শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ২০ পৌষ ১৪৩১

রিজভীর বক্তব্যে ‘অপরাজনীতি’ দেখছে জামায়াত

ডেইলি খবর ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ১২:৩৮ পিএম

রিজভীর বক্তব্যে ‘অপরাজনীতি’ দেখছে জামায়াত

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন এবং অন্তর্র্বতীকালীন সরকার দায়িত্ব আসার পর থেকেই জাতীয় ঐক্য নিয়ে আলোচনাই ছিল মুখ্য,কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো থেকেও একই সুর আসে। জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হয় জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি হবে ২৪-এর ‘গণবিপ্লব’।
রাজনৈতিক জাতীয় ঐক্য কী উপায়ে হবে সেটা নিয়ে যখন জোর আলোচনা চলছে, তখন জামায়াত ও বিএনপির শীর্ষ নেতাদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য জাতীয় রাজনীতিতে কিছুটা ঘোলাটে পরিবেশ তৈরি করেছে। বিশেষ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে নতুন করে এ বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।গত ২৯ ডিসেম্বর রিকশা,ভ্যান ও অটোচালক দলের উদ্যোগে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি বলেন, “শেখ হাসিনার আমলে তাদের দোসর এস আলম ব্যাংক লুট করেছে। আর এখন এস আলমের উত্তরসূরি হয়ে ইসলামী ব্যাংক গ্রাস করে নিয়েছে একটি রাজনৈতিক দলের অনুসারীরা।তাহলে কীভাবে বলছেন এক চাঁদাবাজ পালিয়েছে, আরেক চাঁদাবাজকে মানুষ দেখতে চায় না। কাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, সেটা কি আমরা বুঝতে পারি না?”
রিজভী তার বক্তব্যে ৫ আগস্টের পর ইসলামী ব্যাংক দখল, দখলবাজি, টেন্ডারবাজির কথা উল্লেখ করে বলেন, “...রগকাটা পার্টি কারা জনগণ জানে না? কারা পায়ের রগ কাটে জনগণ তাদের চেনে। খুব ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন। আপনাদের ১৯৭১ সালের অর্জন কী? আপনারা ৭১ সালে বিরোধিতা করেছেন। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছেন, এই গৌরব বিএনপির। ৯০ সালের গৌরব বিএনপির। সেদিনও আপনারা শেখ হাসিনার সঙ্গে আঁতাত করে এরশাদের সঙ্গে নির্বাচনে গিয়েছিলেন। ইসলাম নিয়ে রাজনীতি, মুনাফেকির অভিযোগও তোলেন।
জামায়াতের আমিরের প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, ৫ আগস্টের পরে আপনারা বললেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চান। আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করে দেবেন। আপনাদের নেতা মাওলানা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দেওয়ার কারণে সুখরঞ্জনকে শেখ হাসিনার গোয়েন্দা বাহিনী তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে। এই সুখরঞ্জন যে ন্যায়, নীতির শিক্ষা দিয়েছে, আমি ওই রাজনৈতিক দলকে বলব তার কাছ থেকে শিখুন ন্যায়-নীতি। আর শেখ হাসিনার প্রতিটি গুম-খুনের দোসর হচ্ছে ভারত।
রিজভীর ওই বক্তব্যের পর রাতেই ব্যাপক প্রতিক্রিয়ায় বিবৃতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। রিজভীর প্রত্যেকটি জামায়াত বিরোধী বক্তব্যের প্রতিবাদ ও প্রতিউত্তর দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
জামায়াতে ইসলামী প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলেছে,প্রতি অভিযোগ উত্থাপনের আগে রিজভীর আত্ম-পর্যালোচনা করা উচিত। কারা দলীয় টিম নিয়ে ভারত সফর করে, ভারতের সঙ্গে সখ্য করার চেষ্টা করেছেন, তা জনগণ খুব ভালো করেই জানেন।
ইসলামের নামে রাজনীতির নামে জামায়াতে ইসলামী কখনো মোনাফেকি করেনি উল্লেখ করে দলটির পক্ষ থেকে পাল্টা জবাবে বলা হয়েছে, রিজভী অবশ্যই অবগত আছেন ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত জোটকে এড়িয়ে ভিন্ন মতের লোকদের সঙ্গে জোট করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে ঐক্য করা হয়েছিল তা কী জাতির সঙ্গে মোনাফেকি নয়? জনগণ এই রাজনৈতিক ছন্দ পতনের ইতিহাস ভুলে যায়নি।
এ ব্যাপারে জামায়াত মনে করে, জাতীয় ঐক্যের আলোচনার মধ্যে এমন বক্তব্য কাঙ্ক্ষিত নয়। রিজভীর বক্তব্যই যে বিএনপির বক্তব্য নয় তা এখন দলীয় অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত।
তিনি (রিজভী) রগকাটার কথা বলছেন, জামায়াত বা ছাত্রশিবির কি কখনো রগ কেটেছে? এটা তো একটা অপবাদ, এরকম রাজনৈতিক ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে অতীতে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বহুবার।।জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঐক্যবিরোধী অপপ্রলাপ শুরু কারা করলো? সেটা আগে দেখতে হবে। তিনি (রিজভী) যা বলেছেন সেটি সঠিক না বেঠিক তা দ্বিতীয় বিবেচ্য বিষয়। যেকোনো ইস্যুতে সেটি যদি সঠিক হয় তাহলে যেকোনো নাগরিকের কথা বলা দায়িত্ব। সত্য বলতে সমস্যা নেই, কিন্তু যদি বেঠিক হয়? রিজভী সাহেব যা বলেছেন তা পুরোপুরি অসত্য। “তিনি (রিজভী) রগকাটার কথা বলছেন, জামায়াত বা ছাত্রশিবির কি কখনো রগ কেটেছে? এটা তো একটা অপবাদ,এরকম রাজনৈতিক ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে অতীতে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বহুবার।আকন্দ বলেন, ‘অতীতের এরকম অনেক অপবাদের শিকার জামায়াতে ইসলামী, ছাত্রশিবির। চ্যালেঞ্জ পর্যন্ত ছুড়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ প্রমাণ করতে পারেনি। সত্যিকার অর্থে এরকম কোনো অপবাদের সঙ্গে জামায়াত বা শিবিরের বিন্দুমাত্র সংশ্লেষ নাই।’ 
‘ভারতকে খুশি করার জন্য জামায়াতে ইসলামী ভূমিকা রাখছে’ রিজভীর এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, ‘এ ধরনের একটা প্রমাণ বা নমুনা কেউ দিতে পারবে না যে জামায়াতে ইসলামী ভারতকে খুশি করতে চেষ্টা করেছে। ভারতের কারণেই আমাদের নেতাদের ফাঁসি হয়েছে। এরপরও তো জামায়াত আপস করেনি। বরং উল্টোটাই তো বলা যায়, তারাই তো নির্বাচনের আগে টিম করে ভারতকে খুশি করতে ভারত গেছেন। এটা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।’আমরা কখনো বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আক্রমণাত্মক কথাবার্তা বলিনি। বলার প্রশ্নও ওঠে না। রাজনীতিতে সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, শ্রদ্ধার যে নমুনা তা রিজভী সাহেবই মনে হয় প্রথম ভঙ্গ করলেন।

 

ডেইলি খবর টুয়েন্টিফোর

Link copied!