নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে উড়িয়ে সেমিফাইনালে গেল বাংলাদেশ। ম্যাচের আগে দলীয় কোন্দল প্রকাশ্যে। পাকিস্তানের সঙ্গে ১-১ ড্র ম্যাচের পর ইংলিশ কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে মনিকা চাকমার বিস্ফোরক মন্তব্য ঝড় তুলেছিল। কোচ নাকি সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন না, তাঁদের খেলাতে চান না মনিকার এমন মন্তব্য দলের বিভাজনটা বাইরে নিয়ে এসেছিল। কোচও পাল্টা মন্তব্য করে বলেছিলেন, ভারতের বিপক্ষে সিনিয়রদের খেলিয়ে তিনি দেখবেন, তারা কী করতে পারে।
আজ কাঠমান্ডুতে মেয়েদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতের গ্রæপ ম্যাচে কোন্দল, বিভাজন একপাশে সরিয়ে রেখে এক অন্য বাংলাদেশ দলকেই দেখা গেল। সেই বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলেই ভারতকে ৩–১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে হয়েছে গ্রæপসেরা, জায়গা করে নিয়েছে সেমিফাইনাল।
ভারতের বিপক্ষে আজ একাদশে দুই ‘সিনিয়র’ ফুটবলারকে শুরু থেকে খেলিয়েছেন কোচ বাটলার। আগের ম্যাচে সেন্ট্রাল ডিফেন্সে খেলা কোহাতি কিসকুর জায়গায় খেলেন অভিজ্ঞ মাসুরা পারভীন, মাঝমাঠে স্বপ্না রানীর জায়গায় মারিয়া মান্দা। এই পরিবর্তনের কারণেই হোক, কিংবা ভারতের বিপক্ষে নিজেদের প্রমাণের জেদ থেকেই হোক, শুরু থেকেই দুর্দান্ত এক বাংলাদেশকে দেখা গেছে। ১৮ মিনিটেই প্রথম গোলটা পেয়ে যায় বাংলাদেশ। সাবিনার কর্নার থেকে আসা বলে ঠান্ডা মাথায় শট নিয়ে জালে পাঠান আফঈদা খন্দকার। ২৯ মিনিটে ঋতুপর্ণা চাকমার ক্রস থেকে ব্যবধান বাড়ান তহুরা খাতুন। ভারত ব্যবধান কমাতে পারত ৩৫ মিনিটে, কিন্তু দুর্দান্ত এক সেভে বাংলাদেশকে বাঁচান গোলকিপার রুপনা চাকমা। এরপর ৩৭ মিনিটে ভারতের মনীষার ফ্রি-কিক ফেরত আসে ক্রসবারে লেগে।
৪২ মিনিটে বাংলাদেশ ৩-০ করে তহুরার দ্বিতীয় গোলে। লেফট উইং থেকে শামসুন্নাহার সিনিয়রের থ্রু ধরে বক্সের ঠিক মাথায় শামসুন্নাহার জুনিয়র কাট ব্যাক করেন তহুরাকে। সেখান থেকেই তহুরারত দারুণ শট যায় জালে।
প্রথমার্ধে ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমারা খেলেছেন দারুণ। ভারতের রক্ষণকে বেশ ব্যস্ত রেখেছিলেন তাঁরা দুজন। অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে আজ কোচ খেলিয়েছেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে। অভিজ্ঞ সাবিনা হতাশ করেননি। পুরো ম্যাচ না খেললেও মারিয়া মান্দা যতক্ষণ মাঠে ছিলেন, ছিল প্রানবন্ত উপস্থিতি। রক্ষণে মাসুরা, আফঈদা খন্দকার, শিউলি আজিম আর শামসুন্নাহার সিনিয়র ভারতের আক্রমণভাগকে প্রথমার্ধে খুব একটা সুযোগ দেননি।
গোলকিপার রুপনা চাকমার কথাও আলাদা করে বলতে হয়। এ ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে তহুরা, আফঈদাদের যতটা ভূমিকা, রুপনারও ততটাই। প্রাচীর হয়ে তিনি ভারতের আক্রমণগুলো সামলেছেন। পুরো ম্যাচে অন্তত চারটি গোল বাঁচিয়েছেন রুপনা। তবে ৪৪ মিনিটে রুপনার অপ্রত্যাশিত এক ভুলেই ভারতের অধিনায়ক বালা দেবী স্কোরলাইন ৩–১ করতে পেরেছেন। ভারতের ডালিমার এক নিরীহ ক্রস রুপনা গ্রিপ করতে পারলেন না। বালা দেবী ওই ফিরতি বলেই হেড করে গোলটা করেছেন।
দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশের কোচ মারিয়া মান্দার জায়গায় মাঠে নামান সানজিদা খাতুনকে। ডান দিক দিয়ে বারবারই ভারতের রক্ষণভাগকে ব্যস্ত রেখেছিলেন সানজিদা। তবে দ্বিতীয়ার্ধে গোলের পরিস্কার সুযোগ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
আক্রমণাত্মক কৌশল থেকে কিছুটা সরে গোল না খাওয়ার দিকে মনযোগী হয়েছেন কোচ বাটলার। তারপরেও ৮০ মিনিটে চতুর্থ গোলটি বাংলাদেশ পেতেই পারত। ছোট ছোট পাসে আক্রমণে ওঠার এক পর্যায়ে বদলী নামা স্বপ্না রানী দূর থেকে দুর্দান্ত এক শট নেন। তবে ভারতের গোলকিপার সেটি রক্ষা করেন কর্নারের বিনিময়ে। ম্যাচ শেষ হওয়ার পর অবশ্য সেই গোলটা না হওয়ায় কোনো আক্ষেপ থাকেনি বাংলাদেশের মেয়েদের।
আপনার মতামত লিখুন :