প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন অনেকে গণতন্ত্রের কথা বলে, যারা এখন গণতন্ত্রের কথা বলে, তাদের জন্ম কি গণতন্ত্রের মধ্য থেকে এসেছে? না। ওই রক্তাক্ত হাতে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল সেই সেনা কর্মকর্তাদের পকেট থেকে বের হওয়া রাজনৈতিক দল বিএনপি। তিনি বলেন জিয়া হা না ভোটের মাধ্যমে বাংলাদেশেকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল। কিন্তু আমার একটা আস্থার জায়গা হচ্ছে জনগণ। তাদের জন্য আমি কাজ করি। তারাই আমার শক্তি। তারা যতক্ষণ আছে কোনো চিন্তা করি না। জনগণই সব সময় আমাকে ঘিরে থাকে। তবে কিছু সমস্যা হচ্ছে, যেমন মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। সেজন্য আমরা ভর্তুকি দিয়ে তাদের সহায়তা করছি। কর্মস্থানের ব্যবস্থা করেছি। জনগণের জন্য আমি কাজ করে যাবো। তারা আমাকে কোনো দিন দূরে সরাতে পারবে না ইনশাল্লাহ।
বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাতে জাতীয় সংসদে সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। গত ২ মে দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২য় অধিবেশন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি আমলে, এরশাদ সাহেবের আমলে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। ১৯৮৬ সালের নির্বাচনে আমরা প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে অংশ নিয়েছিলাম। ৪৮ ঘন্টা ভোটের রেজাল্ট বন্ধ করে রাখে। সেই ভোটে কিন্তু আমরা জিতে আসি। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী খালেদা জিয়া নির্বাচন করলেন, সেখানে ভোটার নেই। সে নির্বাচন কিন্তু খালেদা জিয়া টেকাতে পারে নি। ৮৮ সালের যেমন এরশাদ সাহেব নির্বাচন টেকাতে পারেনি। খালেদা জিয়াও পারেনি। তখন বিদ্যুৎ ছিল না খাম্বা ছিল। বিদুৎ চেয়েছিল বলে কৃষককে হত্যা করেছিল।তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ভোট চুরির অপরাধে জনগণের আন্দোলনে ৩০ মার্চ খালেদা জিয়াকে বিদায় দেয়া হয়েছে। এরপরে যে নির্বাচন হয় তাতে আমরা ক্ষমতায় আসি। ৯৬ সালে এসে আমরা জনগণের জন্য কাজ করি। ৯৬ সালে মানুষ প্রথম আওয়ামী লীগের আমলে জনগণ গণতন্ত্রের স্বাদ পায়। এবং আত্মসামাজিক উন্নয়ন করতে পারে তা বুঝতে পারে। ২০০১ সালের নির্বাচনের আগে আমার কাছে প্রস্তাব ছিল গ্যাস বিক্রি করতে হবে। আমি তো বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি রাজি হয়নি। আমি রাজি হয়নি বলেই আমি কিন্তু ক্ষমতায় আসতে পারেনি। সে নির্বাচনে কি হয়েছিল। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন অত্যাচার। নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের দড়ি দিয়ে বেঁধে ঘোরায়। ৭১ সালে পাকিস্তান বাহিনী যেভাবে অত্যাচার চালায় সেভাবে বিএনপি নারীদের ওপর অত্যাচার চালায়। মেয়েদের ওপর নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। পূর্নিমাকে গ্যাং রেপ করে। ফাতেমাকে গ্যাং রেপ করে। ছোট্ট শিশুকে বেøড দিয়ে চিরে গ্যাং রেপ করে। ২৫ হাজার মানুষ কোটালী পাড়ায় আমার ওখানে আশ্রয় নেয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তাদের এই তান্ডব-নির্যাতন চলে।
বাংলা ভাই, জঙ্গীবাদ বোমা হামলা প্রতিনিয়ত চলে। একদিনে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়। তারা পরে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিল। জনগণ তা বয়কট করেছিল। তাদের দুঃশাসনে দেশে এমারজেন্সি আসে। যদিও এ সরকার তাদেরই নিজেদের লোক ছিল। ফখরুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা মঈন উদ্দিনকে ৯ জন ডিঙিয়ে সেনা প্রধান করা হয়েছিল। তারা ইলেকশন দেবার নামে ক্ষমতায় বসে থাকে, এটা প্রতিবাদ করেছিলাম বলে গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। খালেদা জিয়াকে তারা গ্রেপ্তার করে। ২০০৮ এ নির্বাচন দিতে বাধ্য হয় তত্ত্বাধায়ক সরকার। আমরা ক্ষমতায় আসি। বিএনপি-জামায়াত জোট সে নির্বাচনে মাত্র ৩০ টা সিট পায়। তাহলে তারা এখন কি করে বলে এখন নির্বাচন হয়না, তারা জানে ইলেকশন করলে জনগণ তাদের ভোট দেবে না। ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে অগ্নি সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরেন। এবারেও চিফ জাস্টিসের বাসায় কিভাবে ভাংচুর করেছে। এসব করে তারা নির্বাচন বয়কট করে বন্ধ করার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনি। জনগণ তা প্রতিহত করে। অপকর্মের বিএনপি কিছু বাদ নেই। এ সময় তিনি বিএনপিকে নিজেদের অয়নায় চেহারায় দেখার আহ্বান জানান। আজকে বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে সব দিক থেকে।
যেখানে ১৬’শ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ ছিল আজকে ১৬ হাজার মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি। বিদ্যুৎপাদন করতে গেলে সরকারী খাতের সঙ্গে ব্যক্তিখাতকে দিতে হবে। বিশেষ আইনে কাউকে কিন্তু দায় মুক্তি দেয়নি। একটা দেশের উন্নয়ন করতে হলে সবচেয়ে জরুরি বিদ্যুৎ ও যাতয়াত ব্যবস্থার উন্নয়ন। আমরা পদ্মা সেতু করতে বাঁধা পেয়েছি, নিজেদের অর্থায়নে করেছি। পদ্মা সেতুর রেল লাইন কেন করেছি, এটার নাকি প্রয়োজন ছিল না। পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা হয়ে যশোর খুলনা হয়ে মোংলা বন্দর পর্যন্ত যাবে। অর্বাচিন ছাড়া এসব কথা কেই বা বলবে। আমরা রুপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র করেছি। নিউক্লিয়ার পাওয়ার হচ্ছে ১৯৬২ সাল থেকে এটা হবার কথা। দুটোই নিয়ে গেল পাকিস্তান ধোকা দিয়ে। আমি একটা করেছি আবারো একটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট করবো। এসময় তিনি কর্মসংস্থানের কথাও বলেন।
তিনি বলেন আমরা বিদ্যুতকে বহুমুখি করছি। বায়ু থেকে, কয়লা ভিত্তিক, তেলে সব কিছু করছি। কৃষকের জন্য বিদ্যুতের কোন অভাব হয়নি। সেখানে ব্যবস্থা রেখেছি। গ্রামে বিদ্যুতে হাত না দিয়ে গুলশান-বারিধারায় বিদ্যুৎ ঘাটতি করতে বলবো। প্রতিমন্ত্রী যেখানে থাকে সেখানে লোডশেডিং করতে হবে
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরে এদেশে কি ধরনের অত্যাচার নেমে আসে। ৩ নভেম্বর ঢাকার কেন্দ্রিয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগের অগণিত কর্মীকে গ্রেপ্তার ও অত্যাচার, সেনাবাহিনীতে একেরপর এক কু হতে থাকে। বিনা বিচারের নামে প্রহসন করে সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসারকে হত্যা ফাঁসি দেয়া হয়। তাদের স্বজনরা এখনো তাদের লাশ খুজে বেড়াচ্ছে। তখন ১৮-১৯টা কু হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের ঘটনার পর থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল অবৈধভাবে তারা ক্ষমতা দখল করেছিল। জনগণের কোন ভোটের অধিকার ছিল না। স্বাধীনতা বিরোধী যুদ্ধাপরাধী যাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন তাদেরকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তারাই প্রধানমন্ত্রী বা উপদেষ্টা বা মন্ত্রীর মর্যাদা পেয়েছিল। জাতির পিতার হত্যাকারীদের বিচার না করতে ইমডেননিটি আদেশ দিয়ে বিচার বন্ধ করা হয়েছিল। তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সেখানে কোন আইনের শাসন ছিল না। এই ছিল দেশের অবস্থা। মানুষদের মেরে লাশ পর্যন্ত গুম করে ফেলে। আন্তর্জাতিক ভাবে প্রচারিত হয়েছিল বাংলাদেশ দুর্ভিক্ষের দেশ, দরিদ্র দেশ এ বলে পরিচিতি লাভ করেছিল।
তিনি বলেন, সব প্রতিকুলতা ফেলে ১৯৮১ সালে আমি ফিরে এসে দেশের অবস্থা স্বচোখে দেখেছি। দেশের কোন উন্নয়নই ছিল না। ক্ষতাসীনরা কিছু উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু এলিট শ্রেণী তৈরি করে। আজকে যে কথায় কথায় ঋণ খেলাপির কথা আসে, এই ঋণ খেলাপির কালচার কখন শুরু? আমরা দেখেছি জিয়ার আমলে, এরশাদের আমলে ঋণ খেলাপির শুরু। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। তবে আমাদের চেষ্টা আছে তা বন্ধ করার। আমি জনগণের উন্নয়নে কাজ করি, জনগণ আমার সঙ্গে আছে। আমি জনগণের সঙ্গে আছি।
আপনার মতামত লিখুন :