শীতকালে শরীরে পানির পরিমাণ অনেকেরই কমে যায়। একাংশের ধারণা, শীতে শরীরে পানির খুব একটা প্রয়োজন নেই। যা একদমই ভুল ধারণা। মূলত, ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে শীতের সময় ঘাম কম হয়। এ কারণে তৃষ্ণার পরিমাণও কিছুটা কমে যায়। এ জন্য পানি পানের পরিমাণও কম হয়। কিন্তু প্রকৃত অর্থে শরীরের ভেতরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করা জরুরি।
পানি শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করে। পানিশূন্যতার কারণে আবার একাধিক জটিল রোগ হওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। তবে শীতে ঠান্ডা আবহাওয়া থাকে বলে পানি কম পান করলেই হবে, তা নয়। এ সময়ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা গুরুত্বপূর্ণ। শীতে পানির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যম। তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক-
কেন পানির প্রয়োজন: মানবদেহের অধিকাংশই পানিতে ভরা। হজম প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে রক্ত সঞ্চালন,শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে বিষাক্ত পদার্থ বের করা-সবকিছুতেই পানি অপরিহার্য। শীতে পানি কম পান করলে এসব স্বাভাবিক প্রক্রিয়াগুলো ধীর হয়। ফলে শরীরে নানা সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষ করে হজমের সমস্যা। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান না করলে খাবার ঠিকমত হজম হয় না। এ থেকে গ্যাস, অ্যাসিডিটি, অম্বল ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা বাড়ে। আবার অনেকেই ভারী ও তেল-মশলাযুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে পানি পানের পরিমাণ কম হলে খাবার হজম করতে শরীরকে বেশ চাপ নিতে হয়।
শরীরে ত্বকের ওপরও পানির অভাবের প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। শীতে বাতাস শুষ্ক হওয়ার কারণে ত্বক রুক্ষ হয়। এ অবস্থায় পানি কম পান করলে ত্বক আরও শুকনো, খসখসে ও প্রাণহীন দেখায়। কারও কারও ঠোঁট ফেটে যায়, চামড়া ওঠে, চুল রুক্ষ হয়। সবই হয় পানিশূন্যতার কারণে। আবার শরীরও ক্লান্ত হয়। যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান না করলে রক্ত সঞ্চালন ঠিকঠাক হয় না। এ কারণে শরীরের কোষগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি পায় না। ফলস্বরূপ অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্তি বোধ হয়, মাথা ভার হয় ও মনোযোগ কমে যায়।
শীতে কী পরিমাণ পানি প্রয়োজন: বিশেষজ্ঞদের মতে, শীতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দিনে অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটারের মতো পানি পানের প্রয়োজন। শরীরের ওজন, কাজের ধরন ও আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে এই পরিমাণ কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। এ সময় তৃষ্ণা না পেলেও নিয়মিত পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস রাখা জরুরি।
শীতকালে অনেকেই পানি পানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এ ক্ষেত্রে হালকা গরম পানি পান করা যেতে পারে। হালকা গরম পানি হজমশক্তি উন্নত করে এবং শরীরের অন্তর্নিহিত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সক্রিয় রাখতে ভূমিকা রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর হালকা গরম পানি পানে শরীর বিষমুক্ত হয়। দিনভর সুস্থও থাকা যায়।
পানির বিকল্প উপায়: এ মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি পানের পাশাপাশি তরল ফলমূল ও সবজিও খাওয়া যেতে পারে। এসব শরীর আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। কমলা, আপেল, পেয়ারা, শসা, টমেটোর মতো খাবার শরীরকে তরল সরবরাহ করে। শুধু খাবারের ওপর নির্ভর না করে আলাদাভাবে পানি পানের অভ্যাস গুরুত্বপূর্ণ। আর যেকোনো সমস্যায় অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জররুরি।ছবি-সংগৃহীত

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :