১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। জনগণকে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সচেতন করার লক্ষ্যেই ১৯৯১ সাল থেকে প্রতিবছর সারাবিশ্বে দিবসটি পালন করা হয়। সারাবিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৪৬ কোটি। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে। বর্তমানে প্রায় ৮৪ লাখের মতো। প্রতি ১০০ জনের মধ্যে ২০ প্রসূতি নারী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। যাদের ৬০ শতাংশই স্থায়ীভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ডায়াবেটিসে একবার আক্রান্ত হলে সারাজীবন এই রোগ পালতে হবে। তাই এই রোগ যাতে না হয় সেই ব্যবস্থা করা উচিত। কেউ যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েই থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই জানতে হবে এর নিয়ন্ত্রণ কীভাবে করা উচিত, না করলে কি কি জটিলতা হবে ইত্যাদি। মনে রাখতে হবে, কোনো জটিলতা হলে তা থেকে মুক্তি পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ।
রক্তে সুগারের মাত্রা অত্যধিক বৃদ্ধি পেলেই তাকে ডায়াবেটিস বলা হয়। পুরো নামটি ডায়াবেটিস মেলাইটাস বা বহুমূত্র। প্রসাবের সঙ্গে সুগার যায় বিধায় অনেকেই একে বলতেন মধুমূত্র। দিন দিন অসংক্রামক যেসব রোগ বেড়েই চলছে,তার মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। আগে মানুষের গড় আয়ু ছিল অনেক কম। কলেরা, ডায়রিয়া, বসন্ত ইত্যাদি সংক্রামক রোগের আক্রমণে মানুষ মারা যেত বেশি, উজাড় হতো গ্রামের পর গ্রাম। চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি, উন্নত চিকিৎসা, নিরাপদ পানি ও খাদ্যের সরবরাহ, বিভিন্ন রোগের টিকাদান কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে সংক্রামক ব্যাধি কমছে, আর মানুষের গড় আয়ু বাড়ছে। তাই বয়সজনিত জটিলতা যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,হৃদ্রোগ,ক্যান্সার ইত্যাদি এখন হয়ে উঠেছে বড় ঘাতক।
বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশে খুব দ্রæত নগরায়ণ হচ্ছে। মানুষের ওজন বৃদ্ধি পাচ্ছে, কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম কমে যাচ্ছে, মানসিক চাপ বাড়ছে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হচ্ছে, এসব কারণে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। অধিক ক্যালরিসমৃদ্ধ, ফাস্টফুড ও অধিক চর্বি-শর্করা জাতীয় খাদ্য গ্রহণের অভ্যাস শিশু-কিশোরদের স্থূলতা বাড়াচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে খেলার মাঠের অভাব, বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা বা খেলাধুলার সংস্কৃতির বিলোপ, টেলিভিশন আর কম্পিউটার গেম ও ফেসবুক, শহুরে অলস জীবন, গাড়ি, লিফ্ট ও চলন্ত সিঁড়ি ব্যবহারের প্রবণতা। বাচ্চাদের বেলায় ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার অত্যধিক প্রতিযোগিতা, মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপ, খেলাধুলার প্রতি অনীহা বা পড়াশোনার ব্যস্ততায় সময়ের অভাব ইত্যাদি কারণে আরও বেশি অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলছে আর বাড়াচ্ছে রোগব্যাধি। গ্রামের শিশুদের ছেলেবেলার অপুষ্টি এবং বড় হয়ে শহরে অভিবাসনের পর অধিক পুষ্টির মন্দচক্রও ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী।
ডায়াবেটিসের কিছু উপসর্গ: ডায়াবেটিস হয়েছে কিনা নিচের কিছু লক্ষণ অনুভূত হলে রক্তের সুগার পরীক্ষা করাতে হবে। শুরুতে ধরা পড়লে এর চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে করা যায়। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
