নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই ইউক্রেনের ওপর দিয়ে ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং নতুন করে মেয়াদ বাড়াতে কিয়েভের অস্বীকৃতি জানানোর কারণে ইউক্রেনের ওপর দিয়ে রাশিয়ার গ্যাসের ট্রানজিট সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে রাশিয়া থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আমদানির প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে। খবর তাসের। গত তিন বছরে, ইউক্রেনীয় গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে ইউরোপে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করেছে।
ইউক্রেনীয় রুট ছাড়া, ইইউর দেশগুলোতে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ প্রতি বছর ৩৯ বিলিয়ন ঘনমিটারে নেমে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এতে ইউরোপের গ্যাসের ব্যবহার আরো হ্রাস পাবে এবং কয়লাসহ অন্যান্য শক্তির ব্যবহার বাড়তে পারে।
রুশ সংবাদমাধ্যম তাসের তথ্য অনুসারে,গত বছরের জন্য ইউরোপের দেশগুলোতে (তুরস্কসহ)পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে গ্যাসের মোট রপ্তানি প্রায় ৫২ বিলিয়ন ঘনমিটারে পৌঁছেছে। এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যদেশগুলো প্রায় ৩০ শতাংশ গ্যাস পাচ্ছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনবাসীর রক্তের বিনিময়ে রাশিয়াকে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থ উপার্জনের অনুমতি দেবে না তার দেশ।
ইউরোপীয় কমিশনকে গ্যাস সরবরাহ লাইন প্রস্তুতির জন্য এক বছর সময় দিয়েছে ইউক্রেন। এদিকে,ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, ইউক্রেনের মধ্যদিয়ে ট্রানজিট শেষ হওয়ার পরও মহাদেশের গ্যাস ব্যবস্থা স্থিতিস্থাপক এবং সহনীয় রাখার পর্যাপ্ত ক্ষমতা তারা রাখে।
ইউক্রেনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ চুক্তির মেয়াদ শেষ হলেও রাশিয়া এখনো কৃষ্ণ সাগরজুড়ে তুর্কস্ট্রিম পাইপলাইনের মাধ্যমে হাঙ্গেরির পাশাপাশি তুরস্ক এবং সার্বিয়াতে গ্যাস পাঠাতে পারবে।
২০২২ সালে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ শুরু পর থেকে রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে ইইউ। তবে,বেশ কয়েকটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র এখনো সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল, যার ফলে রাশিয়া বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করছে।
পরিসংখ্যান অনুসারে,২০২১ সালে ৪০ শতাংশ রাশিয়ান গ্যাস আমদানি করলেও ২০২৩ সালে তা কমে ১০ শতাংশেরও কম ছিল। তবে ¯েøাভাকিয়া এবং অস্ট্রিয়াসহ বেশ কয়েকটি ইইউ সদস্য রাশিয়া থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গ্যাস আমদানি অব্যাহত রেখেছে।
অস্ট্রিয়ার জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলেছে, কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়া সরবরাহ বন্ধ করে দেয়াতে সংকট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। ইউক্রেনের সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে ¯েøাভাকিয়ার সঙ্গে প্রচন্ড উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।
শুক্রবার, ¯েøাভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার জন্য মস্কোতে হঠাৎ সফর করে ইউক্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য,ইউরোপে রাশিয়ার প্রাচীনতম গ্যাস রপ্তানির রুট ছিল ইউক্রেন। সোভিয়েত আমলে নির্মিত একটি পাইপলাইন দিয়ে এই গ্যাস সরবরাহ করা হতো। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে পাঁচ বছরের ট্রানজিট চুক্তির মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা। ইউক্রেনের গ্যাস ট্রানজিট অপারেটর মঙ্গলবার যে তথ্য সরবরাহ করেছে,তাতে দেখা গেছে, রাশিয়া পহেলা জানুয়ারি থেকে কোনো গ্যাস পাঠানোর অনুরোধ জানায়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ২০২২ সালের ফেব্রæয়ারিতে ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বিকল্প গ্যাসের উৎস খোঁজার মাধ্যমে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরতা ব্যাপকভাবে হ্রাস করে। রাশিয়ার গ্যাসের অবশিষ্ট ক্রেতা, যেমন-¯েøাভাকিয়া ও অস্ট্রিয়া বিকল্প সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :