ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা যখন কম ছিল তখন থেকে বলে আসছি,সড়কে বিশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হবে এই যান। কারণ বিশৃঙ্খলা থেকে যানজট হয়। বিশৃঙ্খলা থেকেই ঘটে দুর্ঘটনা। সমকাল হাসপাতালের তথ্য দিয়ে চিত্র তুলে ধরেছে ৩২ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটেছে ব্যাটারিচালিত রিকশায়। এখনই এর প্রতিকারে কাজ শুরু করতে হবে।
সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো– ছোট ছোট গাড়ি যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে ঢুকে যায়, সেখানে যত বিনিয়োগ করা হোক না কেন, তা যানজট কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে না। আবার দুর্ঘটনাও কমবে না। কারণ যত গাড়ির সংখ্যা বাড়বে, ততই ঝুঁকি। এ জন্য পুরো বিশ্বে বিশেষ করে প্রধান সড়কে দ্বিতল বাস চলাচলে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এতে কম জায়গার মধ্যে অনেক যাত্রী পরিবহন করা যায়।
বিজ্ঞান মতে, পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খল করতে গেলে ছোট ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিআরটিএ এবং পুলিশ এ সমস্যার গোড়াতে নজর দেয়নি। এটিকে তারা বাড়তে দিয়েছে। এতে অনেকে বিনিয়োগ করেছে, অনেকের হয়েছে কর্মসংস্থান। ফলে এটা ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়েছে। যে যেভাবে পেরেছে একেকটা অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় নেমে গেছে।
তারা রাস্তার বড় অংশ দখল করে বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে ‘বোটল-নেক’ তৈরি করেছে। এর অর্থ হলো– রাস্তার জায়গা আমি অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে উদ্ধার করতে পারছি না। ‘রোড সেন্স’ না থাকলেও তারা নিজেদের মধ্যে যাত্রী পাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। আবার বাণিজ্যিক চিন্তা থেকে বেশি ট্রিপ দিতে গিয়ে সে ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এটা বৈজ্ঞানিক চিন্তার সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে আমরা যাচ্ছি।
সবচেয়ে খারাপ দিকটা হচ্ছে, বিগত সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের আন্দোলনের সময় তাদের ‘ব্ল্যাঙ্ক চেক’ দিয়ে গেছে। সেটা ছিল আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলো– ব্যাটারিচালিত রিকশা চলবে। তবে আগে বলা হয়েছিল, প্রধান সড়ক, মহাসড়কে এটা চলবে না। যখনই এরা বড় একটা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করল তার পেছনে ছিল আরেকটি গ্রæপ। মূলত উৎপাদনকারীরা; যারা ব্যাটারিসহ অন্য সরঞ্জাম চীন থেকে নিয়ে আসে। সেই সুবিধাভোগীরা এটা প্রতিষ্ঠিত করেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশা তুলে দিলে চালকরা বেকার হয়ে যাবে। আবার গত সরকারের একজন মন্ত্রী ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বললেন, ‘বাংলার টেসলা’। এই ধরনের অপরিপক্ব মন্তব্য করে তাদের উৎসাহিত করা হয়েছে। এমনিতে তারা ‘নাচুনি বুড়ি’ তার ওপর দেওয়া হলো ‘ঢোলের বাড়ি’। এখন তারা পঙ্গপালের মতো উৎসাহিত হয়ে অলিগলি ছেড়ে প্রধান সড়ক, আবার প্রধান সড়ক ছেড়ে ফ্লাইওভার পর্যন্ত বিস্তৃত। আমি বলব, এটাকে যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, এখন ধাপে ধাপে প্রধান সড়ক থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। যেখানে বাস চলবে সেখান থেকে যদি সরাতে না পারি, বিশৃঙ্খলা কমবে না, এড়ানো যাবে না দুর্ঘটনাও। যানজট নিয়ে থাকতে হবে। সরকার যে বাস রুটের ফ্র্যাঞ্চাইজির কথা মুখে বলছে, এটা নিরর্থক চেষ্টা হবে। কারণ আমি বাস রুটের জন্য পদ্ধতি বললাম, কিন্তু চলার জায়গা দিতে পারলাম না। সেটা দখলে নিচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। এটা বিজ্ঞানভিত্তিক করতে হবে সরকারকেই। আমি ডেটা দেখতে পারছি, সড়কে দুর্ঘটনার জন্য বড় দায়ী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ডেটা দেখেও যদি প্রতিরোধমূলক সিদ্ধান্ত না নিতে পারি, তাহলে এর দায় সরকারও এড়াতে পারবে না।
যদি নিরাপত্তার টেকসই সমাধান চাই, ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক এবং মোটরসাইকেল সংখ্যাগত এবং বিচরণক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। বিচরণক্ষেত্রের একটা শর্ত দেওয়া যেতে পারে, বাস যেসব জায়গায় চলবে এ ধরনের প্রধান সড়কে কখনও প্রতিযোগিতার ভূমিকায় থাকবে না। বরং সহযোগিতার ভূমিকায় থাকবে।
সমকাল প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী যে তথ্য সামনে নিয়ে এসেছে, সেটা বলে দিচ্ছে কোনটি ঝুঁকিপূর্ণ বাহন। এটা জানার পরও আমরা বসে থাকতে পারি না। সরকার বসে থাকতে পারে না। সুতরাং, আমাদের নিরাপত্তা ইস্যু এবং মৃত্যু শঙ্কা কমাতে চাই, যানজট কমাতে চাই, গণপরিবহনকে জনপ্রিয় করতে চাই– তাহলে এখন জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এই সরকারই পারবে, কারণ তাদের রাজনৈতিক দুর্বলতা নেই। তাই একবারে না পারলেও তাদের প্রধান সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে হবে। আর না হলে যত উন্নয়ন করি না কেন, আমরা আধুনিক শহর গড়তে পারব না।সুত্র-সমকাল
আপনার মতামত লিখুন :