পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ এবং চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ ১০৩ জন পদস্থ কর্মকর্তার ২০১৮ সালে প্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম) ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম) বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নিয়ে কাজ চলছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়া সাপেক্ষে রাষ্ট্রীয় এই পদকগুলো প্রত্যাহার করা হবে। পাশাপাশি পদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আর্থিক সুবিধাও ফেরত নেয়া হবে। যদি এই ১০৩ কর্মকর্তার পদক প্রত্যাহার করা হয়, তবে এটি হবে নজিরবিহীন ঘটনা। এর আগে বাংলাদেশ পুলিশের ইতিহাসে কখনো একসঙ্গে এত সংখ্যক কর্মকর্তার বিপিএম ও পিপিএম পদক প্রত্যাহার করা হয়নি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।সূত্র বলেছে, পুলিশ সদর দপ্তরই এ পদক প্রত্যাহার ও পদকের সঙ্গে দেয়া টাকা ফেরত নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবের কাছে ২২ ডিসেম্বর পাঠানো চিঠিতে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (কনফিডেনশিয়াল) মো. কামরুল আহসানের স্বাক্ষর রয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের বিতর্কিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয় দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশের ১০৩ পদস্থ কর্মকর্তাকে ঢালাওভাবে পদক দিয়ে রাষ্ট্রীয় পদকের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ সদস্যদের প্রতিবছর পুলিশ সপ্তাহের বার্ষিক প্যারেডে বিপিএম ও পিপিএম পদক দেওয়া হয়। সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে রাষ্ট্রীয় এ দুটি পদক দিচ্ছে। পাশাপাশি সরকার ১৯৯৯ সাল থেকে পুলিশ সদস্যদের সৃজনশীল উদ্ভাবনীমূলক কর্মকান্ড,মামলার রহস্য উদঘাটন,তদন্তসংশ্লিষ্ট কার্যক্রম,অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং দাপ্তরিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশংসনীয় অবদানের জন্য বিপিএম সেবা ও পিপিএম সেবা পদক দিচ্ছে। পুলিশ সদস্যদের কাছে এসব পদক খুব সম্মানজনক ও মর্যাদার বলে বিবেচিত।
পুলিশ সদর দপ্তরের চিঠিতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে (একাদশ সংসদ নির্বাচন) সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য ঢালাওভাবে ৬৪ জেলার এসপি, সব ডিআইজি ও সব পুলিশ কমিশনারকে রাষ্ট্রীয় পদক দেওয়া হয়। এই পদকের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পদকের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। বিতর্কিত ওই নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১০৩ জনকে দেওয়া পুলিশ পদক বিধি অনুযায়ী প্রত্যাহারের প্রস্তাব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চিঠিতে তাঁদের অনুকূলে পদক-সংক্রান্ত আর্থিক সুবিধা বন্ধ এবং ইতিপূর্বে নেওয়া অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পুলিশ পদক পাওয়া উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা হচ্ছেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক দুই কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ও শফিকুল ইসলাম, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি আব্দুল কাহার আকন্দ, আতিকা ইসলাম, মোজাম্মেল হক, আনোয়ার হোসেন, মোজাম্মেল হক ও মনিরুজ্জামান। খুলনা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি দিদার আহম্মেদ, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম এবং ৬৪ জেলার তৎকালীন পুলিশ সুপার। সেবার ৪০ জনকে বিপিএম ও ৬২ জনকে পিপিএম পদক দেয়া হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, বিতর্কিত নির্বাচনে কাজের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের খুশি করতে দেয়া পদক ও পদকের সঙ্গে দেয়া অর্থ ফেরত নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে ১০৩ পুলিশ কর্মকর্তাকে পদক দেয়ার ফাইল চালাচালি শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এই ফাইলে স্বাক্ষর করলে তা অনুমোদিত হবে। ওই নির্বাচনে রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে বাক্স ভরার ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (কনফিডেনশিয়াল) মো. কামরুল আহসান এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর বলেছেন, মন্ত্রণালয়ে অনেক চিঠি পাঠানো হয়। তবে কাদের পদক বাতিল করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমার জানা নেই। পরে এ বিষয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানান, বিতর্কিত ১০৩ কর্মকর্তাকে দেয়া বিপিএম ও পিপিএম পদক বাতিলের বিষয়ে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :