দেশে গত দেড় দশকে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, পুঁজিবাজারসহ আর্থিক খাতে নজিরবিহীন যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি সংঘটিত হয়েছে, তার অন্যতম সহযোগী ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক অধ্যাপকরা। কিন্তু গঠিত শে^তপত্র কমিটির শে^তপত্রে তাদের কোনো অপরাধের তথ্য নেই, তারা অপরাধের বাইরেই থেকে গেলেনে।
কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কেউ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে ব্যাংক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহযোগীর ভূমিকা রেখেছেন। আবার কেউ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান কিংবা পরিচালক হিসেবে বাজার কারসাজিতে সহায়তা করেছেন। সরকারি-বেসরকারি যেসব ব্যাংকে সবচেয়ে বেশি অর্থ লোপাট হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা সেগুলোরও নেতৃত্ব বা নীতিনির্ধারণী ভূমিকায় ছিলেন। অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহযোগিতার দায়ে অভিযুক্ত এসব অধ্যাপকের সিংহভাগই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের। অথচ তারা থেকে গেলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে, প্রশ্ হচ্ছে তারাহুড়োর কারনে কি তাহলে ড, দেবপ্রিয় ভুলে গেছেন?
দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অনিয়ম-দুর্নীতিতে সহযোগী কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে নেতৃত্বের ভূমিকা রাখা এ অধ্যাপকদের তালিকায় নাম রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবুল বারকাত, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও ড. এম খায়রুল হোসেন, অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. খন্দকার বজলুল হক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন বাংলাদেশের (আইসিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিব উদ্দিন আহমেদ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ,সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ইসলামী ব্যাংকের সাবেক পরিচালক ড. মো. কামাল উদ্দিন এবং ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সাবেক পরিচালক ড. সেলিম মাহমুদ প্রমুখের। আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত এসব অধ্যাপকদের সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন কিংবা আছেন।
শুধু ঢাকা নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরও বেশ কয়েকজন অধ্যাপক আর্থিক খাতে অনিয়মে সহযোগী ভূমিকা রেখেছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আনোয়ারুল আজিম আরিফ। তিনি ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে ছিলেন। আর সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন ২০১৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মো. সেলিম উদ্দিন ও ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ইসলামী ব্যাংকের প্রভাবশালী পরিচালক ছিলেন। এর মধ্যে সেলিম উদ্দিন প্রায় সাত বছর ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক থাকার পর ২০২৩ সালের জুনে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ পেয়েছিলেন। আর বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী ছিলেন বিএসইসির আলোচিত কমিশনার। তার বিতর্কিত ভূমিকা দেশের মিউচুয়াল ফান্ড খাতকে খাদের কিনারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার ইসলামী ব্যাংকে নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির সময়ে ব্যাংকটির শরিয়াহ বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ড. মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন তালুকদার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শরিয়াহ্ বোর্ডেরও চেয়ারম্যান ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু গত দেড় দশকে অধ্যাপকরা যেভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির সহযোগী হয়েছেন, তাতে সে সম্মানও ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। বুদ্ধিজীবী হিসেবে পরিচিত আওয়ামীপন্থী অধ্যাপকরা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান নেননি। বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারাও দুর্নীতির মাধ্যমে লুণ্ঠিত সম্পদের অংশীদার হয়েছেন।
আর্থিক খাতে যেসব অনিয়ম হয়েছে, শ্বেতপত্রে সেগুলোর ধরন ও লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। সরকার চাইলে তদন্তের মাধ্যমে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
গত আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নিয়ে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিবিষয়ক একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। এরই মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তাদের প্রতিবেদনে দেশের আর্থিক খাতের অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হলেও এর পেছনে থাকা কুশীলবদের বিষয়টি উঠে আসেনি। বিষয়টি নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক খাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে প্রশ্নও উঠেছে।
এ বিষয়ে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আর্থিক খাতে যেসব অনিয়ম হয়েছে, শ্বেতপত্রে সেগুলোর ধরন ও লক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। সরকার চাইলে তদন্তের মাধ্যমে এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপরই বাংলাদেশ ব্যাংকসহ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পর্ষদে নিজ দলের নেতা, দলীয় আদর্শের শিক্ষক, আমলা ও বুদ্ধিজীবীদের নিয়োগ দেয়া শুরু করে। ২০০৯ সালের ১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিউর রহমানকে নিয়োগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। প্রথম মেয়াদের পর ২০১২ সালে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে গভর্নর নিয়োগ দেয়া হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে তুমুল সমালোচনার মুখে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পদত্যাগ করেন তিনি।
দেশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যাংক লুণ্ঠনের পটভূমি তৈরি হয় আতিউর রহমানের সময়ে। ওই সময় বেসিক ব্যাংকের লুণ্ঠনের ঘটনায় পুরো ব্যাংক খাতের ভিত নড়ে ওঠে। এরপর সামনে আসে সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারি ও জনতা ব্যাংকের বিসমিল্লাহ গ্রæপ কেলেঙ্কারির ঘটনা। এর মধ্যেই ২০১০ সালে দেশের পুঁজিবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ধস নামে। পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয় লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। ঋণ পুনর্গঠনের নামে নজিরবিহীন সুবিধা দেয়া হয় বড় ঋণখেলাপিদের। আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় এক সঙ্গে নয়টি নতুন ব্যাংকেরও লাইসেন্স দেন আতিউর রহমান।
আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে অধ্যাপকদের নিয়োগ দেয়া শুরু করে। জনতা ব্যাংকের পর্ষদে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত। তিনি ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। তার সময়ে জনতা ব্যাংকে যে লুটপাট শুরু হয়, তা গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুতি পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
অভিযোগ আছে, পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ এবং রাজনৈতিক প্রভাবের অপব্যবহারে লুণ্ঠিত হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটি। এক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির সব ক্ষতই ফুটে উঠতে শুরু করেছে। যে পরিমাণ লুণ্ঠন হয়েছে, তাতে সরকারি সহায়তা না পেলে জনতা ব্যাংকের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হবে। বর্তমানে জনতা ব্যাংকের খেলাপিযোগ্য ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকায়। ব্যাংকটির ক্রমবিপর্যয় দৃশ্যমান হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত আবুল মাল আবদুল মুহিতও এক সময় বলেছিলেন, ‘জনতা ব্যাংক একসময় সেরা ব্যাংক ছিল। কিন্তু আবুল বারকাতই ব্যাংকটি শেষ করে দিয়েছেন।’এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেন, ‘আমার জ্ঞাতসারে জনতা ব্যাংকে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতি সংঘটিত হয়নি। ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুপারিশে পর্ষদে ঋণ প্রস্তাব আসে। তারপরও যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেই আমরা ঋণ দিয়েছি। আমার মেয়াদে জনতা ব্যাংক সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা ও নিট মুনাফা করেছিল। ঠিক ওই সময় তিনি (সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত) বলেন, ‘ব্যাংকটির স্বাস্থ্য ভালো না। আমার পরিষ্কার উত্তর ছিল যে একটি লোকসানে থাকা ব্যাংককে মুনাফায় নিয়ে আসা হয়েছে। সে সময় সংবাদ সম্মেলনে করে আমি এ উত্তর দিয়েছিলাম।’
একইভাবে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. খন্দকার বজলুল হককে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম এ সদস্য পরবর্তী সময়ে দলটির পরিবেশ উপকমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন। একই সময়ে ব্যাংকটির পর্ষদে ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা পরিচালক হিসেবে স্থান পান। মূলত ওই সময় থেকেই ব্যাংকটিতে অনিয়ম-দুর্নীতির ব্যাপকতা ছড়িয়ে পড়ে। একের পর এক ঋণ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়ে অগ্রণী ব্যাংকের নাম। সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশে ব্যাংক কেলেঙ্কারির বড় উদাহরণ ইসলামী ব্যাংক। গত আট বছরে বেনামি বিভিন্ন কোম্পানির নামে ব্যাংকটি থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা বের করে নেয়ার প্রমাণ মিলেছে। দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি ব্যাংকটিতে লুণ্ঠনের ঘটনায়ও সহযোগীর ভূমিকায় ছিলেন বেশ কয়েকজন অধ্যাপক। ২০১৭ সালে এস আলম গ্রæপ ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়ার এক বছর আগে থেকেই ব্যাংকটির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত তিনি ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক ব্যবসায় বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিনও ২০১৬ সালে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ব্যাংকটির পর্ষদে ছিলেন ২০২২ সাল পর্যন্ত। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম উদ্দিন। এ সময়ে তিনি ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির (ইসি কমিটি) চেয়ারম্যানও ছিলেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ২০১৯ সালে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের আগস্টে ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্বে ছিলেন। ইসলামী ব্যাংক লুণ্ঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকার পুরস্কার হিসেবে ড. মো. সেলিম উদ্দিনকে ২০২৩ সালের জুনে ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তার অভিযোগ, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল হাসান, ড. মো. সেলিম উদ্দিন ও ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর ছিলেন ইসলামী ব্যাংক পর্ষদের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা বেনামি বিভিন্ন কোম্পানির নামে ঋণ প্রস্তাব পর্ষদে উপস্থাপন করার জন্য কর্মকর্তাদের বাধ্য করতেন। বিনিময়ে তারা নিজেরাও আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
এস আলম গ্রæপ নিয়ন্ত্রিত গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া। তিনি ২০১৮ সালে ব্যাংকটির পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকটির পর্ষদ ভেঙে দেয়ার আগ পর্যন্ত তিনি এ পদে ছিলেন। শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা না থাকলেও আওয়ামী রাজনীতির সুবাদে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি হয়েছেন। তিনি এখনো বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতির সভাপতি পদে রয়েছেন।
এস আলম গ্রæপ গেøাবাল ইসলামী ব্যাংকের ৮০ শতাংশের বেশি ঋণ বেনামি বিভিন্ন কোম্পানির মাধ্যমে বের করে নিয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরীক্ষায় উঠে এসেছে। ব্যাংকটির পর্ষদে থেকেও অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে না পরার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজামুল হক ভূইঁয়া বণিক বার্তাকে বলেন,‘করোনার আগে ব্যাংকটিতে অনেক অনিয়ম,দুর্নীতি ছিল। আমি তখন স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলাম না। পরে যখন আমি দায়িত্বে আসি তখন রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া বড় কোনো ঋণ মঞ্জুর করা হয়নি। আমার দায়িত্ব পালনকালে তেমন অনিয়ম পাইনি।ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের ১২টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকও (ইউসিবি) রয়েছে। ব্যাংকটির পর্ষদে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র পরিচালক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম মাহমুদ। শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে যোগ দিয়ে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে চাঁদপুর-১ আসনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১০ সালের ধস-পরবর্তী সময়ে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সংস্কার ও পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় নয় বছর সংস্থাটির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক ড. এম খায়রুল হোসেন। তার উত্তরসূরি হিসেবে ২০২০ সালে দায়িত্বে আসেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। আলোচিত এ দুই চেয়ারম্যানের বিভিন্ন ধরনের বিতর্কিত কর্মকান্ড ও অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দেশের পুঁজিবাজার আরো খাদের কিনারে চলে গেছে। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কোম্পানির তালিকাভুক্তি, প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, মিউচ্য়ুাল ফান্ড থেকে অর্থ লুটপাট ও সেকেন্ডারি বাজারে শেয়ারদর কারসাজির মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুটে নেয়ায় সহায়তার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। দেশের পুঁজিবাজারে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টিকারী ফ্লোর প্রাইস পদ্ধতি চালু হয় ড. খায়রুলের সময়ে। আর শিবলী রুবাইয়াত কৃত্রিমভাবে পুঁজিবাজারের পতন ঠেকিয়ে রাখতে এ পদ্ধতিকে কাজে লাগান। শ্বেতপত্রে উঠে এসেছে,আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে শেয়ারবাজার থেকে অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে।
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে জানতে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। আর বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ড. এম খায়রুল হোসেন বলেন, ‘আমি একটি কথাই বলতে পারি যেকোনো সিদ্ধান্ত আমি একা নেইনি। সব সিদ্ধান্ত কমিশনের সম্মতিতেই নেয়া হয়েছে। নিয়মের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে লাভবান করিনি, কাউকে বঞ্চিতও করিনি। প্লেসমেন্ট শেয়ার যে যত ইচ্ছে নিতে পারত, রাস্তায় বিক্রি হতো। আমরা এসে নিয়ম করেছি যে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি হোক ১০০ জনের কেউ নিতে পারবে না। যারা শেয়ার নেবে তাদের চিহ্নিত করতে টিআইএন নাম্বারের প্রচলন করা হয়।’স্বজনপ্রীতি,জালিয়াতি ও কারসাজির অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্লেসমেন্ট শেয়ার দেয় কোম্পানিগুলো। আমরা তো কারো ভাগিদারও নই। কখনো প্লেসমেন্ট শেয়ার নেইওনি। আমার কোনো আত্মীয়-স্বজনও কখনো প্লেসমেন্ট শেয়ার নেয়নি। তাদের কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধাও দেয়া হয়নি।’
বিএসইসির কমিশনার হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্সের অধ্যাপক অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান ২০২০ সালের মে মাসে নিয়োগ পান। এর মধ্যে প্রথম মেয়াদের পর গত বছরের মে মাসে দ্বিতীয় মেয়াদে ড. শামসুদ্দিনকে কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। গত আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি পদত্যাগ করেন। ড. মিজানুর রহমান বিএসইসির কমিশনার ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালন করেন। কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তাদের ভূমিকা নিয়ে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে সমালোচনা রয়েছে।
২০১১ সালের ৯ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট পর্যন্ত আইসিবির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. এসএম মাহফুজুর রহমান। ২০২০ সালের ২৯ জুলাই তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তী সময়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুলাই আরেক মেয়াদে তার নিয়োগ নবায়ন করা হয়। গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর তিনি জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকেরও পরিচালক ছিলেন।
