দেশে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তীতে রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাত মেরামত করতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতী সরকার। এজন্য প্রথমে গঠন করা হয়েছে ছয়টি সংস্কার কমিশন,পরে আরও পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনব্যবস্থা, সংবিধান ও বিচার বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশন।
আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে সংবিধানের বিষয়টি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) গঠনের আগে ও পরে দলটির নেতারা বিভিন্ন আলোচনায় নতুন সংবিধানের কথা বলে আসছেন। আর দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে, সংশোধন ও সংস্কারের কথা। একই সঙ্গে দ্রæত নির্বাচনের আয়োজন করা দাবি জানায় দলটি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও সংবিধান প্রণয়ন এবং সংস্কারের পক্ষে বিপক্ষে মত দিচ্ছেন। কথা উঠেছে নির্বাচিত সরকার ছাড়া সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব কিনা তা নিয়ে।
রোববার (১১ মে) জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক (এনিসিপি) নাহিদ ইসলাম বলেছেন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে না পারলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রয়োজন নেই। একই অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ৯০ দিনের মধ্যে সংবিধান তৈরি করে ফেলা উচ্চাশা। নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে বহুদিন লাগতে পারে। দুই থেকে তিন বছর লাগতে পারে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে এমনও ধারণা আছে ৮-৯ বছর লেগেছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, বিগত সময়ের সংবিধান মানবাধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন সংবিধানের মাধ্যমে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে আস্থা ও সম্পর্ক স্থাপন করা সম্ভব। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, সংস্কারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হলে নির্বাচন নিয়ে কারও কোনো আপত্তি থাকার কথা নয়। আশা করি, দ্রæত সময়ের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে সামনে এগোতে পারব। সংবিধান ইস্যুতে ড. আসিফ নজরুল বলেন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন হতে অনেক সময় লাগবে। দুই থেকে তিন বছরও লাগতে পারে। এজন্য ৭২ এর সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন এনে কাজ চালিয়ে নেয়া যেতে পারে।
নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স চ্যানেল ২৪ অনলাইনকে বলেন, সংবিধান ও নির্বাচন সংস্কারের বিষয়ে আমাদের মতামত অন্তর্র্বতী সরকারের সংস্কার কমিশনের কাছে তুলে ধরেছি। তবে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, একধরনের শিথিলতা দেখতে পাচ্ছি।
প্রধান উপদেষ্টার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, সংস্কারের যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্য হবে— সেগুলো বাস্তবায়ন করে নির্বাচনের দিকে যাবে সরকার। সংবিধানের যেসব ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকবদ্ধ হয়েছে, সেগুলোর একটি চ্যাটার হতে পারে। সেটি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার বাস্তবায়ন করবে। এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, একটি মহল মনে করে তারাই সরকারের নিয়ন্ত্রক। তারা একের পর এক অবাস্তব ও জনসম্পৃক্তহীন বক্তব্য দিয়ে আসছে। দেশে নির্বাচন বানচাল করতে অপচেষ্টা করছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে এগুলো বন্ধ করা উচিৎ। দ্রæত সময়ের মধ্যে গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা জরুরি। যাতে জনগণ তাদের পছন্দের সরকার গঠন করতে পারে। সে সরকারই সিদ্ধান্ত গুলো নেবে।
তিনি বলেন, নয় মাস অতিক্রম হলেও সংস্কার এবং নির্বাচনের জন্য কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আলোচনা করে শুধু সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। দ্রæত সিদ্ধান্ত নিয়ে সংস্কার কাজ এগিয়ে নেয়া উচিৎ ছিলো। নতুন সংবিধান লিখন,গণপরিষদ নির্বাচন,নতুন করে দ্বিতীয় প্রোক্লেমেশন— এগুলো অবাস্তব। নির্বাচনকে অনিশ্চত করতে এসব বলা হচ্ছে। সংবিধান এর আগেও আমরা বহুবার সংশোধন করেছি। এবারও সংশোধন করে গণমুখী করতে পারি।
এ মুহূর্তে সংবিধান প্রণয়ন নাকি সংস্কার করলে চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন,বর্তমান সরকার একটি বিপ্লবোত্তর সরকার। অনেকেই সমালোচনা করে বলেন যে, এ সরকারের ম্যান্ডেট আছে কিনা? মূলত এই জায়গা থেকেই প্রশ্নটি উত্থাপিত হয় যে এ সরকার সংবিধান প্রণয়ন করতে পারে কিনা। কথা হচ্ছে এ সরকারের ম্যান্ডেট হচ্ছে জুলাই বিপ্লব। এ সরকারের ম্যান্ডেট নেই এমন কথা বলা একটি বড় বিভ্রান্তি। একইসঙ্গে এটি জুলাই বিপ্লবের গৌরবগাঁথাকে অস্বীকার করাও বোঝায়।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হলে কী পদ্ধতিতে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব সেটি নির্ধারণ করা কোনো বড় সমস্যা নয়। আগে রাজনৈতিক ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। আমরা নতুন সংবিধান চাই, নাকি ৭২ এর সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে সংশোধন চাই এ বিষয়ে রাজনৈতিক ঐক্যমত জরুরি। এই জায়গায় আগে সিদ্ধান্তে আসতে হবে। ঐক্যমত হলে নতুন সংবিধান প্রণয়নের পদ্ধতি এবং তা প্রণয়নের সময় নিয়ে কোন কিছুই আটকাবে না।মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, সংবিধানের বিষয়টি জাতীয় স্বার্থের ব্যাপার। সে জাতীয় স্বার্থই আমরা এখনো আইডেন্টিফাই এবং প্রায়োরিটাইস করতে পারছি না, এটি দুঃখজনক। আর আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ৭২ এর সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা ও ফ্যাসিবাদের অনেক ইলিমেন্ট ও অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিস রয়েছে। তাই জুলাই বিপ্লবোত্তর পরিস্থিতিতে নতুন প্রজন্মের চাওয়া তথা জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে বিবেচনায় নিলে নতুন সংবিধান প্রণয়নই অধিক যুক্তিযুক্ত।তবে সবার একই অনরুভুতি দেশ ভালো চলুক।সুত্র-২৪
আপনার মতামত লিখুন :