জুলাই গণহত্যার বিচার করে বাংলাদেশ বিশ্বের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন,জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার যে গণহত্যা চালিয়েছে,তা এক কথায় কল্পনাতীত। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মানুষ চায় এ গণহত্যার বিচার হোক। অন্তর্র্বতী সরকার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার মাধ্যমে এ গণহত্যার বিচার করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। পৃথিবীর সামনে এ গণহত্যার বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলামের দপ্তরে তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাতের শুরুতে জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে তৈরি করা ভিডিও ‘জুলাই অনির্বাণ’ জুরিস্ট ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলকে দেখানো হয়।
নাহিদ বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। তারপর দেশে টানা তিনদিন সরকার না থাকায় অনেক ফ্যাসিস্ট সমর্থক দেশ ছেড়ে পালানোর সুযোগ পেয়েছে। আমরা গণহত্যার বিচারের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিকপর্যায়ে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ চলছে।
প্রতিনিধিদল জুলাই গণহত্যার বিচারের সময়কাল ও প্রক্রিয়া নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে জুলাই গণহত্যার বিচার দ্রæততম সময়ে অত্যন্ত স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুসরণ করে সম্পন্ন করা হবে। এ বিচার কখনোই প্রতিশোধমূলক হবে না। কারণ বিচার মানেই ন্যায়বিচার।
গণহত্যার বিচারের বিষয়ে ফ্যাসিস্ট বিরোধী সব দল ঐকমত্য বলেও তাদের জানান উপদেষ্টা। পাশাপাশি এ বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিতে দেশ-বিদেশের সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন,এ বিচার শুধুমাত্র বাংলাদেশের নির্যাতিত ও গণহত্যার শিকার হওয়া মানুষের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয় বরং বিশ্বের মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের পরিণাম হিসেবে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
এ বিচার প্রক্রিয়ার ওপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর রয়েছে। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারও এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে। আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়নের পরামর্শ,সহযোগিতা এবং অভিজ্ঞতা বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার গ্রহণ করতে প্রস্তুত’ যোগ করেন নাহিদ ইসলাম।
এদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যে গণহত্যা হয়েছে তা সুস্পষ্ট অপরাধ এবং তার শাস্তি হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরাও। তারা নৈতিকভাবে জুলাই গণহত্যার বিচারকে সমর্থন করেন জানিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারকে গণহত্যাকারীদের বিচারের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও প্রতিশ্রæতি দেন।
সাক্ষাৎকালে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মাহবুবা ফারজানা, আইসিটি পলিসি অ্যাডভাইজার ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জুরিস্ট ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন,তুরস্কের চারটি গণঅভ্যুত্থানে বিচারিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন চিফ প্রসিকিউটর, তুরস্কের একাধিক সাবেক সংসদ সদস্য, তুরস্কের সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাংলাদেশের প্রসিকিউটররা।
আন্তর্জাতিক জুরিস্ট ইউনিয়ন বিশ্বের ৪০টি দেশে আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং প্রসিকিউশন এক্সপার্টদের সঙ্গে কাজ করে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের কিছু আইনজীবীও কাজ করছেন।
আপনার মতামত লিখুন :