২০১৪ সালের ১১ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত আইসিবির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মুজিব উদ্দিন আহমেদ। তার মেয়াদে রাষ্ট্রায়ত্ত এ প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনেক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, আইসিবিতে যে কয়জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ড. মুজিব উদ্দিনের মেয়াদে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটা সময় পর্যন্ত পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত আইসিবি। প্রতিষ্ঠানটির সৃষ্টিই হয়েছিল পুঁজিবাজারের স্বার্থে। যদিও আওয়ামী সরকারের সময়ে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির পাশাপাশি অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়ের অত্যন্ত প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানটি এখন তারল্য সংকটে ভুগছে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরানোর ক্ষেত্রেও কার্যত কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কিসমাতুল আহসান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবুল হাশেম ২০১৭ সালের ১৪ ফেব্রæয়ারি থেকে ২০২০ সালের ১২ ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান ছিলেন। এর আগে তিনি ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এক্সচেঞ্জটির পরিচালক ছিলেন। পরবর্তীতে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সরকার তাকে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান করে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের অক্টোবরে তাকে বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ডিএসইর চেয়ারম্যান থাকাকালে দুর্বল ও বিতর্কিত কোম্পানির তালিকাভুক্তি ঠেকানোয় এক্সচেঞ্জটির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে বিএসইসির অনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়ে তার নেতৃত্বাধীন পর্ষদ অনেকটাই নীরব ছিল।
আর্থিক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন,রাজনৈতিক বিবেচনায় দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, তাদের প্রায় সবাই ছিলেন আওয়ামীপন্থী নীল দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। রাজনৈতিক পরিমন্ডলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকায় তারা এসব প্রতিষ্ঠানে সরকারের পক্ষ থেকে আরো যাদেরকে নিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে একটি ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়ে যায়। তাছাড়া আর্থিক খাতের মূল ক্রীড়নকদের সঙ্গেও ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ঘনিষ্ঠতা ও যোগাযোগ ছিল। ফলে তারা যখন এসব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন তখন স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেননি। অনেক ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই এসব অনিয়মের সঙ্গী হয়েছিলেন। তাছাড়া রাজনৈতিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করার মতো সৎসাহসও তাদের ছিল না।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোয় সে সময় যারা দায়িত্ব পালন করেছেন, অনেকে রাজনৈতিক চাপের কারণে ভূমিকা রাখতে পারেননি। অনেকে হয়তো নিজেরা অনিয়মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও নীরব ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তাদের পদত্যাগ করার সুযোগ ছিল। তারা সে ভূমিকা রাখতে পারেননি। সরকারের পাশাপাশি রাষ্ট্রের প্রতিও তাদের যে দায়িত্ব ছিল, যেটি তারা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। আর্থিক খাতের অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে সন্দেহাতীত প্রমাণ না থাকার কারণে শ্বেতপত্রে কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা সম্ভব ছিল না।’
অন্তর্র্বতী সরকারের শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন বা ২৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ প্রায় ২৭ লাখ কোটি টাকা। শ্বেতপত্রে বলা হয়, ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর দেশ থেকে গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতি বছর পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে এসব অর্থ পাচার হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি লুণ্ঠিত হয়েছে দেশের ব্যাংক খাত। শ্বেতপত্র কমিটির প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। এতে দেশের ব্যাংক খাত গভীর কৃষ্ণগহ্বরে নিমজ্জিত বলে উল্লেখ করা হয়। শ্বেতপত্রে বলা হয়, চলতি বছরের জুন পর্যন্ত দেশের ব্যাংক খাতের মোট ঋণ স্থিতির ৩১ দশমিক ৭০ শতাংশই ছিল দুর্দশাগ্রস্থ। ওই সময় খেলাপি,পুনঃতফসিল ও অবলোপনকৃত ঋণ মিলিয়ে দেশের দুর্দশাগ্রস্থ ঋণের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘শ্বেতপত্রে প্রাতিষ্ঠানিক যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে সেগুলোই আমরা তুলে ধরেছি। ফলে ব্যক্তির বিষয়টি সেখানে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে এসব ঘটনায় কার কী দায়দায়িত্ব রয়েছে, সেটি নিরূপণ করার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ এক্ষেত্রে জড়িতদের শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে এ ধরনের সংস্কৃতি চলতেই থাকবে। এছাড়া ভবিষ্যতে এসব প্রতিষ্ঠানে কাদেরকে নিয়োগ দেয়া ভালো হবে, সেটি জানার জন্যও এসব ঘটনায় ব্যক্তির ভূমিকা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। কারণ অনেক ক্ষেত্রে হয়তো যাকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল, অনিয়মে জড়িত না থাকলেও সেটি প্রতিরোধের মতো দক্ষতা তার ছিল না।’-সুত্র-বণিকবার্তা
আপনার মতামত লিখুন :