প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গত ৫ আগস্ট থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় দেশে মোট ৮৮টি মামলা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান প্রেস সচিব। তিনি আরও জানান,‘সাম্প্রদায়িক হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শফিকুল আলম আরও জানান, ২২ অক্টোবরের পরের ঘটনাগুলোর আপডেট দ্রæতই দেওয়া হবে।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (০৫ ডিসেম্বর) অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে মুসলিম,হিন্দু,খ্রিষ্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের শীর্ষ নেতারা বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক কোনো বিভেদ নেই। তারা বলেন,এখানে সব ধর্মের মানুষ সুখে-শান্তিতে আছেন।
বৈঠকের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টা ধর্মীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন জেগেছে। সেগুলোর জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্যই আপনাদের সঙ্গে বসা। জুলাই অভ্যুত্থানের পরপরই এই সরকার যখন গঠন হয় তখন আমি বিমানবন্দরে সবার কাছে আন্তরিকভাবে একটা আহ্বান জানিয়েছিলাম যে, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত থাকবে। নানা ধর্ম ও নানা রীতিনীতি থাকবে। কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য, এটাতেই জোর দিয়েছিলাম। আমরা মতপার্থক্য সত্বেও কারও শত্রু নই। সবাই একই কাতারে চলে আসি। আমাদের পরিচয় আছে, আমরা বাংলাদেশি এবং এক পরিবারের সদস্য।
সংলাপে আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের শায়খ আহমদুল্লাহ বলেন, আমাদের মধ্যে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় আছে। আমরা মন খুলে কথা বলেছি এবং প্রধান উপদেষ্টা মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, একটি সুন্দর সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে তারা কাজ করছেন। যেখানে কোনো ভয় থাকবে না। আমরা ধর্মীয় জায়গা থেকে দায়িত্বশীল এবং মুসলমানরা ধৈর্য ও সংযমের পরিচয় দিয়েছেন। ফরিদপুরে চারজনকে হত্যা করা হয়েছে নির্মমভাবে। সেখানেও ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ ধর্মীয় সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। আমরা সম্প্রীতির বাংলাদেশকে বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে যেতে চাই। সবাই মিলে বলছি, শান্তি-সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ব। ইসলাম আমাদের অন্য ধর্মের ব্যাপারে দায়িত্বশীল হতে শিক্ষা দিয়েছে। সংখ্যালঘু ভাইদের নিরাপত্তার জন্য সবাই কাজ করছি। সরকারও তার জায়গা থেকে কাজ করছে। আমাদের মধ্যে কোনো ফাটল নেই।
তিনি আরও বলেন, যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষে কথা বলতে হবে। তাদের জবাব দিতে হবে। আমাদের ওপর মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া বলেন, আমরা একটি মানবিক রাষ্ট্র চাই। যে পরিবেশটা ৫ আগস্টের পর তৈরি হয়েছে। আমরা শান্তি-সম্প্রীতিতে বসবাস করতে চাই। যেখানে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষ ও নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী থাকবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন করা যায় কি না সেই প্রস্তাব দিয়েছি। এই কর্মসূচি যাতে বিভাগীয় শহরেও করা যায়, সেটি বলেছি। আমাদের চার ধর্মের মধ্যে যে ঐক্য সেটি যেন অটুট থাকে। সব অধিকার যাতে নির্বিঘ্ন হয় এসব বিষয়েও কথা বলেছি। ভিক্ষু সুনন্দ প্রিয় বলেন, আমরা সব ধর্মের মানুষ যাতে সুখে-শান্তিতে ভালো থাকতে পারি, সেজন্য বলেছি। আমরা দেশে ভালো আছি। কে কোথায় বা কোন দেশে কি প্রচার করছে, সেটা তাদের বিষয়। আমরা ভালো আছি, শান্তিতে আছি।
আপনার মতামত লিখুন :