ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যরা ২৮ এপ্রিল কাশ্মীরের শ্রীনগরের একটি বাজার এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন। ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে সাম্প্রতিক প্রাণঘাতী হামলাকে ঘিরে পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপকে কেন্দ্র করে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সংকট নিরসনে দুই পক্ষকে আহ্বান জানালেও নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছে। নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে রবিবার এই তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশ্বের এক ডজনের বেশি নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। পাশাপাশি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লিতে শতাধিক কূটনৈতিক মিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালাচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেওয়া ব্রিফিংয়ের সঙ্গে জড়িত চার কূটনীতিকের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২২ এপ্রিলের পর থেকে এক ডজনেরও বেশি বিশ্বনেতার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তবে এসব প্রচেষ্টা মূলত শান্তিআনার জন্য নয়, বরং সামরিক প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুুতের অংশ।
গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এক ভাষণে মোদি ‘সন্ত্রাসের আস্তানা ধ্বংসের’ হুমকি দেন, যদিও তিনি সরাসরি পাকিস্তানের নাম নেননি।নিউইয়র্ক টাইমস আরো জানায়, পরিস্থিতি অত্যন্ত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরে তল্লাশি অভিযান জোরদার করেছে এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের খুঁজতে শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা পাকিস্তানের অতীতের সন্ত্রাসবাদে সহায়তার ইতিহাস তুলে ধরেছেন।তারা জানান,সর্বশেষ এই হামলার ঘটনায় তদন্ত চলছে এবং হামলাকারীদের পাকিস্তানের সঙ্গে সংযোগ থাকার কিছু প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বিশ্লেষক ও কূটনীতিকদের মতে, এখন পর্যন্ত শক্ত প্রমাণের অভাব দুটি সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়, হয় ভারত আরো তথ্য সংগ্রহের জন্য সময় নিচ্ছে, নয়তো বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে তারা মনে করছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিস্তারিত ব্যাখ্যা না দিয়েই পদক্ষেপ নেওয়া যাবে।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ভারত ও পাকিস্তান—উভয়ই পরমাণু শক্তিধর দেশ হওয়ায় সামরিক সংঘাত দ্রæত বড় ধরনের বিপর্যয়ে রূপ নিতে পারে। তবে বর্তমানে ভারতের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্তর্জাতিক চাপের ‘তোয়াক্কা অনেক কম’।ভারতের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন বলেন, কাশ্মীরে এবারের হামলার পর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
কারণ ২০১৬ ও ২০১৯ সালে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ভারত। ভারতীয় সরকার এখন আরো চাপের মধ্যে রয়েছে। কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কাশ্মীরকে আরো নিরাপদ ও পর্যটনকে উৎসাহিত করে প্রচারণা চালিয়েছে।তবে মেনন এ-ও বলেন,‘আমি খুব চিন্তিত নই যে উভয় পক্ষই সংঘাতে একটি নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় থাকবে।’ ছবি : এএফপি
আপনার মতামত লিখুন :