শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে ভারত যা বলল

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

প্রকাশিত: এপ্রিল ১৮, ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলের বিষয়ে ভারত যা বলল

কড়িডোড় ব্যবহারে ভারতের বন্দরগুলোয় যানজট লেগে থাকা ও তা নিরসনের জন্য ট্রান্সশিপমেন্ট বা কড়িডোড় বাতিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল।ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল ইস্যুতে এক প্রশ্নের জবাবে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) তিনি এমন বলেছেন, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জার্মান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‍‍`ভারতের বন্দরগুলিতে যানজট তৈরি হচ্ছে। পণ্য পরিবহন করতে বহু সময় লেগে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ওই জট কাটাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’
রণধীর আরও বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও নেপাল-ভুটানে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। অর্থাৎ, ওই দুই দেশে ভারতের মধ্য দিয়ে বাণিজ্য করতে পারবে বাংলাদেশ।’
ড. ইউনূস ও মোদির বৈঠকের বিষয়ে এই মুখপাত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকেও জানিয়েছেন, ভারত চায় বাংলাদেশের সঙ্গে ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক। আমরা গণতান্ত্রিক, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা বাংলাদেশ গঠনের পাশে আছি।’কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রণধীরের এই বক্তব্য প্রত্যাশিত ছিল। ট্রান্সশিপমেন্ট বন্ধের নোটিশেও ভারত এই কথাগুলোই লিখেছিল। শুধু তা-ই নয়, কিছুদিন আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সেখানে ঠিক এই কথাগুলোই লেখা হয়েছিল।তারা আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা ভারত বাংলাদেশের পাশে আছে। ঈদের বার্তাতেও একই কথা বলা হয়েছিল। সম্প্রতি ব্যাংককে এক সম্মেলনে ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসেন মোদী। সেখানেও ভারতের তরফে এই কথাগুলোই বলা হয়েছিল।
বাংলাদেশ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে রণধীর আরেক বাক্যে বলেছেন, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার ওই বাক্যটি যথেষ্ট ইঙ্গিতপূর্ণ। রণধীর বলেছেন, আমাদের ঘোষণার আগে বাংলাদেশের তরফে কী ঘটেছে, তার দিকেও নজর দিতে হবে।‍‍`বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘ভারতের এই ঘোষণার আগে বাংলাদেশ তিনটি স্থলবন্দর বন্ধ করেছে। বন্ধ করা হয়েছে একটি স্থলবন্দরের কার্যক্রম। ভারত থেকে সুতো আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তও আগেই নেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে চীনে গিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ড. ইউনূস। সেই মন্তব্য ভারত খুব ভালো চোখে দেখেনি।ওপি জিন্দল বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত জানিয়েছেন, ‍‍`ভারতের এই পদক্ষেপ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। দুই দেশের মধ্যে যে টানাপোড়েন চলছে, তার জেরেই ভারত এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।‍‍`
তার মতে, বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের বক্তব্য এ বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছে।আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছেন,ভারতের এই সিদ্ধান্ত জাতীয় স্বার্থ রক্ষার আরও একটি নজির। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই বিষয়ে কোনো আপস করেন না। এই পদক্ষেপ ভারতের জাতীয় নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করবে।’
ইন্দো-বাংলা চেম্বার অব কমার্সের উত্তর-পূর্ব ভারতের সাধারণ সম্পাদক অমরেশ রায় বলেছেন,‍‍`সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব ভারত নিয়ে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা যে মন্তব্য করেছেন, আমরা তা সমর্থন করি না। ফলে ভারতের এই অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই।‍‍`
গত মার্চ মাসেই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারত থেকে সুতো রপ্তানি বন্ধ করা হবে। এর ফলে ভারতের সুতো ব্যবসায়ীদের বড়সড় সমস্যার মুখে পড়তে হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।গত সপ্তাহে বিবৃতি প্রকাশ করে ভারত জানিয়েছিল, নেপাল ও ভুটান ছাড়া ভারতের বন্দরগুলো বাংলাদেশকে বাণিজ্যের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।এর আগে ২০২০ সালে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিতে স্থির হয়েছিল, ভারতের বন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। অর্থাৎ ভারতের বন্দর নিজেদের বাণিজ্যের কাজে বাংলাদেশ ব্যবহার করতে পারবে।গত ৮ এপ্রিল সপ্তাহে সেই পরিষেবা বন্ধ করার ঘোষণা করেছে ভারতের সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডাইরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস (সিবিআইসি)।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!