বুধবার, ০১ মে, ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাম্য-মৈত্রী-শান্তির খুশির ঈদ

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৪, ০৯:১৩ পিএম

সাম্য-মৈত্রী-শান্তির খুশির ঈদ

দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আবার এলো খুশির ঈদুল ফিতর। সাম্য-মৈত্রী-শান্তি আর মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের সওগাত নিয়ে প্রতি বছর আমাদের মাঝে উপস্থিত হয় এই খুশির ঈদ। এটি মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এ দিন হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে যায় মানুষ।

ঈদুল ফিতর একই সঙ্গে উৎসব ও ইবাদতের আধ্যাত্মিক স্বাদ দিয়ে যায় প্রতিটি মুমিনের মনে। ধর্মীয় মূল্যবোধে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলিত করে। ঈদের আনন্দ-চেতনার ছোঁয়া মানবিকতা জাগ্রত করে।

ঈদ অর্থ

‘ঈদ’ শব্দটির আরবি শব্দমূল ‘আউদ’। এর অর্থ যা ফিরে ফিরে বারবার আসে। প্রচলিত অর্থে ঈদ মানে আনন্দ বা খুশি। যেহেতু এ আনন্দ বা খুশি বছর ঘুরে আসে, এ জন্য ‘ঈদ’ বলে নামকরণ করা হয়েছে। ‘ফিতর’ শব্দের অর্থ ভেঙে দেওয়া, ইফতার করা। ঈদুল ফিতর মানে সে আনন্দঘন উৎসব, যা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর আসে।

ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি

ঈদ মানে ঘরে ফেরার উৎসব। ঈদের সময় শহর ছেড়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ গ্রামে যান স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে। ইতিমধ্যে অনেকে ঢাকা ছেড়েছেন। এবার সড়কপথ, নৌপথ কিংবা আকাশপথে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করছেন ঘরমুখো মানুষ। ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলিতে নেই চিরচেনা যানজট। শপিংমল ও বাজার বাদে বেশিরভাগ জায়গায় নেই মানুষের জটলা। ঢাকা যেন অন্য এক ঢাকা। ‘ফাঁকা’ ঢাকায় শুরু হয়েছে ঈদের আমেজ।

ঈদ আনন্দ আর ফুর্তির নয়

ঈদ শুধু নিছক আনন্দ আর ফুর্তির নয়; এ থেকে আমাদের জীবনের জন্য শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছুই। ঈদুল ফিতর মুসলমানদের ধর্মীয় ও জাতীয় জীবনের শ্রেষ্ঠতম আনন্দ উৎসব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। পবিত্র রমজানের রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের শেষেই আসে খুশির ঈদ। পশ্চিমাকাশে উদিত শাওয়ালের রুপালি চাঁদ আনন্দের বারতায় উদ্বেলিত করে আমাদের মন ও প্রাণ। রোজাদারের মনে এর চেয়ে খুশি ওই মুহূর্তে আর কিছুই থাকে না। শাওয়ালের চাঁদ উদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিটি মুমিন মুসলমানের ঘরে আনন্দের ঢল নামে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‍‍`প্রত্যেক জাতিরই আনন্দ রয়েছে। আমাদের আনন্দ হলো ঈদ।‍‍`

নামাজের আগে ফিতরা দেওয়া

ঈদের আগে প্রত্যেক মুসলমান নরনারী, শিশু, এমনকি সদ্য জন্ম লাভকারী শিশুর জন্যও নির্ধারিত ফিতরা আদায় করা জরুরি। যেহেতু ফিতরার টাকা দিয়ে দুস্থ-অসহায়রা ঈদ করেন, সেহেতু ঈদের কিছুদিন আগে এ টাকা আদায় করা সবচেয়ে উত্তম। ফিতরা দেওয়া কারও ওপর কোনো অনুগ্রহ নয়। এটি আমাদের জন্য ইবাদতের অংশ। যাদের মহান আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তারা আল্লাহর রাস্তায় ও গরিব-অসহায়দের প্রতি যতই দান করুক না কেন, এতে তার ধন-সম্পদ কমবে না; বরং বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

গান দেয় পূর্ণতা

পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল, বিশেষ করে বাংলাদেশে ঈদের একটি গান অত্যন্ত জনপ্রিয়। ঈদের আগের রাত থেকে টেলিভিশন, রেডিও থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকান, মার্কেট সর্বত্র বাজতে শুরু করে, ‍‍`ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।‍‍` এই একটি গানই ঈদুল ফিতরের জানান দিতে যথেষ্ট।

কালজয়ী গানটি কবি নজরুলের

ঈদুল ফিতর নিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‍‍`ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ‍‍` কালজয়ী গানটি বাঙালি মুসলমানের ঈদ উৎসবের আবশ্যকীয় অংশ। কবির শিষ্য শিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমদ-এর অনুরোধে ১৯৩১ সালে কবি নজরুল এই গান রচনা ও সুরারোপ করেন। গানটি লেখার চার দিন পর শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের গলায় গানটি রেকর্ড করা হয়। রেকর্ড করার দুই মাস পরে ঈদের ঠিক আগে আগে এই রেকর্ড প্রকাশ করা হয়। গ্রামাফোন কোম্পানির রেকর্ড প্রকাশ করে।

সবার মুখে মুখে যে গান

ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ
তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ।
তোর সোনা-দানা, বালাখানা সব রাহে লিল্লাহ
দে যাকাত, মুর্দা মুসলিমের আজ ভাঙাইতে নিঁদ
ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।

ঈদ আনন্দের সঙ্গে ইবাদতও

ইসলামের উৎসবগুলো আনন্দের সঙ্গে ইবাদত হিসেবেও পরিগণিত। তেমনি দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর বা ঈদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো আনন্দকে বিলিয়ে দিতে বেশি করে দান-খয়রাত করা। সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমানের (হোক সে শিশু) ওপর ফিতরা আদায় করা অবশ্য কর্তব্য। আর ঈদুল ফিতর নামটির তাৎপর্যও এখানেই। আসলে প্রকৃত ঈদ ভোগে নয় ত্যাগে। ত্যাগের মহিমায় নিজেকে মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতেই ঈদ এবং এ ত্যাগই রোজার শিক্ষা। ঈদের নামাজের মাঠে আগমনকারীদের উদ্দেশে আল্লাহ বলেন, ‍‍`বাড়ি যাও আমি তোমাদের মাফ করে দিলাম।‍‍`

ঈদের বাণী

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে তারা শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করেছেন।

ঈদ মোবারক

হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে নিজের জন্য, দেশের ও বিশ্ব মুসলিমের জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই। আমাদের ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জীবনের সব স্তরে রমজানের শিক্ষা বাস্তবায়ন করি। ঈদের চেতনায় মানবিকতাকে জাগ্রত করে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিই সবার সঙ্গে ভেদাভেদহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!