শুক্রবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ৯ ফাল্গুন ১৪৩১

বিতর্কিত নির্বাচনে সহায়তাকারী ও তিন সচিবসহ ২৪ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম

বিতর্কিত নির্বাচনে সহায়তাকারী ও তিন সচিবসহ ২৪ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে

দেশে ভোটচুরির সহায়তায় দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা তিন সচিব ও ২১ অতিরিক্ত সচিবকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠিয়েছে সরকার।  বৃহস্পতিবার (২০ফেব্রæয়ারি) এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পাশাপাশি ওএসডিতে থাকা অন্য সচিবদেরও শিগগির বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
এর আগে গত বুধবার ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ৩৩ জেলা প্রশাসককে (ডিসি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়। তারা সবাই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা। যুগ্ম সচিব হিসেবে তারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-বিভাগ কিংবা সংস্থায় দায়িত্ব পালন করছিলেন।
বৃহস্পতিবার(২০ফেব্রæয়ারি বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো তিন সচিব হলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জাকিয়া সুলতানা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামান। তাদের মধ্যে জাকিয়া সুলতানা হত্যা মামলায় কারাগারে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলামের সহধর্মিণী। আতিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আবু হেনা মোরশেদ জামান ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় নরসিংদীর ডিসি ছিলেন। তাকে গত ৬ অক্টোবর ওএসডি করা হয়েছিল। আরেক সচিব কামরুল হাসান ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় মৌলভীবাজার জেলার ডিসি ছিলেন। এর আগে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা এই কর্মকর্তা শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো ২১ জন অতিরিক্ত সচিবের বেশিরভাগই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৭ ও ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তা।
২৪ কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো সম্পর্কে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান বলেন, যাদের নামে দুর্নীতি,ওভারঅ্যাক্ট, আইনের বাইরে গিয়ে অতিরঞ্জিত কিছু করার অভিযোগ আছে, চাকরিবিধির অধীনে যার যেটা প্রাপ্য, সেই সাজা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিগত নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। জনগণের হয়ে সরকার অনেক শক্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং বাস্তবায়ন করছে। সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে যুক্ত থাকাদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা যুক্ত ছিলেন, তাদের তালিকা গোয়েন্দা সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছে। যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের কম, তারা ওএসডি হবেন, আর যাদের চাকরির বয়স ২৫ বছরের বেশি, তারা বাধ্যতামূলক অবসরে যাবেন।এর আগে সরকার পরিবর্তনের পর গত ৯ ডিসেম্বর দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তিনটি নির্বাচনে নানা অভিযোগের বিষয়ে জানতে ৩০ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ডেকেছিল নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। তখন সংস্কার কমিশনের প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেছিলেন,উনারা (কর্মকর্তারা) ওনাদের অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছেন। উনারা বলেছেন উনাদের তেমন কিছু করার ছিল না। ‘কলকাঠি’ অন্য জায়গা থেকে নাড়ানো হয়েছে। এক অর্থে বলতে গেলে, উনারা অসহায় ছিলেন। তবে যারা নিচের কর্মকর্তা,তারা তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি প্রশ্ন তুলেছেন। তারা মূল কথা বলেছেন,আমাদের দেশ একটি ‘পুলিশি রাষ্ট্র’ হয়ে গিয়েছিল।
শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে হওয়া বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়েই বিতর্ক রয়েছে। এর মধ্যে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনকে ‘একতরফা’, ২০১৮ সালে নির্বাচনকে ‘রাতের ভোট’ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকে ‘ডামি নির্বাচন’-এর তকমা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা তিন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন কর্মকর্তাদেরও বিচারের দাবি উঠেছে।
এদিকে গত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) তালিকাও তৈরি হচ্ছে বলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। নির্বাচনে কার কী ভূমিকা ছিল, তা যাচাই-বাছাই করে কঠোর সিদ্ধান্তে যাবে সরকার। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি কালবেলাকে বলেন, আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি। শিগগির তা দৃশ্যমান হবে। যারা অন্যায় করেছেন কেউ ছাড় পাবে না।প্রশিক্ষণরত ৬ সহকারী পুলিশ সুপারকে অপসারণ:এদিকে রাজশাহীর সারদায় প্রশিক্ষণরত ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপার (শিক্ষানবিশ) পদমর্যাদার ছয় কর্মকর্তাকে সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ শাখা-১ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
অপসারিত ছয় সহকারী পুলিশ সুপার হলেন মো. আশরাফউজ্জামান, মানস কীর্ত্তনীয়া, শান্তু রায়, মো. সোহেল রহমান,কাজী ফাইজুল করীম ও সঞ্জীব দেব। এর আগে গত বছরের ১৯ নভেম্বর ৪০তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের সহকারী পুলিশ সুপারদের (শিক্ষানবিশ) প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান অনিবার্য কারণবশত স্থগিত করা হয়।এদিকে প্রশাসন সুত্রগুলো জানায় জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া ও প্রশাসন থেকে যারা সর্মথন কিংবা সহায়তা করা সকলেই শাস্তির মুখোমুখী হবেন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!