প্রথম প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষরের ৩৩ বছরেও সমাধান হয়নি রোহিঙ্গা সংকট। দীর্ঘ সময়েও সংকট সমাধান না হওয়ার পেছনে আন্তর্জাতিক সংস্থার শৈথিল্য আর পশ্চিমাদের দ্বিচারিতাকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।রাখাইনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সহসা প্রত্যাবাসনের সম্ভবনা দেখছেন না তারা।
১৯৭৮ সালে প্রথমবার; এরপর ১৯৯২ সাল দ্বিতীয় দফায় অধিক মাত্রায় বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী। তাদের ফেরাতে ’৯২ সালের ২৮ এপ্রিল সই হয় প্রথম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চুক্তি। পরে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এই চুক্তির আওতায় ফিরিয়ে দেয়া হয় ২ লাখ ৩৬ হাজার রোহিঙ্গাকে।
তবে ২০১২ সালের জাতিগত দাঙ্গা আর ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার মুখে উখিয়া সীমান্ত দিয়ে অনপ্রবেশ করে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা। এই শরণার্থীদের ফেরাতে ২০১৭ সালে আবারও নেইপিদোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করে ঢাকা। তবে নতুন চুক্তির আওতায় ৮ বছরে ফেরেনি একজন রোহিঙ্গাও। এমনকি ’৯২-এর চুক্তির ৩৩ বছরেও হয়নি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন।
তিন দশকেও রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না হওয়া কি বাংলাদেশের কূটনৈতিক ব্যর্থতা?বিশেষজ্ঞরা বলছেন,আঞ্চলিক এই সমস্যা জিইয়ে থাকার পেছনে মূল দায় আন্তর্জাতিক সংস্থার শৈথিল্য আর পশ্চিমাদের দ্বিচারিতার। জান্তা ও আরাকান আর্মির চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে সহসা প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকরা।
তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপীয় দেশগুলোকে একীভূত করতে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল মার্শাল পরিকল্পনা, যার আওতায় জার্মানি-ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর মধ্যে নতুন করে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ,এমন কোনো কাঠামো দাঁড় করতে উদ্যোগ নিতে পারে বাংলাদেশ।আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন,
’৯০-এর দশকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তির সময় কিন্তু তারা নাগরিকত্বের ব্যাপারটা তুলেনি। এ অবস্থায় চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের লাভ হয় মতো একটা মার্শাল পরিকল্পনা করা গেলে একটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
আর প্রত্যাবাসন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ পরিচয়পত্র দিয়ে রোহিঙ্গাদের মূলধারা আলাদা করে চিহ্নিত করার পরামর্শ দিয়েছেন অভিবাসী ও প্রত্যাবাসন বিশেষজ্ঞ শরিফুল হাসান।
তিনি বলেন, চীন ও জাতিসংঘ যতক্ষণ পর্যন্ত অবস্থান পরিষ্কার না করবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সামনের দিনগুলোতে সংকট কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।তবে রোহিঙ্গাদেরকে আলাদা করে এমন একটা পরিচয়পত্রের আওতায় আনা উচিত, যেখানে আগামী ৩০ বা ৪০ বছর পরেও যেন তাদেরকে আলাদা করা যায়। এছাড়া এখানে যে যারা জন্ম নিচ্ছে, এ প্রজন্মের কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগানো যায় কিনা, সেটা চেষ্টা করা উচিত।বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১৩ লাখ। প্রতি বছর জন্ম নিচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু।সুত্র-সময়
আপনার মতামত লিখুন :