অন্তর্বতী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘অন্তর্র্বতী সরকারকে আমরা নিরপেক্ষ মনে করছি। বিএনপি কেন এমনটি মনে করছে না, এটি তাদের স্পষ্ট করা উচিত।’ তিনি বলেন,নির্বাচনের সময় এ ধরনের বক্তব্য এলে সুস্পষ্টভাবে বলা যেতে পারে; নিরপেক্ষতার স্বার্থে সরকারের কোন কোন বিষয় পরিবর্তন করা উচিত। তখন সরকার এটি বিবেচনা করবে।
বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন নাহিদ ইসলাম। বুধবার বিবিসি বাংলাকে দেওিয়া সাক্ষাৎকারে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকার নিরপেক্ষ থাকতে না পারলে নির্বাচন করতে নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।’ ছাত্ররা রাজনৈতিক দল গঠন করলে সরকার থেকে ‘বেরিয়ে আসা উচিত’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তার বক্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। প্রতিক্রিয়া জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহও। তারা তিনজনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
বিবিসি বাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারেও একই সুরে কথা বলেছেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নিরপেক্ষতার কথা বললে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বা সাংবিধানিক পদে যদি বিএনপিপন্থী লোকজন থাকে সেটিও বিবেচনা করতে হবে। এখনো তো এটির সময় আসেনি।’নাহিদ বলেন, এক-এগারো এবং মাইনাস টুর আলাপটা বেশ কিছুদিন আগে সর্বপ্রথম বিএনপি রাজনীতির মাঠে এনেছে। বিএনপি কেন জানি মনে করে এই সরকার হয়েছে শুধু একটি নির্বাচন দেওয়ার জন্য। এই সরকারকে তারা নির্বাচিত বলে না, এটি তাদের ভুল বক্তব্য।
নির্বাচনের মাধ্যমে পটপরিবর্তন হলে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসে। এখানে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পটপরিবর্তন হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার এসেছে অন্তর্র্বতী সময়ের জন্য। যে সরকার বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন করবে। বিচার ও সংস্কার আমাদের সমান প্রায়োরিটি।’
সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘ছাত্ররা সরকারে এসেছি ওয়াচডগের ভূমিকা পালন করতে। যাতে করে সরকার গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিশ্রæতি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে। আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ এ আরাফাত একটি কথা বলেছে, এই সরকার অবৈধ ও অনির্বাচিত। তাদের মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।’
‘একই টোনে বিএনপিও কথা বলছে। এটি কিন্তু সন্দেহের সৃষ্টি করে। আমি মনে করি না এটি তারা ওই উদ্দেশ্য থেকেই বলেছে। তবে তাদের কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। নিরপেক্ষ সরকার মানে এই নয় যে আওয়ামী লীগকে সুযোগ দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রচলিত ধারায় আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রধান দুই দল। তাদের মধ্যে নিরপেক্ষতা রাখবে, এমন একটি সরকার নির্বাচনের সময় প্রত্যাশা করা হতো। এখন এই বাস্তবতা নেই। আওয়ামী লীগ বিতাড়িত হয়েছে, বিচারপ্রক্রিয়া চলছে। এই সরকারের অবশ্যই জুলাই গণ-অভুত্থানের পক্ষপাতিত্ব আছে। ফলে নিরপেক্ষ সরকারের নামে আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দেওয়ার ষড়যন্ত্র আমরা মানব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা প্রথম থেকে বলেছি রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে চাই। আওয়ামী লীগকে ভুল স্বীকার করতে হবে। তাদের মধ্যে সে প্রবণতা নেই। আওয়ামী লীগের যারা গুম, খুন হত্যাকান্ড, সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং ভোট ডাকাতির সঙ্গে জড়িত তাদের যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার হবে।’
তিনি এ-ও বলেন, ‘যারা এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, কিন্তু সমর্থক ছিলেন বা তৃণমূলের নেতাকর্মী ছিলেন তাদের আমরা ইনডেমনিটি দিতে চাই। তারা যেকোনো রাজনৈতিক দলে যেতে পারবে। তাদের সেই রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার রক্ষিত হবে। এভাবে রিকনসিলিয়েশন প্রক্রিয়া হতে পারে। কিন্তু তার আগে বিচার হবে।’
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নামে রাজনীতি করার আর অধিকার নেই। এ বিষয়ে ঐকমত্য হতে পারলে আমরা ব্যবস্থা নেব। নির্বাচনের আগে আদালত, ট্রাইব্যুনাল বা নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছাত্র উপদেষ্টারা নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে তিনি আর সরকারে থাকতে পারবেন না। সরকারে থেকে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই তারা সরকার ছেড়ে দেবেন। বাইরে ছাত্ররা যে রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে, সেখানে আমরা প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করছি না। বৈষম্যবিরোধীর নতুন কমিটি হয়েছে, জাতীয় নাগরিক কমিটির আলাদা বডি আছে। তারা তাদের মতো কাজ করছে। আমরা দল গঠন পপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে চাইলে সরকার ছেড়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু উনি যেটা বললেন যদি রাজনৈতিক দল গঠন হয় তাহলে আমরা থাকতে পারব না। আমার তো ওই দলের সঙ্গে সম্পর্কই নেই, তাহলে আম কেন থাকতে পারব না? ছাত্র উপদেষ্টারা বাইরের রাজনীতির সাথে যথাযথ দূরত্ব বজায় রেখেই আছে।সূত্র : বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :