সারাদেশে যৌথবাহিনীর টহল জোরদার

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর টহল জোরদার করেছে সরকার। সোমবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে অপারেশন আরো জোরদার করা হচ্ছে। সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে অপারেশন আরো জোরদার করা হবে। অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে আরো টহল বাড়ানো হবে, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি করা হবে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, সভায় আইনশৃঙ্খলার সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়ন বিষয়ে কথা হয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত বাহিনীগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন,স্বাধীনতার এই ৫৩ বছরে আমাদের কোনো সাংবাদিক লেখেননি যে, আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি খুবই ভালো। আমি বলব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক। তবে আরো উন্নতি করার অবকাশ রয়েছে। তিনি বলেন, বনশ্রীর ঘটনাটি দুঃখজনক। আগে এ ধরনের ঘটনা জানতে দুই দিনও সময় লেগে যেত। তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে এখন মানুষ সাথে সাথে এটি জেনে যাচ্ছে। এ রকম ছোটখাটো ঘটনা আগেও ঘটেছে, তবে ভবিষ্যতে যাতে আর না ঘটে সে বিষয়ে করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা চাই না এ ধরনের ঘটনা আর ঘটুক।
অপারেশন ডেভিল হান্ট চলাকালে এমন পরিস্থিতি কেন- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ডেভিল হান্ট অপারেশন চালু করা হয়েছে যাতে এই ধরনের ঘটনা ঘটলে দ্রæত পদক্ষেপ নেয়া যায়। রাজশাহীর ঘটনায় সাথে সাথে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেসব ওসি মামলা নিতে গড়িমসি করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে, বরখাস্তও করা হয়েছে। অন্য সময় হলে এটা কিন্তু হতো না। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের অনুসন্ধানী রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পুলিশের অনেক সিনিয়র অফিসারকে ক্লোজ করা হয়েছে। সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, আপনারা সত্য ঘটনা প্রকাশ করুন। বিদেশী মিডিয়া যখন আমাদের নিয়ে অপপ্রচার চালিয়েছে তখন আপনারা সত্য ঘটনা প্রকাশ করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছেন।
এর আগে গতকাল বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কোর কমিটির সভা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম যৌথবাহিনীর অভিযানের সিদ্ধান্তের বিষয় সাংবাদিকদের জানান। শফিকুল আলম বলেন, পুরো ঢাকা এবং যেসব জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে, সেসব জায়গায় আমরা টহল (পেট্রোলিং) বাড়াব। যতটা সম্ভব টহল বাড়াব এবং এই টহল সন্ধ্যা থেকে পুরো ঢাকা শহরে দেখা যাবে। প্রেস সচিব বলেন, যৌথভাবে টহল দেয়া হবে। পুলিশ, আর্মি, অনেক ক্ষেত্রে নেভি, বিজিবি, এরা সবাই একসাথে কম্বাইন্ড পেট্রোলিং করবেন।
শফিকুল আলম বলেন, অনেক জায়গায় চেকপোস্ট বসবে। জায়গায় জায়গায় চেকপোস্ট বসিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটর করা হবে। তিনি বলেন, এই সভায় আরো সিদ্ধান্ত হয়েছে গোয়েন্দা তথ্য বাড়ানোর। আমাদের যেসব গোয়েন্দা সংস্থা আছে, তারা তাদের মতো করে আরো তথ্য সংগ্রহের কাজ বাড়াবেন। সেই অনুযায়ী আমরা অ্যাকশনে যাবো। তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় হচ্ছে ঢাকা খুব যানজটপ্রবণ নগরী। সে জন্য এক জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হলে সেই জায়গায় যেতে দেরি হয়। এ জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে প্রচুর মোটরসাইকেল দেয়া হবে। খুব দ্রæত মোটরসাইকেলগুলো কেনা হবে। যাতে দু’জন করে খুব দ্রæত ঘটনাস্থলে যেতে পারেন। এটা পুলিশের ক্ষেত্রে অ্যাকশন নেয়া হচ্ছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও নেয়া হবে। প্রেস সচিব আরো বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি গুরুত্বসহকারে নিচ্ছে বলেই আজকে মিটিং হয়েছে। আমরা চাই, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যত দ্রæত সম্ভব উন্নত করা। কারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্ব সরকারের। আমরা এই কাজটি সুচারুরূপে করতে চাই।