গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক কে, প্রশ্নে যা বললেন ড. কামাল
প্রকাশিত: ০৬:১০ এএম, মার্চ ৭, ২০২১
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামে গৃহদাহ চলছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগমুহূর্ত থেকেই দলটিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দাল চাঙ্গা হয়। সেটি পূর্ণ বহিঃপ্রকাশ ঘটে নির্বাচনের পর গণফোরামের কাউন্সিলে। কাউন্সিলে দলটির দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দায়িত্ব দেওয়া হয় একাদশ নির্বাচনের আগে দলে যোগ দেওয়া তরুণ রেজা কিবরিয়াকে।
এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি গণফোরামের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশ। এসবের পরিপ্রেক্ষিতে কদিন আগে ড. রেজা কিবরিয়া গণফোরাম ছেড়ে বেরিয়ে যান। এ সিদ্ধান্তে মনে করা হচ্ছিল দুই অংশের মধ্যে এক ধরনের সমঝোত হবে। সেটি আর হয়ে ওঠেনি।
সপ্তাহখানেক আগে জাতীয় প্রেসক্লাবে ড. কামাল হোসেনকে ছাড়াই বর্ধিতসভা করেন মোস্তফা মহসিন মন্টু, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও সুব্রত চৌধুরীরা। সেই সভায় ড. কামালকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার কৌশলী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যদিও বর্ধিতসভার আয়োজকরা বলছেন, ড. কামাল শীর্ষ নেতৃত্বে থাকবেন কিনা সেটি কাউন্সিলররা নির্ধারণ করবেন। ওই সভায় দলের কাউন্সিলের সময়ও নির্ধারণ করা হয়। গঠন করা হয় স্টিয়ারিংসহ একাধিক কমিটি।
এর পর থেকে দুপক্ষের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে। শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করেন দলটির দুপক্ষের নেতারা।
জানা গেছে, গণফোরামে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়েই। রেজা কিবরিয়া পদত্যাগ করায় এই পদটি শূন্য থাকার কথা। গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া পদত্যাগের পর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে কে জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, এখন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আ ও ম শফিকউল্লাহ। উনি খুব পরিচিত লোক।
প্রায় এক বছর পর শনিবার প্রকাশ্যে এসে ড. কামাল হোসেন দাবি করেন, রোজার আগেই দলীয় কার্যক্রম জোরদার করা হবে। ড. কামাল হোসেন জানান, জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করবে তার দল।
ড. কামাল হোসেনের সংবাদ সম্মেলন যখন চলছিল, ঠিক তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনেই গণফোরামের আরেক অংশের কর্মসূচি চলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল থেকে বের হয়ে হয়তো আরেকপক্ষ আরেক বক্তব্য রাখতে পারে। আমার দল—আমি মনে করি সঠিকভাবে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে, কাজ করে যাবে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৬ এপ্রিল কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর থেকেই গণফোরামের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুকে বাদ দিয়ে ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক পদে বসানোর মধ্য দিয়েই গণফোরাম দুই অংশে বিভক্ত হয়। একটি অংশ ড. কামাল হোসেনকে কেন্দ্র করে এবং অন্য অংশটি মন্টু-সুব্রত ও আবু সাইয়িদের নেতৃত্বে পরিচালিত হতে থাকে। এর পর দলের মধ্যে বহিষ্কার, পাল্টা বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে।
সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর বেইলি রোডের নিজ বাড়িতে এক সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল হোসেন বলেন, দলের গত কয়েক মাসে ঘটে যাওয়া সব বহিষ্কার-পাল্টা বহিষ্কার অকার্যকর করা হচ্ছে। দলে কোনো সমস্যা নেই, যা বিরোধ ছিল তা কেটে গেছে। এরই মধ্যে গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন ড. রেজা কিবরিয়া। এর পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ড. কামাল হোসেনকে বাদ দিয়ে গণফোরামের বিদ্রোহী অংশটি কমিটি গঠন করে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে গণফোরামের বিদ্রোহী অংশের কমিটির সদস্য সচিব মোস্তফা মহসিন মন্টু শনিবার যুগান্তরকে বলেন, গণতন্ত্রের চর্চা প্রথমে সংগঠন থেকে করতে হবে। কাউন্সিলর, জেলা প্রতিনিধি, মাঠপর্যায়ের কর্মীরা গণফোরামের নেতৃত্বে নির্বাচন করবেন। কোনো ঘরে, চেম্বারে বসে নেতা নির্বাচন হবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলো- ড. কামাল হোসেন কয়েকজন ব্যক্তির কারণে সংগঠনের ভেতরে গণতন্ত্রের চর্চা করেননি। ফলে আজকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
গণফোরামের অপর একটি অংশ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে পৃথক কর্মসূচি করছে, তারা কি গণফোরামের অংশ কিনা জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন বলেন, গণফোরাম থেকে কিছু লোক বেরিয়েছেন, বেরিয়ে গিয়ে বক্তব্য রাখতে পারেন। তারা বেরোতেই পারেন। বাধ্য করে কাউকে তো রাখা যায় না। ওদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন আপনারা কেন বেরিয়ে গেছেন।