রমজানের ইফতার মানেই সুস্বাদু খাবারের সমাহার। ইফতারের ঐতিহ্যবাহী এক আইটেম হলো মুড়ি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি বিশেষ খাদ্যসংযোগ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে-মুড়ির সঙ্গে জিলাপি,বুন্দিয়া বা মিষ্টিজাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়া। অনেকেই এটি উপভোগ করেন, আবার কেউ কেউ মনে করেন এটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ইফতারিতে ছোলা-মুড়ির সঙ্গে জিলাপি, বুন্দিয়া বা মিষ্টিজাতীয় খাবার খাওয়ার বিষয় নিয়ে চারদিকে এখন নানা বিতর্ক। এ অবস্থায় পুষ্টিবিদের দৃষ্টিকোণ থেকে এর স্বাস্থ্যকর বা ক্ষতিকর দিকগুলো জানা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে চ্যানেল ২৪ অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানী ঢাকার মহাখালীর লাইফ কেয়ার মেডিকেল সেন্টারের নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েট কনসালটেন্ট ইসরাত জাহান ডরিন।
পুষ্টিগুণ ও প্রভাব: মুড়ি মূলত একটি লো-ক্যালোরি, সহজপাচ্য শস্যজাতীয় খাবার, যা কম পরিমাণে ফ্যাট ও ফাইবারযুক্ত। এটি দ্রæত শক্তি সরবরাহ করে এবং হজমের জন্যও সুবিধাজনক। অপরদিকে জিলাপি,বুন্দিয়া বা অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবারে উচ্চমাত্রার চিনি ও ট্রান্স ফ্যাট থাকে, যা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা দ্রæত বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরে ইনসুলিন প্রতিরোধের ঝুঁকি বাড়ায়। যখন মুড়ির সঙ্গে মিষ্টি মিশিয়ে খাওয়া হয়, তখন এটি শরীরে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (এও) তৈরি করে, যা তাৎক্ষণিক রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি: আগে থেকেই যারা ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা স্থূলতার ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য এই ধরনের খাবার মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অতিরিক্ত চিনি ও কার্বোহাইড্রেট একত্রে গ্রহণ করলে তা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা কমিয়ে দিতে পারে,যা ভবিষ্যতে টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। একইসঙ্গে, বেশি পরিমাণে তেল ও চিনিযুক্ত খাবার খেলে হজমের সমস্যা,অ্যাসিডিটি ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও হতে পারে।
পরিমিত পরিমাণ কী গ্রহণযোগ্য: কারও যদি শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকে, তবে পরিমিত পরিমাণে (যেমন সপ্তাহে এক-দুবার) মুড়ির সঙ্গে অল্প পরিমাণে মিষ্টিজাতীয় কিছু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই এটি যেন পরিমাণে সীমিত থাকে এবং অতিরিক্ত তেল ও চিনি গ্রহণ এড়ানো হয়। এর থেকে ভালো বিকল্প হতে পারে মুড়ির সঙ্গে দই,ফল বা বাদাম মিশিয়ে খাওয়া, যা একইসঙ্গে সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর
সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি: ইফতারে মুখরোচক খাবার থাকা স্বাভাবিক, তবে তা অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। যারা মনে করেন মুড়ির সঙ্গে জিলাপি বা বুন্দিয়া না খেলে ইফতার অসম্পূর্ণ, তারা একটু চিন্তা করুন-স্বল্পমেয়াদি রসনার আনন্দের থেকে দীর্ঘমেয়াদি সুস্বাস্থ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার হাইপ বা ট্রেন্ডের থেকে নিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেয়া উচিত। সুস্থতা ও স্বাদ দুটোই যদি সমন্বয় করতে হয়, তবে সঠিক পুষ্টিকর বিকল্প বেছে নেয়া হবে সবচেয়ে ভালো সিদ্ধান্ত।সংগৃহিত
আপনার মতামত লিখুন :