(১) অতিরিক্ত পিপাসা, স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিবার প্রস্রাবের বেগ, বিশেষত রাত্রিবেলা।
(২) প্রচুর খিদে পাওয়া এবং ঘন ঘন খেতে ইচ্ছে করা।
(৩) হঠাৎ বিনা কারণে ওজন হ্রাস, অথচ খাওয়া-দাওয়া ঠিকই চলছে এবং রুচি বা ক্ষুধাও বেশি বেশি, অনেক সময় মাত্রাতিরিক্ত।
(৪) যদি এমন হয় দ্রæত ওজন হারাচ্ছে শরীর, অথচ তার কোনো চেষ্টা করা হয়নি। যেমন- হাঁটাচলা, ব্যায়াম বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কোনো চেষ্টা চলছে না, অযথা অকারণে ওজন কমছে, তাহলে ধরে নিতে পারেন রক্তের সুগার বেড়ে যেতে পারে।
(৫) সহজেই ক্লান্ত বা অবসাদ বোধ করা।
(৬) বারবার সংক্রমণ হওয়া বিশেষত মাড়ি, ত্বক, যেমন- ঘন ঘন ফোঁড়া, বারবার প্র¯্রাবে ইনফেকশন, জিহ্বায় সাদা সাদা ক্যানডিডার আক্রমণ, মহিলাদের যৌনাঙ্গে ঘন ঘন ছত্রাক জাতীয় রোগের আক্রমণ।
(৭) কোথাও সামান্য কাটাছেঁড়া বা ঘা হওয়ার পর তা দ্রæত শুকাচ্ছে না।
(৮) ঝিঁঝি ধরা বা জ্বালা করা, বিশেষত হাতের তালুতে এবং পায়ের পাতায়, হাত-পা অবশ হয়ে আসে বা ভারী ভারী লাগে। এগুলোকে মেডিক্যাল টার্মে নিউরোপ্যাথি বলে, যার অন্যতম কারণ ডায়াবেটিস।
(৯) হাতে-পায়ের আঙ্গুলের মাঝে ছত্রাকের আক্রমণ
(১০) পুরুষের যৌন অসুবিধা হতে পারে।
(১১) যারা গ্রামেগঞ্জে খোলা জায়গায় প্রস্রাব করে, সেখানে দেখা যায় পিঁপড়া আসছে।
প্রতিরোধ করা জরুরি: দীর্ঘমেয়াদি ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস থেকে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, অন্ধত্ব, স্নায়বিক জটিলতা,কিডনি অকার্যকারিতাসহ নানা প্রাণঘাতী রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিসের কারণে সমাজ হারাতে পারে কর্মক্ষম ও সম্ভাবনাময় তরুণ যুবা প্রজন্মকে, যার সামাজিক ও অর্থনৈতিক মন্দ প্রভাব গোটা জাতিকে স্থবির করে দিতে পারে। এতে হাজার হাজার রোগী নিজেদের কর্মক্ষমতা হারিয়ে, পরিবার ও সমাজের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। তাই এই ব্যাধিকে প্রতিহত করতে হবে এবং প্রতিরোধ করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ডায়াবেটিসজনিত কারণে অকালমৃত্যু ও পঙ্গুত্বকে প্রতিরোধ করতে হলে গোড়ায় ঠেকানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। শুধু জীবনযাত্রার একটু পরিবর্তন, একটু সচেতনতা আর সদিচ্ছাই শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যায়।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একটি সমন্বিত,সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিৎসক, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনো এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিস্তরে, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে একে প্রিিতরোধ করার জন্য। পরিশেষে বলতে চাই, আধুনিক পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক, কর্মময় জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই আসুন, ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানি,এ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করি,সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করি।
প্রতিরোধে করণীয়: রোগটি যেহেতু চির জনমের,তাই এই রোগে যাতে আক্রান্ত না হতে হয়, সে লক্ষ্যে রোগ হওয়ার আগেই একে প্রতিরোধ করাটা জরুরি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূলমন্ত্র সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। এর মাধ্যমে রোগকে দূরে রাখা সম্ভব। নিচের কিছু কিছু টিপস মেনে চললে এ দানব থেকে মুক্তি সম্ভব।
