গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার তার বিরোধীদের ওপর নির্যাতনে সন্ত্রাসবাদ এবং জঙ্গিবাদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল।গত ১৫ বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এসব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিভিন্ন ঘটনা মঞ্চস্থ করত বলে মার্কিন এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
২০২৩ সালের মার্কিন সন্ত্রাসবাদ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে এসব তথ্য বেরিয়ে আসে। এতে বলা হয়েছে,‘বাংলাদেশে ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সহিংসতার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদিও ওই সময় সরকার প্রায়ই রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে চিত্রিত করেছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।’
সম্প্রতি আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের এই প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সন্ত্রাসবাদের নামে আটক করা হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের। প্রতিবেদনটিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনেরও অভিযোগ এসেছে।
সর্বশেষ ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলকেও সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তকমা দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
তবে ২০২৩ সালের গত সরকারের আমলে বেশ কিছু সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনের বিষয়ও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,‘বিশেষ করে আল-কায়েদা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (আনসার আল-ইসলাম নামেও পরিচিত) ও আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট নিউ-জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ (নব্য-জেএমবি) সদস্যদের আটক করা হয়েছে। মার্কিন সরকারের কাছে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশ ইউনিট একাধিক সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মে মাসে জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলা চট্টগ্রামে দুই সেনা নিহত হয়। মার্চে একই ধরনের হামলায় আরেক সেনা নিহত হন।
এছাড়া কেএনএফের বিরুদ্ধে নতুন আল-কায়েদা থেকে অনুপ্রাণিত গ্রæপ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়াকে (জেএএইচএস) প্রশিক্ষণ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই সময় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে তারা এই সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনে। সংগঠনটির কথিত আমিরকে জুলাই মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। এতে সংগঠনটির কার্যক্রম অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।
এছাড়া প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়েছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামকরণ করা হয়েছে। অনলাইনে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে এ আইন সংশোধন করা হলেও এর দ্বারা মূলত নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রেপ্তারের অনুমতি দেয়। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসেবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত ছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিচারকদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা উন্নয়নেও সহায়তা দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
আপনার মতামত লিখুন :