শনিবার, ০৪ মে, ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

কাতারের আমিরের সফরে ১০ চুক্তি-সমঝোতার প্রস্তুতি

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০২৪, ০৮:৪৭ পিএম

কাতারের আমিরের সফরে ১০ চুক্তি-সমঝোতার প্রস্তুতি

কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানিকে স্বাগত জানাতে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী সোমবার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে কাতার আমিরের। সফরকালে বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ একাধিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক জোরদারে প্রায় ডজনখানিক নথি সই হতে পারে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কাতারের আমিরের সফরে ৪টি চুক্তি ও ৬টি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যে ৪টি চুক্তির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো— বন্দি বিনিময়, বাণিজ্য-বিনিয়োগ, দ্বৈত কর প্রত্যাহার ও শুল্ক সুবিধা দেওয়ার জন্য সহযোগিতা।

৬টি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- কাতারে জনশক্তি রপ্তানি, বন্দর ব্যবস্থাপনা সহযোগিতা, ধর্মীয় সহযোগিতা, উভয় দেশের কূটনীতিকদের প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা।

বন্দি বিনিময় চুক্তি

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত ও থাইল্যান্ডের বন্দি বিনিময় চুক্তি রয়েছে। এবার তৃতীয় দেশ হিসেবে কাতারের সঙ্গে বন্দি বিনিময় চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এই চুক্তির ফলে দুই দেশ সাজাপ্রাপ্ত বন্দি আসামিকে হস্তান্তর করতে পারে। কাতারের প্রায় শতাধিক বাংলাদেশি নাগরিক বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রয়েছেন। চুক্তির পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে পারবে বাংলাদেশ।

জনশক্তি রপ্তানিতে প্রাধান্য

মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি কর্মীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য কাতার। দেশটিতে প্রায় ৩ লাখ কর্মী রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে কীভাবে আরও জনশক্তি কাতারে পাঠানো যায়, দেশটির আমিরের সঙ্গে তা নিয়ে আলোচনায় প্রাধান্য পাবে। কাতারের আমিরের সফরকালে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আমিরের নামে পার্ক-সড়ক

কাতারের আমিরের নামে ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি পার্ক ও উড়াল সেতুর নামকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তার নামে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন মিরপুরের কালশীর বালুর মাঠে নির্মিতব্য পার্ক ও মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী উড়াল সেতু পর্যন্ত সড়কটির নামকরণ করা হবে।

মধ্যপ্রাচ্য সংকট

কাতারের আমির যখন বাংলাদেশে আসছেন, ঠিক তখনই ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে নতুন করে সংঘাত শুরু হয়েছে। কাতারের আমিরের সফরে ফিলিস্তিন ইস্যু ও ইরান-ইসরায়েল সংকট নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশ বরাবরই ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান কাতারের কাছে তুলে ধর হবে।

দুই দেশের সম্পর্কে অবদান

কাতারের আমিরের ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে প্রত্যাশা করেছেন কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত নজরুল ইসলাম। তিনি জানিয়েছেন, কাতারের আমিরের সফরে দুই দেশের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, তা আরও শক্তিশালী হবে। এই সফর সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবে।

এদিকে সরকার এক গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে দুই দিনের বাংলাদেশ সফরে আমিরকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ঘোষণা করেছে। সফর উপলক্ষে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতারের আমিরের ছবি দিয়ে ঢাকার কয়েকটি রাস্তা সাজানো হয়েছে।

প্রায় ১৯ বছর পর বন্ধুপ্রতিম দেশ কাতার থেকে ২৪ ঘণ্টা স্থায়ী এমন উচ্চপর্যায়ের সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাতারের তৎকালীন আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা আলে সানি ২০০৫ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ সফর করেন।

গত মাসে তুরস্কে আন্তালিয়া কূটনীতি ফোরামে অংশ নেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গাজায় চলমান গণহত্যা বন্ধে সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছিলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও জাতিগত নির্মূলের জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ শান্তির পক্ষে, যুদ্ধের পক্ষে নয়।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আমিরকে অভ্যর্থনা জানাবেন। সোমবার বিকেলে একটি বিশেষ ফ্লাইটে আমিরের পৌঁছানোর কথা রয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা জানান।

মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতারের আমিরকে তার কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তাদের দুজনের মধ্যে বৈঠক হবে এবং এরপর আরও একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। দুই নেতা সহযোগিতার দলিল সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এবং যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

সেখানে পরিদর্শন বইয়ে সই শেষে আমির মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনের উদ্দেশে যাত্রা করবেন এবং রাষ্ট্রপতি তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন বঙ্গভবনের দরবার হলে কাতারের আমিরের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করবেন।

ওই দিন বিকেল ৩টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) আওতাধীন মিরপুরের কালশী এলাকায় পার্ক এবং বিকেল ৩টায় মিরপুর ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পর্যন্ত সড়ক উদ্বোধন করবেন তিনি। এ ছাড়া নির্বাচিত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করবেন আমির।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় একটি বিশেষ ফ্লাইটে তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করার কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাবেন।

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!