শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১

পলাতক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস-এপিএসরাও বানিয়েছেন টাকার পাহাড়

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২৪, ০২:৩১ পিএম

পলাতক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পিএস-এপিএসরাও বানিয়েছেন টাকার পাহাড়

সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসিনার এপিএস-পিএস ও ব্যাক্তিগত কর্মচারি-কর্মকর্তাসহ বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে নেতা-চেলাচামুন্ডাদের বিপুল সম্পদ অর্জনের ইতিহাস তো সবারই জানা। এ অর্থ সম্পদের পাহাড় কেবল তৎকালীন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরাই গড়ে তুলেননি, তাদের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) ও সহকারী ব্যক্তিগত সচিবরাও (এপিএস) বানিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।
ক্ষমতার খুব কাছাকাছি থাকায় এই পিএস-এপিএসরা লাগামহীন অর্থের নাগাল পেয়ে সুযোগের ব্যবহার করতে ছাড়েননি কেউই। নানাভাবে দু’হাতে লুটে নিয়েছে বিপুল অর্থ।রাতারাতি মালিক হয়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ির।
এরমধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন (সহকারী) জাহাঙ্গীর আলমের ৪০০ কোটি টাকার মালিকানার খবর কে না জানেন। এ তথ্য হাসিনা নিজেই এক সংবাদ সম্মেলনে দিয়েছেন। একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রীর ফোন কল ধরা, মিটিংয়ের সময়সূচির হিসাব রাখা কতটা লাভজনক হতে পারে তা এই পিএস-এপিএসরা গত ১৫ বছর ধরে উপভোগ করেছেন। কাগজ-কলমের হিসাব-কিতাবই তাদের বিলাসবহুল জীবনের যাত্রা তৈরি দিয়েছে। বসদের নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন টেন্ডার কারসাজি, কমিশন এবং চাকরিতে পদোন্নতি বা বদলির মতো কাজে কাউকে ‘সহযোগিতার মাধ্যমে তারা পকেট ভারী করেছেন কোটি টাকায়।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর দুর্নীতি দমন কমিশন সাবেক ক্ষমতাসীনদের ব্যাপক দুর্নীতির বিরুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। ইতোমধ্যে অন্তত ২৫ সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে দুদক। কিন্তু দুদকের নজর তাদের পিএস-এপিএসদের উপরও ছিল। কারণ,তারা ক্ষমতাসীনদের কাছে থাকাকে শোষণ ও উপার্জনের হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছিলেন।এমন অন্তত ১০ সচিব দুদকের তদন্তাধীন রয়েছে। তারা এখন তাদের সন্দেহজনক বিলাসী জীবনযাপনের বিষয়ে প্রশ্নের মুখে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক এপিএস হাফিজুর রহমান লিকু,সাইফুজ্জামান শিখর.সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক পিএস ড. হারুন অর রশিদ বিশ্বাস ও তার এপিএস মনির হোসেন,পিআরও আপু, সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ানের সাবেক এপিএস মো. শাহাবুদ্দিন, সাবেক নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাবেক এপিএস এএনএম আহমদুল বাশার, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সাবেক এপিএস মিজানুর রহমান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের এপিএস মীর মোশাররফ হোসেন, সাবেক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রীর ড. এনামুর রহমানের এপিএস শামীম আহমেদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের এপিএস হাসনাত হোসেন ও সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর সাবেক এপিএস এমদাদুল হক।
অবৈধভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক এপিএস মনির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। লিকুর বিরুদ্ধে দুদকে দাখিল করা অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার স্ত্রীর নামে রামদিয়া কাশিয়ানীতে মেসার্স রাফি এগ্রো অ্যান্ড ফিশারিজের নামে কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন। এ ছাড়া, তিনি মোহাম্মদপুরের মধু সিটিতে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন এবং উত্তরায় একটি সরকারি প্লট অবৈধভাবে নিয়েছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, লিকু গোপালগঞ্জে ১০ ডিসিমাল জমি কিনেছেন, পৈতৃক জমিতে পাঁচতলা বাড়ি তৈরি করেছেন এবং তার শ্যালকের নামে ছয়তলা ও ১০তলা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছেন।
তিনি কুয়াকাটায় ওশান ব্লু রিসোর্ট এবং তার আত্মীয়দের নামে বিভিন্ন সম্পত্তির মালিক বলে জানা গেছে।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, হারুন অর রশিদ বিশ্বাস ও মনির হোসেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে ঘুষ সিন্ডিকেটের মূল হোতা ছিলেন।তারা জেলা পুলিশ সুপার এবং অন্যান্য পদে নিয়োগের জন্য ঘুষ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
এনামুর রহমানের এপিএস শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে ময়মনসিংহের ত্রিশালে একটি এগ্রো পার্কসহ বেশ কয়েকটি ব্যবসায়িক উদ্যোগ ও সম্পত্তির মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
তিনি পোড়াবাড়িতে ১০০ বিঘা জমিতে মাছের খামার ও ‍‍`বেলা‍‍` নামে একটি ইনস্টিটিউট এবং সাভারে দুটি ফ্ল্যাট ও গুলশানের নাভানা টাওয়ারে একটি অফিসের মালিক বলে অভিযোগ রয়েছে।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সাবেক এপিএস বাশার ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিআইডবিøউটিএতে একচেটিয়া আধিপত্য তৈরি করেছিলেন বলে জানা গেছে। বাশার দু’হাতে নানাভাবে লুটে নিয়েছে শতশত কোটি টাকা। মন্ত্রনালয়ে গড়ে তুলেছিলেন দুর্নীতিবাজ-ঠিকাদার কালেকশন বদলীবাণিজ্যর সিন্ডিকেট। দেশের বিভিন্ন সংগঠনের দাবি এসব দুর্নীতিবাজদেও অবৈধ সম্পদ রাষ্ট্রের অধিনে বাজায়াপ্ত করতে হবে। দিতে হবে কঠোর সাজা।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!