রাজনীতিতে ২০২৪ সাল দেশের উত্থান-পতনের এক অবিস্মরণীয় বছর। গলিপথ পথ থেকে রাজপথে আসে রাজনীতির বাকে বাকে থাকা সমস্ত প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধাপ। যেমন ২০২৪ সালের বছরের শুরুতে নির্বাচনী উত্তেজনা ও কোটা আন্দোলন দেশকে এক নতুন মোড় নিয়ে যায়। ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের চাপে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অর্ন্তবতী সরকার গঠন এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দেশের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনা করে। সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধুুুুুুুুুুুুু মামুনের মুক্তিও ছিল আলোচনায়। নতুন সরকার এসে ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল এ বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।
২০২৪ সাল ছিল বাংলাদেশের জন্য এক পরিবর্তনের বছর। বছরের শুরুতে নির্বাচনী উত্তেজনা ও রাজনৈতিক সংঘাতের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের সূচনা হয়। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলগুলোর ব্যাপক বর্জন ও প্রতিবাদের পর, আওয়ামী লীগ সরকার একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করে এবং ক্ষমতায় পুনরায় অধিষ্ঠিত হয়। তবে এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়,যা দেশে গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ফলস্বরূপ, কোটা আন্দোলনসহ অন্যান্য সরকারবিরোধী আন্দোলন তীব্র আকার নেয়,যার ফলে শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসন শেষে সরকার পতন ঘটে।
এরই মধ্যে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে সরব হয়ে ওঠে, যা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করে। প্রথমে এই আন্দোলন দমনে সরকার ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে, কিন্তু তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। এরপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে নামানো হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে। শেখ হাসিনার এই দমন-পীড়নমূলক নীতির ফলে আন্দোলন আরও জোরালো আকার ধারণ করে এবং এক পর্যায়ে এটা কেবল শিক্ষার্থীদের দাবি নয়, বরং সাধারণ জনগণের জন্যও সরকারের শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মঞ্চে পরিণত হয়।
শুরু হয় শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে একদফা আন্দোলন। এই আন্দোলন দ্রæতই জনজাগরণে পরিণত হয়, যেখানে তরুণ ছাত্র ও সাধারণ জনগণ সরকারের প্রতি তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে রাস্তায় নেমে আসে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে সর্বোচ্চ শক্তি ব্যবহারের নির্দেশ দেন। বুলেটবিদ্ধ হয়েশহীদ হন সহস্র তরুণ ছাত্র-জনতা, যা পুরো জাতিকে শোক ও ক্ষোভে উদ্দীপ্ত করে। অবশেষে, ছাত্র-জনতার রক্তের কাছে ধরাশায়ী হয়ে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে সূচিত হয় এক নতুন অধ্যায়ের। গণতন্ত্র, সুশাসন এবং জনঅধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশ নতুন যাত্রাপথে এগিয়ে যেতে শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্র্বতী সরকার দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। এই সরকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা,গণতন্ত্রকে সুসংহত করা এবং সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একাধিক সংস্কার কমিশন গঠনসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ গ্রহণ করে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ছয় বছরের কারাবাস থেকে মুক্তি পান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। খারিজ হয় একের পর এক মামলা। তার মুক্তি শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য নয়, বরং গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে একটি বড় বিজয় হিসেবে বিবেচিত হয়।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া ২০২৪ সালের রাজনীতিতে একটি অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগের সহিংস ভূমিকা এবং তার আগে তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড ও দুর্নীতি চাঁদাবাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে আসে। এই প্রেক্ষাপটে,ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের পরপরই বিভিন্ন মহল থেকে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। যদিও সরকার এই দাবি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি,তবুও এই বিতর্ক দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হয় জামায়াতে ইসলামী। বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি সক্রিয় হয় রাজপথেও।
বছরের শেষ দিকে এসে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন এক আলোচনার সূচনা হয়, যা সংস্কার, নির্বাচন এবং ‘কিংস পার্টি’ নিয়ে ঘুরতে থাকে।
এ বছরটির ঘটনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা ভবিষ্যতের রাজনীতি এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। ২০২৪ সালে স্বৈরচার উচ্ছেদটি ইতিহাসে অমর হয়ে প্রজন্ম-টু প্রজন্ম পড়বে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পরিবর্তনগুলো দেশটির রাজনৈতিক কাঠামো এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হবে। ঘটনাবহুল বছরটি বহুদিন মনে থাকবে, মনে রাখবে।
আপনার মতামত লিখুন :