শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৫, ৫ পৌষ ১৪৩২

ঢাকার পথে হাদির মরদেহ, নেওয়া হবে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৯, ২০২৫, ০৪:২৯ পিএম

ঢাকার পথে হাদির মরদেহ, নেওয়া হবে ঢাবির কেন্দ্রীয় মসজিদে

ডেইলি খবর ডেস্ক: ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা ৩ মিনিটে হাদিকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৩৮৫ ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রওনা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৬টায় বিমানটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এরপর হাদির মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নেওয়া হবে।
বিমানের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ওসমান হাদির মরদেহ আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে হাদির মরদেহের কফিন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা রয়েছে। বিমানবন্দরের আট নম্বর গেট দিয়ে হাদির মরদেহ বের করা হবে। 
দুপুরে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে জানানো হয়, শরীফ ওসমান হাদির মরদেহ বহনকারী বিমানটি সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। আমাদের জুলাই জজবার প্রাণ, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীরকে গ্রহণ করতে আমরা সবাই এয়ারপোর্ট থেকে শাহবাগগামী রাস্তার দুইপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান গ্রহণ করবো। সেখান থেকে শহিদ ওসমান হাদীকে সর্বসাধারণের দেখার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে আনা হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হাদি সাত দিন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে না ফেরার দেশে চলে গেলেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের লড়াকু যোদ্ধার মৃত্যুতে আগামীকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল রাতে সিঙ্গাপুরে হাদির মৃত্যুর খবর আসার পর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব নেবে রাষ্ট্র। 
আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ৫ মিনিটে হাদির মরদেহ দেশে পৌঁছাবে। আগামীকাল বাদ জোহর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে জানাজা হবে। তবে দাফন কোথায়, সে সিদ্ধান্ত গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত জানা যায়নি। 
ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে বলা হয়, আজ শুক্রবার বাদ জুমা দেশের সব মসজিদ এবং ধর্মীয় উপাসনালয়ে জুলাই জজবার প্রাণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের অকুতোভয় বীর, শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মাগফেরাতের জন্য দেশবাসীকে দোয়ার আহবান জানানো হচ্ছে। এবং সহিংসতা পরিহারপূর্বক নিজ নিজ এলাকায় খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করবার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
হাদির মৃত্যুর পর শোক জানিয়ে ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডি থেকে পোস্ট করেছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। এই মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। 
এনসিপি স্বাস্থ্য সেলের প্রধান ও হাদির চিকিৎসায় নিয়োজিত ডা. আহাদ ভিডিও বার্তায় তাঁর মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ডা. আহাদ জানান, ‘সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল থেকে আমরা খবর পেয়েছি, হাদি ভাই পরপারে চলে গেছেন।’
এর আগে বুধবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, বুধবার সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে হাদিকে দেখতে যান দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. ভিভিয়ান বালাকৃষ্ণান। পরে রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ফোন করে হাদির শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানান। ওই বার্তার পর থেকে ওসমান হাদির শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছিল। অনেকে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে তাঁর জন্য দোয়া ও প্রার্থনা করেন।
গতকাল রাতে ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলা হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন।’
ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদি নির্বাচন করার জন্য প্রচার চালাচ্ছিলেন। গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে তাঁকে গুলি করা হয়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় এভারকেয়ার হাসপাতালে। গত সোমবার দুপুরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সঙ্গে তাঁর ভাই ছাড়াও বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্সরা গিয়েছিলেন।
সিসিটিভি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, ১২ ডিসেম্বর দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে হাদিসহ দুজন একটি ব্যাটারিচালিত রিকশায় যাচ্ছিলেন। তখন মোটরসাইকেলে আসা ব্যক্তিরা তাঁকে গুলি করে পালিয়ে যায়। দ্রæত তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তখনই চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রেখে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে গুলির খন্ডিতাংশ বের করা হয়। সন্ধ্যায় তাঁকে স্থানান্তর করা হয় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে। সেখান থেকে ১৫ ডিসেম্বর তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।
ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মিলিয়ে গুলির ঘটনায় দুজনকে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ফয়সাল করিম মাসুদ গুলি ছোড়েন এবং তাঁকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি চালান আলমগীর হোসেন ওরফে আলমগীর শেখ। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, গুলির ঘটনার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে দেশ ত্যাগ করেন তারা।ফাইলছবি

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!