(১) খাদ্যাভ্যাস: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময় মতো এবং পরিমাণমতো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ছোটোবেলা থেকেই বেশি বেশি সবুজ শাক-সবজির সঙ্গে প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ খেতে হবে। কম চর্বি ও কম শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত খাবার, চকলেট, আইসক্রিম ইত্যাদি পরিহার বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার যেমন- মিষ্টি, শরবত,গøুকোজ, পায়েস ইত্যাদি কম খেতে হবে। ধূমপানের বিরুদ্ধে যেমন গণসচেতনতা গড়ে উঠেছে, তেমনিভাবে মন্দ খাদ্যাভ্যাসের বিরুদ্ধেও সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার।
(২) কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম: ডায়াবেটিসের রোগীর ব্যায়ামের বিকল্প নেই। অবশ্যই রোগীদের নিয়মিত কায়িক শ্রম এবং যত অল্পই হোক, সামর্থ্য অনুযায়ী ব্যায়ামের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সকাল-সন্ধ্যা নিয়মিত হাঁটা-চলা, হাটে-বাজারে কোথাও গেলে অল্প দূরত্বে রিকশা বা গাড়ি ব্যবহার না করা, অল্প কয়েক তলার জন্য লিফ্ট ব্যবহার না করা ইত্যাদি। সম্ভব হলে সাঁতার বা জগিং করা, ব্যায়ামাগারে গিয়ে সুশৃঙ্খল ব্যায়াম করা। মোটকথা, নিজেকেই ঠিক করে নিতে হবে তিনি কি ধরনের ব্যায়াম করবেন। শিশু-কিশোর ও বয়স্ক- সবার মধ্যেই কায়িক শ্রমের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খেলার মাঠ ছাড়া কোনো স্কুল-কলেজ থাকতে পারবে না। পাড়ায় পাড়ায় থাকবে পার্ক বা খোলা জায়গা, হাঁটার উপযোগী ফুটপাত এবং সর্বোপরি নিরাপদে হাঁটার পরিবেশ। জেনে রাখা ভালো, ব্যায়াম মাংসপেশীর জড়তা দূর করে, রক্ত চলাচলে সাহায্য করে, ইনসুলিনের কার্যকারিতা এবং নিঃসরণ বাড়ায়। ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে ভালো কোলেস্টেরল কম থাকে, যা করোনারি হার্ট ডিজিজের একটি বড় ঝুঁকি বলে স্বীকৃত। ব্যায়ামের মাধ্যমে একে বাড়ানো যায়।
(৩)শিক্ষা ও সচেতনতা: একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে গেলে তা হবে আজীবনের রোগ, সারাজনম একে নিয়েই রোগীকে বাঁচতে হয়। তাই এই রোগটি যাতে না হয়, তার জন্যই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন রোগটি সম্পর্কে জানার জন্য যথাযথ শিক্ষা। একবার ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়ে গেলে সচেতন রোগীকে নিজেই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে জীবন প্রণালি সহজভাবে গ্রহণ এবং যে কোনো জরুরি অবস্থা সম্পর্কে মোটামুটি জ্ঞান রাখতে হবে। রোগের লক্ষণ ও ঝুঁকি সম্পর্কে অবগতি,কখন-কেন রক্তের চিনি পরীক্ষা করা জরুরি, শনাক্তকরণ পরীক্ষার সহজলভ্যতা ও ব্যয় সংকোচন- এই বিষয়গুলো সবার জানা উচিত। এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে পাঠ্যপুস্তকে সঠিক জীবনাচরণ সম্পর্কে তথ্য অন্তর্ভুক্তি, মিডিয়ার ব্যবহার, শিক্ষক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং সামাজিক নেতাদের প্রশিক্ষণ,সমাজকর্মীদের সচেতন করে তোলা, সচেতনতা ক্যাম্প ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
