গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে মিশর বা জর্ডানে পাঠানোর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।
গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের গ্রহণের জন্য মিশর ও জর্ডানের প্রতি আহ্বানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান তুলে ধরেছেন তারা। খবর আরব নিউজের। মিশরের রাজধানী কায়রোতে শনিবার (১ ফেব্রæয়ারি) এক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতিতে এ কথা জানিয়েছেন আরব কূটনীতিকরা।
যৌথ বিবৃতিতে সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং আরব লীগের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কর্মকর্তারা বলেছেন, এই ধরনের পদক্ষেপ এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ এবং সংঘাত ছড়িয়ে দেবে। তাদের মতে, এ ধরনের পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকেও নস্যাৎ করবে। যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের ভূমি দখল, অধিকৃত ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ইহুদি বসতি স্থাপন এবং ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরসহ তাদের অধিকার খর্ব করার যে কোনো ষড়যন্ত্র বা অপচেষ্টা আমরা প্রত্যাখ্যান করছি।
তারা আরো বলেন, দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের ভিত্তিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত।
জাতিসংঘের সঙ্গে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়েজনের মিশরের পরিকল্পনাকেও স্বাগত জানিয়েছেন আরব মন্ত্রীরা। সম্মেলনে গাজা পুনর্র্নিমাণের ওপর আলোকপাত করা হবে। তবে সম্মেলনের জন্য এখনো কোনো তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি।সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, ছয়-পক্ষীয় মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি এবং জিম্মি ও বন্দিদের বিনিময়কে স্বাগত জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার এবং গাজা উপত্যকায় কোনো বাধা ছাড়াই মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করার পয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে।
বৈঠকে গাজা যুদ্ধবিরতির পূর্ণ বাস্তবায়নকে সমর্থন করে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহারের আহ্বান জানান আরব মন্ত্রীরা। এছাড়া গাজা বিভক্ত করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান এবং পশ্চিমতীর এবং পূর্ব জেরুুুুুুুজালেম পরিচালনায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ভূমিকার ওপর জোর দিয়েছেন। তারা গাজার পুনর্গঠনের জন্য বিশ্বব্যাপী সমন্বয়ের আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের সহায়তা করা যায় এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা যায়।
একইসঙ্গে জোর করে ফিলিস্তিনিদের ভূমি অধিগ্রহণ এবং স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ স্থানচ্যুতি নীতির নিন্দা জানানো হয়েছে। তারা জাতিসংঘের সহযোগিতায় গাজা পুনর্গঠন সম্মেলন আয়োজনের জন্য মিশরের পরিকল্পনাকেও সমর্থন করেছে।
আবারো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী সীমানা ভিত্তিক ফিলিস্তিনি স্বাধীন রাষ্ট্রের মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন আরব মন্ত্রীরা।
ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের জন্য ২০২৫ সালের জুনে সৌদি-ফ্রান্সের নেতৃত্বে আসন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনকে সমর্থন করেছে তারা।গত সপ্তাহে মিশর ও জর্ডানের মতো আরব রাষ্ট্রগুলোর প্রতি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের দাবি,ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের স্থানান্তর করে অঞ্চলটি পরিষ্কার করা উচিত। তবে সমালোচকরা ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে জাতিগত শুদ্ধি অভিযান হিসেবে অভিহিত করেছেন।
২৯ জানুয়ারি মিশরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন,গাজাবাসীর জন্য সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত তার দেশ।৩০ জানুয়ারি ট্রাম্প পুনরায় তার প্রস্তাবের পক্ষে সাফাই গেয়ে মিশর ও জর্ডানের প্রতি মার্কিন সামরিক সহায়তার কথা উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য,জর্ডানে ইতোমধ্যেই লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থী বসবাস করছে। মিশর ও জর্ডানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ট্রাম্পের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :