল পাওয়া গেছে।
জানা গেছে,নভেম্বরের শেষ দিকে ডরিন কলকাতায় এসেছিলেন। তখন তার ডিএনএর নমুনা নেওয়া হয়। তারপর দুটি নমুনা যাচাইয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে।
সাবেক সংসদ সদস্য কলকাতার যে আবাসনে খুন হয়েছিলেন, সেই সঞ্জীবা গার্ডেনের একটি ভবনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় প্রায় চার কেজি মাংস। অন্যদিকে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার কৃষ্ণমূর্তি এলাকার ভাঙ্গরের বাগজোলা খাল থেকে উদ্ধার হয় মানবদেহের একাধিক হাড়গোড়। উদ্ধারকৃত ওই মাংস ও হাড়গোড় পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় সেন্ট্রাল ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (সিএফএসএল)।সিএফএসএলে’র প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী মানবদেহের সেই অংশগুলো পুরুষের।
যদিও সেই খন্ডবিখন্ড লাশ এমপি আনারের কি না, তা নিশ্চিত হতেই ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি ছিল। সেক্ষেত্রে অনেক আগেই নিহত এমপি আনারের কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডোরিন কলকাতায় আসার কথা থাকলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে গত নভেম্বর মাসেই কলকাতা এসে সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেন এবং ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে তদন্তকারী সংস্থা।
প্রসঙ্গত,গত ১২ মে ভারতে আসেন সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। তিনি ওঠেন পূর্ব পরিচিত গোপাল বিশ্বাসের পশ্চিমবঙ্গের বরানগরের বাড়িতে। পরদিন ১৩ মে চিকিৎসা করাতে যাবেন বলে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ওইদিন রাতেই নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনের বহুতল আবাসনের ‘বিইউ-৫৬’ ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে তাকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ ওঠে।
জানা যায়, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন এই হত্যাকান্ডের মূল পরিকল্পনাকারী। মূলত শাহীনের নির্দেশেই জিহাদ হাওলাদার ওরফে কসাই জিহাদসহ চারজন এমপি আনারকে ওই আবাসনে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন বলে অভিযোগ।
এ ঘটনায় সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া অন্যতম অভিযুক্ত বাংলাদেশি নাগরিক সিয়াম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, এমপি আনারকে খুন ও খন্ড-বিখন্ড দেহাংশ ফেলে দেওয়ার কাজে যুক্ত ছিলেন তিনি। নিউটাউনের অভিজাত ওই সঞ্জীভা গার্ডেনের সিসিটিভি ফুটেজেও সিয়ামকে দেখা যায়।
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আরেক অভিযুক্ত কসাই জিহাদ খুনের পরই ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস আলাদা করে সেগুলোকে ক্যারিব্যাগে ভরে রাখেন। পরে সেই লাশের টুকরোগুলোকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার ভাঙ্গা বøকের কৃষ্ণমাটি খাল এলাকায় ফেলা হয়। জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনটাই জানতে পারেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। পরবর্তীতে ওই খাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু হাড় উদ্ধার করেন সিআইডির কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে আবাসনের সেপটিক ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয় কিমা করা ৪ কেজি মাংস,যা পরীক্ষা করেন সিআইডি কর্মকর্তা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযাযী সেগুলো পুরুষ মানুষের হাড় ও মাংস।
মামলাটি তদন্ত করতে কলকাতা এসেছিল তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। সঞ্জীবা গার্ডেন, বাগজোলা খালসহ বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শনের পাশাপাশি দফায় দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ডিবি প্রধান।
এদিকে গত ২৩ মে জিহাদ হাওলাদার এবং ৭ জুন সিয়াম হোসেনকে গ্রেপ্তারের পর আগস্ট মাসে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসাত জেলা আদালতে প্রায় ১২০০ পাতার চার্জশিট জমা পড়ে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩৬৪ (হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ),৩০২(অপরাধমূলকনরহত্যা),২০১(তথ্য প্রমাণ লোপাট), ৩৪ (সংঘবদ্ধভাবে অপরাধমূলক কাজ সংঘটিত করা) এবং ১৪ ফরেনার্স আইনে মামলা দেওয়া হয়।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!