(৪) শৃঙ্খলা: ডায়াবেটিস রোগীর জীবনকাঠি হলো শৃঙ্খলা। এর মানে সব নিয়মমাফিক মেনে চলা,যেমন-খাওয়া-দাওয়া,ঠিকমতো হাঁটাচলা বা ব্যায়াম, ওষুধপত্র নিয়মমাফিক ব্যবহার করা ইত্যাদি। যারা শৃঙ্খলা মেনে চলে, তাদের ডায়াবেটিস থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। এমনকি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে একে নিয়ন্ত্রণে রাখাও খুবই সহজসাধ্য বিষয় হবে। ফলে স্বাভাবিক জীবনযাপন যেমন সম্ভব, তেমনি অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগীর জন্য প্রতিনিয়ত বয়ে আনা সমস্যাগুলো থেকেও বাঁচা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে,প্রাথমিক অবস্থায় রোগের জটিলতা সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে এবং এগুলো শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাড়তি সমস্যা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, তা দেখার জন্য মাঝেমধ্যে রক্তের সুগার পরীক্ষা করাতে হয়। গøুকোমিটার দিয়ে বাড়িতে বসে সহজেই তা করা যায়। এসব ছোট মেশিন অল্প দামে আমাদের দেশেও পাওয়া যায়। অভুক্ত অবস্থায় রক্তের সুগারের পরিমাণ ৬ মিলিমোল এবং খাওয়ার পরে ৮ মিলিমোলের কাছাকাছি হলে ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে মনে করতে হবে। রক্তের ঐনঅ১প মেপেও নিয়ন্ত্রণের ধারণা করা যায়। ঐনঅ১প ৭% নিচে হলে তিন মাস ধরে সুগার ভালো নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। চল্লিশ পরবর্তী সবাইকেই মাঝে মাঝে রক্তের সুগার পরীক্ষা করা জরুরি। স্থূলতা, পারিবারিক ইতিহাস ইত্যাদি ঝুঁকি থেকে থাকলে তাদের এ বিষয়ে আরও সচেতন হওয়া জরুরি। গর্ভবতী হলে অবশ্যই রক্তের সুগার পরীক্ষা করাতে হবে।
চিকিৎসা পদ্ধতি: একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে রোগী যেমন চিকিৎসা সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখবেন, মাঝে মাঝে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসাও গ্রহণ করবেন। রোগীদের মনে রাখতে হবে, বারডেমের প্রতিষ্ঠাতা এবং এ দেশে ডায়াবেটিস চিকিৎসার পথিকৃৎ মরহুম প্রফেসর মোহাম্মদ ইব্রাহিম স্যারের মূল তিনটি বিখ্যাত উপদেশই আপনার চিকিৎসার মূলমন্ত্র। তা হলো ইংরেজিতে তিনটি ‘ডি’-
(১) প্রথম ‘ডি’-ডায়েট বা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, ৬০ থেকে ৮০ ভাগ রোগী এতেই ভালো থাকেন।
(২) দ্বিতীয় ‘ডি’-ডিসিপ্লিন বা শৃঙ্খলা (সুশৃঙ্খল জীবনযাপনই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি)।
(৩) তৃতীয় ‘ডি’-ড্রাগ বা ওষুধ,খুব অল্পসংখ্যক রোগীরই এর প্রয়োজন পড়বে।
মনে রাখতে হবে,প্রথম ও দ্বিতীয় ‘ডি’অর্থাৎ শৃঙ্খলা ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই ডায়াবেটিসকে ৮০ ভাগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, ওষুধের ভূমিকা এখানে কম। আবার প্রথম দুটিকে বাদ দিয়ে শুধু ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসা করতে গেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও চিকিৎসা একটি সমন্বিত,সামাজিক পদক্ষেপ। সরকার, চিকিৎসক, কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও একার পক্ষে কখনো এই বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিন্তরে, পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে হবে একে প্রতিরোধ করার জন্য। পরিশেষে বলতে চাই,আধুনিক পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক,কর্মময় জীবনযাপন করা সম্ভব। তাই আসুন, ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানি,এ সম্পর্কে সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করি,সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করি। সংগৃহীত:লেখক-অধ্যাপক ডা.এবিএম আবদুল্লাহ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক।

ডেইলি খবরের সর্বশেষ নিউজ পেতে Google News অনুসরণ করুন।
আপনার মতামত লিখুন :