ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি একসময় ছিলেন কৌতুক অভিনেতা। তিনি রাজনৈতিক ব্যঙ্গাত্মক শো করতেন। কিন্তু ২০১৯ সালে তিনি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। বিপুল জনসমর্থন নিয়ে তিনি মূলপ্রতিদ্বন্দ্বি পেট্রো পোরোশেঙ্কোকে ধরাশায়ী করেন। তিনি শান্তির প্রতিশ্রæতি দিয়ে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেও ২০২২ সালে রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার হামলার পর তার ভূমিকা বদলে যায়।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি শুরুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় আগ্রহ দেখান। কিন্তু মস্কোর অনিচ্ছা এবং ভয়াবহ অভিযানের মুখে তিনি দৃঢ় অবস্থান নেন। ২০২১ সালে তিনি পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন, যা ক্রেমলিনকে আরও ক্ষুব্ধ করে।
যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে জেলেনস্কি দেশ ছেড়ে যাওয়ার পরিবর্তে রাজধানী কিয়েভে অবস্থান করেই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তিনি ইউক্রেনকে প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। তার নেতৃত্বে ইউক্রেন আন্তর্জাতিক সহায়তা পেয়েছে, তবে তার শাসনামলে দুর্নীতি ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণের অভিযোগও উঠেছে।
সম্প্রতি, তিনি নিরাপত্তা গ্যারান্টি ও পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের বিনিময়ে পদত্যাগের প্রস্তাব দিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। এর মধ্যে তার ভাবমূর্তি বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে কেউ তাকে মুক্তিযোদ্ধা চার্চিলের সঙ্গে তুলনা করছেন, আবার কেউ তাকে একনায়ক বলেও সমালোচনা করছেন।
চার্চিলের সঙ্গে জেলেনস্কিকে তুলনা করার মূল কারণ তাদের নেতৃত্বের ধরন এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কিছু মিল। বিশেষ করে যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের ভূমিকা,ভাষণশৈলী, এবং জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতার জন্য এমন তুলনা করা হচ্ছে।
যুদ্ধকালীন নেতৃত্ব: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উইনস্টন চার্চিল ব্রিটিশ জনগণের মনোবল দৃঢ় রাখার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তিনি সাহসিকতা ও দৃঢ় সংকল্প দেখিয়েছেন।একইভাবে, রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জেলেনস্কি তার জনগণকে প্রতিরোধে উৎসাহিত করেছেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেছেন।
প্রেরণাদায়ক ভাষণ: চার্চিল তার বিখ্যাত বক্তৃতাগুলোর মাধ্যমে ব্রিটিশদের মনোবল চাঙা রেখেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তার “উই শেল ফাইট অন দ্য বিচেস` বক্তৃতা ব্রিটিশ জনগণকে দমে না যাওয়ার প্রেরণা দিয়েছিল। জেলেনস্কিও প্রায় একই কৌশল অনুসরণ করেছেন। তিনি ইউক্রেনের জনগণ ও আন্তর্জাতিক মিত্রদের সামনে সাহসী ভাষণ দিয়েছেন, যেমন `আমি কোথাও পালাচ্ছি না, আমি কিয়েভেই আছি`,যা ইউক্রেনীয়দের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়: চার্চিল যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সহায়তা চেয়ে সফল হয়েছিলেন, বিশেষ করে লেন্ড-লিজ অ্যাক্ট এর মাধ্যমে। জেলেনস্কিও পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন পাওয়ার জন্য কূটনৈতিকভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো দেশগুলোর কাছে অস্ত্র ও আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন এবং অনেকটাই সফল হয়েছেন।
নিজ দেশে অবস্থান ও প্রতিরোধের প্রতীক হওয়া: চার্চিল কখনো ব্রিটেন ছেড়ে যাননি এবং লন্ডন বোমার আঘাতে কাঁপলেও তিনি শহর ছেড়ে পালাননি। বরং তিনি ব্রিটিশ জনগণের পাশে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।
জেলেনস্কিও রাশিয়ার আক্রমণের সময় ইউক্রেন ত্যাগ না করে কিয়েভেই থেকে গেছেন, যা ইউক্রেনীয়দের জন্য প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রচার ও জনমত নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা: চার্চিল ছিলেন একজন দক্ষ লেখক ও কূটনীতিক, যিনি নিজের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।জেলেনস্কি একসময় অভিনেতা ছিলেন এবং মিডিয়া কৌশল ভালো বোঝেন। তিনি সামাজিক মাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিজের বার্তা ছড়িয়ে দিয়ে জনমত তার পক্ষে রাখার চেষ্টা করছেন। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় সম্পূর্ণ নিবন্ধটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
আপনার মতামত লিখুন :