মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭ কার্তিক ১৪৩১

পলকের সাথে সাংবাদিকও!

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৪, ০৪:৪৬ পিএম

পলকের সাথে সাংবাদিকও!

সাবেক আওযামী লীগ সরকারের আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের আস্থাভাজন মাসুদ রুমী কালের কণ্ঠের সাংবাদিক নাকি আইসিটি মন্ত্রণালয়ের কনসাল্টেন্ট? প্রশ্ন উঠেছে পলকের দুর্নীতির অংশীদার। এরকম আরও কতজন তাদেরকে খুজে বের করার কাজ করচে গোয়েন্দা। প্রথমেই রুমির নানারকম তথ্যপ্রমাণসহ সামনে আসছে। এতে দেখা যায়-সাংবাদিকতা একটি মহৎ ও মহান পেশা। যেখানে দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করা যায়। সাংবাদিকরা সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন। সকল অন্যায় অনিয়ম আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেন। সেই মহান পেশায় জড়িত সাংবাদিক নিজেই কিনা নিয়েছেন দুর্নীতির আশ্রয়। বলছি, দৈনিক কালের কণ্ঠের বিজনেস এডিটর মো. মাসুদ রুমীর কথা। অভিযোগ উঠেছে, পত্রিকাটির সূচনালগ্ন (১ জুলাই ২০০৯) থেকে কর্মরত মাসুদ রুমী শেখ হাসিনা সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের কাছের লোক হিসেবে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে মোটা বেতনে কনসাল্টেন্টের চাকরি নেন। যা পরিপূর্ণভাবে সরকারের চাকরি বিধি লঙ্ঘন এবং অবৈধ। দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাধ্যমে পলকের ক্ষমতা অপব্যবহার করে তিনি দুটি প্রতিষ্ঠানেই ফুল-টাইম চাকরি করছেন। তবে প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, মাসুদ রুমী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে এখনও চাকরি করলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট হিসেবে যোগদান করেন দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মো. মাসুদ রুমী। বাংলাদেশ সরকারের চাকরি বিধি অনুযায়ী এ ধরনের চাকরি করার ক্ষেত্রে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে সেটা আইনের ব্যত্যয় ঘটে। চাকরিতে যোগদানের সময় এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) জমা দিতে হয়। তবে প্রতিমন্ত্রী পলকের লোক হওয়াতে তার কোনো কিছুই জমা দিতে হয়নি। তিনি একাধারে দুটি প্রতিষ্ঠানেই ফুল-টাইম চাকরি চালিয়ে যাচ্ছেন। 
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মাসুদ রুমী ডিজিটাল এন্টারপ্রেনারশিপ এন্ড ইনোভেশন ইকো-সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট হিসাবে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেতন পান। এদিকে কালের কণ্ঠে বিজনেস এডিটর হিসাবেও প্রায় লাখ টাকার মত বেতন পান। প্রকল্পের কাজে এক বছরেরও কম সময়ে মোটা বেতনে চাকরি করলেও নতুন করে চুক্তির মেয়াদ ও বেতন বৃদ্ধির আবেদন করেছেন তিনি।  হাইটেক পার্কের প্রকল্পের কনসাল্টেন্ট হিসাবে ২ লাখ ৫০ হাজার বেতনের পরেও এবার ২৫ হাজার টাকা বেতন ও চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করেছেন সাংবাদিক মাসুদ রুমী
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের ছয়দিন পর ১১ আগস্ট তার বেতন আরো ২৫ হাজার টাকা বৃদ্ধির জন্য প্রকল্প পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমান বরাবর আবেদন করেছেন। প্রকল্প পরিচালকের মৌখিক সম্মতিতেই এই বেতন বৃদ্ধির আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। ভোরের কাগজে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়.উক্ত আবেদনে মাসুদ লিখেছেন, আমার এক বছরের চুক্তিভিত্তিক চাকরির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৬ সেপ্টেম্বর। আমার চুক্তির মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে বর্তমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে আমার মাসিক নেট বেতন ২৫,০০০ টাকা (ভ্যাট-ট্যাক্স ব্যতিত) বৃদ্ধি করার জন্য অনুরোধ করছি।
দুই প্রতিষ্ঠানে ফুল টাইম চাকরি বাংলাদেশ সরকারের চাকরি বিধিতে আইনের ব্যত্যয় ঘটে। মাসুদ রুমী দৈনিক কালের কণ্ঠে ফুল-টাইম বিজনেস এডিটর হিসাবে চাকরি করার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পেও ফুল-টাইম চাকরি করছে কীভাবে? প্রকল্প পরিচালক আবুল ফাতাহ মো. বালিগুর রহমানকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, মাসুদ রুমী অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে এমন প্রমাণ দেখাতে পারলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, মাসুদ রুমী সরকারি প্রকল্পে কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট হিসাবে যোগদান করেন ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। সেইদিন থেকেই তার কোথাও আর চাকরি করার কথা না। কিন্তু চলতি বছরের ১৪ মার্চ বিমান বাংলাদেশের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার খন্দকার বাকি উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি ভিসা আবেদনের তথ্য বলছে ভিন্ন কথা। 
বিমান বাংলাদেশের চিঠিতে সাংবাদিক হিসাবে মাসুদ রুমীকে ইতালির ভিসা দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছে।
ঢাকায় ইতালি অ্যাম্বাসি বরাবর পাঠানো খন্দকার বাকি উদ্দিন আহমেদের চিঠিতে বাংলাদেশের ৩০ জন সাংবাদিককে ভিসা দেয়ার জন্য আবেদন করা হয়। সেখানে ৩০ জন সাংবাদিকের নাম, গণমাধ্যমের নাম ও তাদের পাসপোর্টের নাম্বার রয়েছে। আবেদনে ইতালির রোমে বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানের কভারেজ দেয়ার জন্য উল্লেখিত ব্যক্তিদের ভিসা ইস্যু করার কথা উল্লেখ করা হয়। তারা ২৭ মার্চ ২০২৪ থেকে ১ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত রোমে অবস্থান করবে। ওই আবেদনে ৮ নাম্বার সিরিয়ালে কালের কণ্ঠের সাংবাদিক মাসুদ রুমীর নাম দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ তিনি মন্ত্রণালয়ে যোগদানের ৬ মাস পর কালের কণ্ঠের সাংবাদিক হিসাবে বিমান বাংলাদেশের আমন্ত্রণে ইতালি সফর করেন। 
সাংবাদিক হিসাবে ইতালি সফরে গেলেও মন্ত্রণালয়ে পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ছুটি নেন মাসুদ রুমী। ইতালির এই সফরের সময় ছুটি নেয়ার ক্ষেত্রেও মাসুদ রুমী মিথ্যাচার করেছেন। ২৫ মার্চ প্রকল্প পরিচালক বরাবর পাঠানো চিঠিতে তিনি ‍‍`পারিবারিক কারণে‍‍` ৬ দিনের ছুটির আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় থেকে ২৫ মার্চ ছুটি মঞ্জুর করে প্রকল্প পরিচালকের স্বাক্ষরে লেখা হয়- বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ডিজিটাল উদ্যোক্তা এবং উদ্ভাবন ইকো-সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের জনাব মো: মাসুদ রুমী কমিউনিকেশন স্পেশালিস্টকে তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৭/০৩/২০২৩ তারিখ থেকে ০১/০৪/২০২৪ তারিখ পর্যন্ত মোট ছয় দিনের বহিঃবাংলাদেশ ছুটি মঞ্জুর করা হলো। তিনি ২৫/০৩/২০২৪ তারিখ অপরাহ্নে কর্মস্থল ত্যাগ করবেন এবং (২৫/০৩/২০২৪ এবং ০১/০৪/২০২৪ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি সহ) ০২/০৪/২০২৪ তারিখে কর্মস্থলে যোগদান করবেন। মন্ত্রণালয়ে ২০২৩ সালে চাকরি নেয়ার ৫ মাস পরে কালের কন্ঠের ছুটি নোটিস গ্রহণ করেছেন বিভাগীয় প্রধান মাসুদ রুমী।
এদিকে কালের কণ্ঠে চলতি বছর পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে ছুটির নোটিশে মাসুদ রুমীর উপস্থিতি দেখা গেছে। তিনি কনসাল্টেন্ট হিসাবে ২০২৩ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর যোগদান করলেও তার প্রায় ৫ মাস পর ২২ ফেব্রæয়ারি ২০২৪ কালের কণ্ঠের ইস্যু করা ছুটির নোটিসে বিভাগীয় প্রধান হিসাবে স্বাক্ষর করেছেন মাসুদ রুমী।  

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!