মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১

রাজউকে শেখ শাহিন-উজ্জলের নানা অনিয়মের রাজত্ব

আইন-অপরাধ ডেস্ক

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০২৪, ১০:৪৪ এএম

রাজউকে শেখ শাহিন-উজ্জলের  নানা অনিয়মের রাজত্ব

কর্মরত রাজউকের উজ্জ্বল মল্লিক ও শেখ শাহিনুল ইসলাম রাজউকের দুর্নীতির দূদর্শ কুতুব বলেই সবাই জানেন। কিন্তু তারা দু যুগেরও বেশী সময় ধরে থাকছেন ধরাঁেছায়ার বাইরে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) আলোচিত-সমালোচিত এই দুই কর্মকর্তা। উজ্জ্বল রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন ও নকশা) এবং শেখ শাহিনুল পরিচালক। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ওপর মহলের আশীর্বাদে তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়ম না মানা, ইচ্ছেমতো অফিস করা, অনৈতিক সুবিধা নেওয়া, লেকের অংশ কেটে প্লট করা, ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) মামলা চলমান থাকা অবস্থায়ও পদোন্নতির অভিযোগ রয়েছে। 
রাজউক সূত্রগুলো বলেছে, উজ্জ্বল মল্লিকের সর্বশেষ পদোন্নতি নিয়ে আছে অনিয়মের অভিযোগ। গত ১৮ আগস্ট তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তাঁদের দুজনের বিরুুুুুুুুুুুুদ্ধেই তদন্ত চলছে।
উজ্জ্বল মল্লিক বলেছেন,কর্তৃপক্ষই তাঁকে পদোন্নতি দিয়েছে। বক্তব্যের বিষয়ে চেষ্টা করেও শেখ শাহিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
রাজউকের নথি ঘেঁটে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রকৌশলী উজ্জ্বল মল্লিক ২০০৯ সালে প্রকল্প কর্মকর্তা হয়ে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে যোগ দেন। পরে তিনি ওই প্রকল্পে অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক এবং পরে পদোন্নতি পেয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হন। গত ২০২০ সাল পর্যন্ত তিনি পিডি ছিলেন। একপর্যায়ে সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী হয়েও পিডির পদে ছিলেন। পরে তাঁকে পিডির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পিডি থাকাকালে প্রকল্পের মহাপরিকল্পনায় বাণিজ্যিক বøকের সঙ্গে থাকা একটি আরবান ইউটিলিটি ফ্যাসিলিটির (ইউইউএফ) জায়গায় ৭ কাঠা আয়তনের প্লট বানিয়ে নিজের নামে বরাদ্দ নেন। পূর্বাচল প্রকল্পের ৫ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডের ৯১ নম্বর প্লটটির জন্য সরকারি কোষাগারে জমা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। অথচ প্লটটির বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
রাজউক সূত্র বলেছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রধান প্রকৌশলী (ডিজাইন ও নকশা) পদে পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উজ্জ্বল মল্লিকের বিরুদ্ধে। পদোন্নতির জন্য নিয়ম অনুযায়ী তাঁর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ হেলালীর কাছ থেকে বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর) নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি নেন আরেক প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌসের কাছ থেকে। বিষয়টি নিয়ে সংস্থাটির তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম লিখিত অভিযোগ দিলে ৮ আগস্ট উজ্জ্বল মল্লিককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কর্তৃপক্ষ। তিনি লিখিত জবাব দিলে ১৮ আগস্ট তা গ্রহণযোগ্য না হওয়ায় চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করেন রাজউকের চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার। 
সূত্র বলছে, ওই পদে পদোন্নতির তালিকায় এক নম্বরে ছিলেন আব্দুল লতিফ হেলালী ও দুই নম্বরে ছিলেন নুরুল ইসলাম। এ পদোন্নতির অংশ হিসেবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে দাপ্তরিক কার্যক্রম শুরু করেছিল, সেখানে আপত্তি দিয়েছিল দুদক। অনাপত্তি চাওয়া হলে ছক আকারে পাঠানো পত্রে দুদক উজ্জ্বল মল্লিকের নামের পাশে দুদকের মামলা করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। 
জানতে চাইলে উজ্জ্বল মল্লিক বলেন,‘পদোন্নতি তো আমি নিজে নিজে নিতে পারিনি। কর্তৃপক্ষ দিয়েছে। এখন কীভাবে দিয়েছে তাঁরা ভালো বলতে পারবেন।’ 
রাজউকের সূত্র বলেছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে রাজউকে দাপট দেখানোর অভিযোগ উঠেছে পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা শেখ শাহিন রাজউকের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পূর্বাচলের পরিচালক (এস্টেট) হিসেবে ২০১৫ সালে দায়িত্বে আসেন। সম্প্রতি তাঁকে অন্যত্র বদলি করা হয়। তিনি অফিস সহকারী থেকে পদোন্নতি পেয়ে পরিচালক হয়েছেন। 
অভিযোগ রয়েছে, শেখ শাহিন ইচ্ছেমতো অফিস করতেন। মোবাইলও বন্ধ রাখতেন। ফলে সেবাপ্রত্যাশীরা তাঁকে পেতেন না। তাঁর বিরুদ্ধে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং একজন বিচারকের দেওয়া লিখিত অভিযোগের পর তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় পূর্ত মন্ত্রণালয়। গত বছরের ৭ আগস্ট গঠন করা হয় তিন সদস্যের একটি কমিটি। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ-২) মো. হামিদুর রহমান খান ও সদস্যসচিব উপসচিব (প্রশাসন-ও) মো. মনিরুজ্জামানকে। তবে এই কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। 
পূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পূর্বাচল প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ পাওয়া একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবির লিখিত অভিযোগ করেন শেখ শাহিনের বিরুদ্ধে। আবুল হাসেম খন্দকার নামের আরেক ব্যক্তিও মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবির অভিযোগ আনেন। অভিযোগ অনুযায়ী, নথি ঠিক করার জন্য তাঁর কাছে ২ কোটি টাকা ঘুষ দাবি করা হয়েছিল। টাকা না দেওয়ায় শেখ শাহিন তাঁর নথি দেড় বছরের বেশি সময় আটকে রাখেন। এসব অভিযোগের পর শুরু হয় তদন্ত। 
শেখ শাহিনের বিরুদ্ধে তাঁর ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে পরিচিত একটি কেমিক্যাল কোম্পানির নির্বাহী পরিচালককে নিজ দপ্তরে মারধরের অভিযোগও রয়েছে। ওই ব্যক্তি রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান,শেখ শাহিন ৩০ শতাংশ সুদে তাঁকে ৫০ লাখ টাকা ধার দেন। কিস্তিতে সুদসহ আসল পরিশোধ করলেও একদিন তাঁকে রাজউকের পূর্বাচল সেলে ডেকে নিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক মো. হামিদুর রহমান খান বলেন, ‘তদন্ত কাজ প্রায় শেষপর্যায়ে। খুব দ্রæত প্রতিবেদন জমা দিব।’
অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাজউকে শেখ শাহিনকে তাঁর দপ্তরে পাওয়া যায়নি। দপ্তরের এক কর্মচারী জানান, রাজনৈতিক ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর শেখ শাহিন বেশ কিছু দিন ধরে অফিসে আসছেন না। পরে শেখ শাহিনের ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!